শাহরুখ খানের বাবা মীর তাজ মহাম্মদ খান সম্পর্কে ভুয়ো খবর ভাইরাল
বুম দিল্লিতে শাহরুখ খানের বাবা মীর মহম্মদ খানের সমাধিফলক যাচাই করে দেখে যে ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টের দাবি ভুয়ো।
একটি সংবাদপত্র ক্লিপিংয়ে (newspaper clipping) দাবি করা হয়েছে যে, অভিনেতা শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) বাবা (Father) মীর তাজ মহম্মদ খান (Meer Taj Mohammed Khan) ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে Quit India Movement) অংশগ্রহণকারী সর্বকনিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে এক জন ছিলেন। বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী ফেসবুক পেজ থেকে এই খবরটির বিরোধিতা করা হয়েছে। বুম যাচাই করে দেখে ফেসবুক পোস্টের দাবি আসলে ভুয়ো।
ফেসবুকে বহু দক্ষিণপন্থী ব্যক্তিই হিন্দিতে লেখা 'শাহরুখ খানের বাবা মীর তাজ মহম্মদ খান ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সর্বকনিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন' শিরোনামের প্রতিবেদনটি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর আফান নোমামির লেখা এই প্রতিবেদনটি হিন্দি নিউজ নামে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।
(হিন্দিতে মূল শিরোনাম- भारत छोडो आंदोलन में सबसे युवा स्वतंत्रता सेनानी में से एक थे शाहरुख़ खान के पिता मीर ताज मोहम्मद खान)
বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে এই প্রতিবেদনটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া পোস্টটি দেখুন এখানে।
হিন্দিতে লেখা ফেসবুক পোস্টের অনুবাদ, " শাহরুখের জন্ম হয় ১৯৬৫ সালে... ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হয় ১৯৪২ সালে ...এই প্রতিবেদনের বক্তব্য অনুসারে শাহরুখের বাবার যখন ৩০ বছর বয়স তখন শাহরুখের জন্ম হয়। তার মানে ১৯৪২ সালে ওরঁ বয়স ছিল ৬ বছর। এখন ভাবুন ৬ বছর বয়সে শাহরুখ খানের বাবা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কী করছিলেন? লেখকের নামটিও খেয়াল করবেন। আমার মতো লোকেরা এদের মিথ্যে সব সময় ফাঁস করতে থাকবে।"
একই সংবাদপত্রের ক্লিপিং বিভিন্ন টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একই দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম আফান নোমানির শেয়ার করা আসল পোস্ট এবং ২০২১ সালে ৬ অক্টোবর হিন্দ নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ক্লিপিং মিলিয়ে দেখে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই যে শাহরুখ খানের জন্মের সময় তাঁর বাবার বয়স ছিল ৩০ বছর
আমরা খুব মনোযোগ দিয়ে প্রতিবেদনটি পড়ি এবং দেখতে পাই যে, প্রতিবেদনে কোথাও এ কথা উল্লেখ করা হয়নি যে, শাহরুখ খানের জন্মের সময় তাঁর বাবার বয়স ছিল ৩০ বছর। প্রতিবেদনে শুধু উল্লেখ করা হয়েছে যে, অভিনেতার ১৫ বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান।
আমরা আফান নোমানির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে, শাহরুখ খানের বাবা সম্পর্কে লেখা প্রতিবেদনটি সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তিনি তাঁর লেখার একটি পরিষ্কার স্ক্রিনশট আমাদের পাঠান। ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে যে, মীর তাজ মহম্মদ খান ১৬ বছর বয়সে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য পেশোয়ার থেকে ভারতে আসেন।
চলচ্চিত্র সমালোচক এবং সাংবাদিক অনুপমা চোপড়ার লেখা শাহরুখ খানের জীবনী কিং অব বলিউড বুম খুব খুঁটিয়ে পড়ে।
ওই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মীর তাজ মহম্মদ খান ১৯২৮ সালের পেশোয়ারের মহল্লা শাহওয়ালি কতল অঞ্চলে (এখন পাকিস্তানে) জন্মগ্রহণ করেন।
