ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবি সহ ছড়াল মুসলিম বাবা ও মেয়ের ছবি
বুম দেখে ২০১৬ সাল থেকে বাবা ও মেয়ের এই ছবিটি ইন্টারনেটে রয়েছে। মেয়েটি হাফিজ হওয়ার পর ছবিটি তোলা হয়।
কোরান মুখস্থ ও আবৃত্তি সম্পূর্ণ করার পর ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বাবা-মায়ের দুটি ছবি জুড়ে একটা ভুয়ো সাম্প্রদায়িক ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে যে, বাবা-মায়েরা নাকি তাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক (minor) ছেলে-মেয়েদের (married) বিয়ে করছেন।
এর মধ্যে একটি ছবি ইতিপূর্বেই ভুয়ো বলে প্রতিপন্ন হয়েছে, যাতে এক মহিলার সঙ্গে তার নাবালক ছেলের ছবি দেওয়া হয়েছে। ছবিটি তোলা হয়েছিল খতম-আল-কোরান অর্থাৎ কোরানের শুরু থেকে শেষ অবধি সমগ্রটা অধ্যয়ন ও আবৃত্তি সম্পন্ন করা উপলক্ষ্যে। বুম-এর তথ্য-যাচাই পড়ুন এখানে। সেই পুরনো ছবিটাই একই ক্যাপশন দিয়ে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে।
কোলাজের দ্বিতীয় ছবিটা মেয়ের সঙ্গে তাঁর বাবার, যেটি ২০১৬ সালের পুরনো ছবি। এই ছবিটা দেখিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে যে, মুসলিম সম্প্রদায়ের এই ব্যক্তি তাঁর নিজের কন্যাকেই বিবাহ করছে।
ফেসবুকে দুটি ছবির এই কোলাজ ঘুরছে যে-হিন্দি ক্যাপশন সহ, তার অনুবাদ হলো, "বাবা তাঁর নিজের মেয়েকে বিয়ে করে ফেলার পর মা-ও রেগে গিয়ে তার নিজের নাবালক পুত্রকে বিয়ে করে ফেললো...এমনই পবিত্র ধর্ম ইসলাম।"
এই মর্মে পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
একই ছবি ফেসবুকে বাংলা ক্যাপশন সহ লেখা হয়েছে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে বাবা তাঁর মেয়েকে বিবাহ করার ঘটনাটি ঘটেছে।
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
বাবার সঙ্গে মেয়ের ছবিটা আলাদা ভাবেও ভাইরাল করে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "যারা ৯ বছরের নিজের কন্যাকে বউ বানাতে পারে আর যারা ৯ বছরের মেয়েকে দেবী বানাতে পারে...তাদের পরস্পরের মধ্যে ভাই-ভাই সম্পর্ক কেমন করবে হবে ? নদী আর নালার মধ্যে তফাত থাকবে না ? জয় মা ভবানী!"
এই পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
রাকেশ নামে এক টুইটার ব্যবহারকারীর যাচাই-করা টুইট অ্যাকাউন্ট থেকেও এই পোস্টটি শেয়ার হয়েছে, যে আবার নিজেকে এক 'জাতীয়তাবাদী বার্তা-সম্পাদক' বলে দাবি করে। তার টুইটটি অবশ্য পরে মুছে দেওয়া হয়।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: কারারুদ্ধ আফিয়া সিদ্দিকি প্রয়াত ভুয়ো দাবিতে ভাইরাল মিশরের মহিলার ছবি
তথ্য যাচাই
প্রথম ছবি
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ছবিটি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের নয়। ছবিটি ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফেসবুকে উর্দু ক্যাপশন সহ শেয়ার হয়েছিল, যার অনুবাদ হল, "অভিনন্দন! পিতা-কন্যা একই সঙ্গে একই শ্রেণি থেকে কোরান আয়ত্ত্ব ও হাফিজ হওয়ার সাফল্য অর্জন করেছে...ঈশ্বর ওদের মঙ্গল করুন!"
অন্য একটি ফেসবুক পোস্টে ছবিটা শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়, "হাফিজ-আল-কোরান শ্রেণির পাঠ একসঙ্গে সমাপ্ত করার জন্য পিতা-কন্যাকে অভিবাদন!"
(মূল উর্দুতে লেখা : مبارک ... ماشاءاللہ باپ اور بیٹی ایک ھی کلاس سے فارغ (حافظ القران بن گیا) ..کمینٹ ضرور کرووو . مآشاءاللہ لکھوں)
আমরা ভাইরাল হওয়া ছবিটা পরীক্ষা করে দেখেছি, ইসলামি পর্ষতের ওয়েবসাইটেও ছবিটি একই দিনে প্রকাশিত হয়েছিল।
দ্বিতীয় ছবি
সার্চ ইঞ্জিন ইয়ান্ডেক্স ব্যবহার করে আমরা ফেসবুকে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারির একটি পোস্ট খুঁজে পাই, যাতে ইংরাজিতে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "আজ আমার ছেলে খতম-আল-কুরান হয়েছে...আপনারা ওকে অভিনন্দিত করুন!" ভাইরাল হওয়া এই দ্বিতীয় ছবিটা কোথায় তোলা হয়েছে, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। কিন্তু এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি যে, ছেলের সমগ্র কোরান মুখস্থ ও আবৃত্তি করার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মা তার সঙ্গে এই ছবিটা তুলেছেন। অল্ট নিউজ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবেইর প্রথম এই ছবিটার ভুয়ো বিবরণীর পর্দাফাঁস করেন।
আরও পড়ুন: কয়লা ঘাটতি মেটাতে সরকার তৎপর দাবিতে পুরনো ভিডিও টুইট প্রকাশ জাভড়েকরের