ত্রিপুরায় হিংসা বলে ছড়াল পুলিশের 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনির পুরনো ভিডিও
বুম দেখে ভিডিওটি ২০১৮ সাল থেকে অনলাইনে রয়েছে। ত্রিপুরার সাম্প্রতিক ঘটনার সঙ্গে এটির কোনও সম্পর্ক নেই।
এক পদযাত্রায় (Rally) একজন পুলিশ কর্মীর হিন্দুত্ববাদী (Pro-Hindu) স্লোগান দেওয়ার পুরনো ভিডিও এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, ত্রিপুরার পুলিশ (Tripura Police) দাঙ্গাকারীদের উৎসাহ দিচ্ছে ও হিংসায় ইন্ধন জোগাচ্ছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে এক পুলিশ কর্মী "জয় শ্রীরাম" স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে চলেছেন, আর সেই সঙ্গে অন্যদের সুর মেলাতে শোনা যাচ্ছে। জনসভায় গেরুয়া পতাকা উড়তে ও অন্য এক পুলিশকে ভিড় সামলাতে দেখা যাচ্ছে।
ত্রিপুরায় মসজিদ ও মুসলমানদের সম্পত্তির ওপর আক্রমণের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণে সাত জন মারা যান। ওই ঘটনার বিরুদ্ধে ত্রিপুরায় প্রতিবাদ শুরু হলে, হিংসার সূত্রপাত ঘটে। তার ফলে, উত্তর ত্রিপুরায়, অন্তত ১০ টি হিংসাত্মক ঘটনার খবর পাওয়া যায়। ভিডিওটি যে ক্যাপশন সহ শেয়ার করা হচ্ছে, সেটিতে লেখা: "এই হল ত্রিপুরার পুলিশ। মুসলমানদের বাড়ি, মসজিদ, দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য তারা স্লোগান দিতে দিতে দাঙ্গাকারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছে।"
টুইটগুলির আর্কাইভ দেখতে এখানে ও এখানে ক্লিক করুন।
একই ক্যাপশন সহ ভিডিওটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে।
পোস্টগুলি দেখতে এখানে ও এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: শাহরুখ খানের বাবা মীর তাজ মহাম্মদ খান সম্পর্কে ভুয়ো খবর ভাইরাল
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির প্রধান ফ্রেমগুলি দিয়ে বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। দেখা যায়, ২০১৮ সালে সেটি ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা হয়। এসকে হুসেন নাসের একটি ইউটিউব চ্যানেল ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল ভিডিওটি পোস্ট করে।
সেটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়, "এই পুলিশটি হিংসা সৃষ্টিকারী দলকে মদত দিচ্ছে। তাহলে আমরা পুলিশের ওপর কী করে আস্থা রাখব?" ভিডিওটি ইউটিউবে পোস্ট করার তারিখ নীচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে।
এপিসিআর দিল্লি চ্যাপ্টার নামের এক ইউটিউব চ্যানেলেও ভিডিওটি ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল আপলোড করে। সেই চ্যানেলে দাবি করা হয়, ভিডিওটি অযোধ্যায় তোলা। ওই র্যালিতে যাঁরা হাঁটছেন তাঁদের দক্ষিণপন্থী স্লোগান দিতে শোনা যাচ্ছে। হয়। সেটির ক্যাপশনে বলা হয়, "এএসআই জয় শ্রীরাম স্লোগান দিচ্ছেন"। ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর নীলেশ শর্মা বস্তি নামের আর এক ইউটিউব চ্যানেল ওই ভিডিওটির একটি বড় সংস্করণ আপলোড করে। সেই চ্যানেলে দাবি করা হয়, ভিডিওটি অযোধ্যায় তোলা। ওই র্যালিতে যাঁরা হাঁটছেন তাঁদের দক্ষিণপন্থী স্লোগান দিতে শোনা যাচ্ছে।
ভিডিওটির হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনে বলা হয়, "অযোধ্যায় পুলিশও জয় শ্রীরাম জয় শ্রীরাম বলেন"।
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: अयोध्या में पुलिस ने भी कहा जय श्री राम - जय श्री राम)
এছাড়া, ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ করা একটি পুরনো ফেসবুক পোস্টও আমরা দেখতে পাই। সেটির ক্যাপশনে বলা হয়, "বিহার পুলিশের কর্মীরাও দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে জয় শ্রীরাম স্লোগান দিচ্ছেন। এঁরা ওই পবিত্র স্লোগানটির অবমাননা করছেন।"
দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
২০১৮ সালের ৩০ মার্চ স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম পাটনা লাইভ তাদের রিপোর্টে ওই ভিডিওটি ব্যবহার করে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ বিহারের সমস্তিপুর জেলার রোসদা বাজারে, চৈত্র দুর্গাপুজোর সময়, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বচসা বাঁধলে, পাথর ছোঁড়া শুরু হয়ে যায়। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ওই ঘটনার পর বিহারের এক পুলিশ কর্মীর জয় শ্রীরাম স্লোগান দেওয়ার ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
আরও পড়ুন: কারারুদ্ধ আফিয়া সিদ্দিকি প্রয়াত ভুয়ো দাবিতে ভাইরাল মিশরের মহিলার ছবি