উত্তরপ্রদেশে নামাজের সময় হামলা মিথ্যে দাবিতে ছড়াল মধ্যপ্রদেশের ভিডিও
বুম জব্বলপুরের এসপি সিদ্ধার্থ বহুগুণার সঙ্গে কথা বলে তিনি জানান ঘটনাটি ওই শহরের ইদের শোভাযাত্রার।
পুলিশ এক দল যুবককে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি-চার্জ করছে, এমন একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় এই ভুয়ো দাবি সহ ভাইরাল হয়েছে যে, এটি উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) রাস্তায় নামাজ পড়ার সময় মুসলিমদের (Muslims) উপর হামলার ঘটনা।
বুম দেখে, ভিডিওর দৃশ্যটি মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের।
একটি বাড়ির ছাদ থেকে তোলা ওই ভিডিওতে পুলিশের যুবকদের ওপর লাঠি-চার্জ করার এবং কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ার অস্বস্তিকর দৃশ্য ধরা পড়েছে।
টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের চমকপ্রদ জয়লাভের ফলে জম্মু-কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে উল্লাস প্রকাশের খবরের প্রেক্ষিতে এই ভিডিওটি ভাইরাল করা হয়েছে।
হিন্দিতে লেখা ভিডিওর ক্যাপশনটি অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, "গতকাল যে সব স্থানে বাজি পোড়ানো হয়, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সেগুলি চিহ্নিত করেছে l এখানে যোগী আদিত্যনাথ রয়েছেন l যারা গতকাল উত্সব করেছে, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না l পাকিস্তানের জয় এবং ভারতের পরাজয়কে উদযাপন করা হয়েছে বাজি পুড়িয়ে এবং খুশির নামাজ পড়ে l তার পরই যোগী আদিত্যনাথের যমদূতেরা সেখানে পৌঁছে যায় l"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
একই দাবি সহ টুইটারেও এই ভিডিওটিই ভাইরাল হয়েছে।
টুইটটির আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বুম এর হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও একই ভিডিও সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রেরিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সংঘর্ষের ভিডিও ছড়াল কলকাতার ঘটনা বলে
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে এবং তার কয়েকটি ফ্রেমে এস. দীন টেলার্স এবং ফ্রেন্ডস শুজ নামের দুটি দোকানের ছবি পেয়েছে। এর পর আমরা গুগল-এ খোঁজ করে দেখি, দুটি দোকানই মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর শহরের গোহালপুর এলাকায় অবস্থিত।
ভিডিও থেকে নেওয়া দুটি স্ক্রিনশট নীচে দেখতে পারেন।
এই সূত্র ধরেই আমরা জব্বলপুরের দীন টেলার্স দোকানের সঙ্গে যোগাযোগ করি বিশদে জানতেl ওই দোকানের কর্মচারী ইরফান জানান, এটি জব্বলপুরেরই ঘটনার ভিডিও, যখন পুলিশ একটি ইদের শোভাযাত্রায় নামাজিদের উপর লাঠি-চার্জ করেছিল।
ইরফান আমাদের ব্যস্ত বাজার এলাকা গোহালপুরের একটি ছবিও পাঠান, যাতে একটি দোকানকে দেখা যাচ্ছে, যেটি ভাইরাল ভিডিওতেও দৃশ্যমাণ।
নীচের দুটি ছবিতে ভাইরাল ভিডিও এবং গোহালপুর থেকে পাঠানো ইরফানের ছবি তুলনা করলেই সেটা স্পষ্ট হবে:
ঘটনাটির কোনও প্রতিবেদন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে কিনা, তা খোঁজ করতে গিয়ে আমরা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে ২০ অক্টোবর ২০২১ একটি রিপোর্ট দেখতে পাইl সেই রিপোর্টে লেখা হয়, "জব্বলপুরে মিলাদ-উন-নবি উপলক্ষে জমায়েত লোকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বাজি-পটকা ও পাথর ছোঁড়ে বলে খবর মিলেছে l"
এমপি তক সংবাদমাধ্যমও ১৯ অক্টোবর জব্বলপুরে ওই সংঘর্ষের খবর প্রকাশ করে এবং ঘটনাস্থল থেকে সংঘর্ষের জীবন্ত ছবিও সম্প্রচার করে:
ঘটনা সম্পর্কে আরও বিশদে জানতে বুম জব্বলপুরের পুলিশ সুপার সিদ্ধার্থ বহুগুণার সঙ্গেও যোগাযোগ করেl তিনি বুম-কে নিশ্চিত করেন যে ভিডিওটি জব্বলপুরের ঘটনারই ছবি এবং ইদের শোভাযাত্রার সঙ্গেই সেটি সম্পর্কিতl তিনি বলেন: "মিছিলকারীরা প্রশাসনের দ্বারা পূর্ব-নির্ধারিত পথ অনুসরণ না করাতেই পুলিশকে লাঠি-চার্জ করতে হয় l বস্তুত, তাদের মধ্যে অনেকেই আবার পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরও ছোঁড়ে l"
পুলিশ সুপার আরও জানান যে ঘটনার তদন্ত চলছে এবং ইতিমধ্যেই গোলমালে জড়িত সন্দেহে ২০ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং সুজিত এ)
আরও পড়ুন: ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবি সহ ছড়াল মুসলিম বাবা ও মেয়ের ছবি