ওই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে মীর তাজ মহম্মদ খান ১৯৮০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ৫২ বছর বয়সে মারা যান।
শাহরুখ খানের জন্ম হয় ১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর। অর্থাৎ তাঁর জন্মের সময় তাঁর বাবার বয়স ছিল ৩৭ বছর। আর ১৯৪২ সালে মহত্মা গাঁধীর সূচনা করা ভারত ছাড়ো আন্দলনের সময় মীর তাজ মহম্মদ খানের বয়স ছিল ১৪ থেকে ১৫ বছর।
সমাধি ফলকে জন্ম সাল উল্লেখ করা হয়েছে ১৯২৭
বুম দিল্লির দিল্লি গেট কবরস্থানে মীর তাজ মহম্মদের সমাধিতেও যায়। সমাধি ফলক বা এপিটাফে জন্মের তারিখ দেওয়া হয়েছে ১৯২৭ সালের ২৭ অক্টোবর। তার মানে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৫ বছর।
অনুপমা চোপড়ার বইতে ভুল ভাবে তাঁর জন্মসাল ১৯২৭ সালের বদলে ১৯২৮ সাল লেখা হয়েছে।
২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর শাহরুখ খান একটি টুইটে জানান যে, তাঁর বাবা যদি জীবিত থাকতেন, তাহলে তাঁর বয়স হত ৮৭ বছর।
এ থেকে নিশ্চিত ভাবে বোঝা যায় যে, মীর তাজ মহম্মদ খান ১৯২৭ সালে জন্মেছিলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামে মীর তাজ মহম্মদ খানের অংশগ্রহণ
মীর তাজ মহম্মদ খান ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন কি না, বুম তা আলাদা ভাবে যাচাই করতে পারেনি।
তবে, অনুপমা চোপড়ার বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শাহরুখ খানের বাবা ১৯৪২ সালে শুরু হওয়া ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
অনুপমা চোপড়া তাঁর বই "কিং অব বলিউড" বইতে লিখেছেন, "মীরের দাদা গামাম একজন সম্মাননীয় রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। ব্রিটিশ-বিরোধী সভা এবং মিছিলের আয়োজন করাতে তাঁর কোনও ক্লান্তি ছিল না। বক্তা হিসাবে মীরেরও খুব জনপ্রিয়তা ছিল— উর্দুতে তাঁর আগুন ঝরানো বক্তৃতা ও চলচ্চিত্র অভিনেতাদের মতো রূপ বহু মানুষকে আকৃষ্ট করত। ১৯৪২ সালের অগস্ট মাসে কংগ্রেস ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সূচনা করে। দাবি ছিল, ভারতে অবিলম্বে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। পার্টি অহিংস আন্দোলনের ডাক দেয়। কিন্তু যখন সরকার গাঁধী ও নেহরু সমেত বেশিরভাগ নেতাকে গ্রেফতার করে, তখন বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। বোমা ফাটানো হয়, সরকারি বাড়িগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বহু মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। প্রায় ১,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়, এবং ৬০,০০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের মধ্যে মীর ও গামাও ছিলেন। কিং এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র মীর পরবর্তী দু'বছর কখনও জেলের ভিতরে ছিলেন, কখনও বাইরে। অন্য ভাইবোনেরা যদিও স্কুলের গণ্ডি পেরোননি, কিন্তু তাঁরা মীরকে পড়াশোনার ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। রাজনৈতিক এবং সামাজিক অস্থিরতা মীরের পড়াশোনার উপর প্রভাব ফেলতে পারে আঁচ করে মীরের ভাইরা তাঁকে দিল্লী পাঠিয়ে দেন। ১৯৪৬ সালে মীর আইনের ছাত্র হিসাবে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।"
২০২১ সালের ৩ অক্টোবর এক মাদক সংক্রান্ত মামলায় শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খান (Aryan Khan) গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে শাহরুখ খান সম্পর্কে ভুয়ো তথ্যে ইন্টারনেট ভরে গেছে। ২৮ অক্টোবর আদালত আরিয়ান খানকে জামিন দেয়।
আরও পড়ুন: ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবি সহ ছড়াল মুসলিম বাবা ও মেয়ের ছবি