না, কুস্তিগিররা যন্তর-মন্তরে তাঁদের প্রতিবাদ প্রত্যাহার করেননি
বুম যন্তর-মন্তরে প্রতিবাদস্থলে সরেজমিনে গিয়ে দেখেছে কুস্তিগিররা এখনও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, কেউ আন্দোলন প্রত্যাহার করেননি।
যন্তর-মন্তরে (Jantar Mantar) কুস্তিগিরদের (Wrestlers Protest) প্রতিবাদস্থলের ২টি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, তাঁরা প্রতিবাদ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। একটি ছবিতে কুস্তিগির ভিনেশ ফোগত (Vinesh Phogat), সঙ্গীতা ফোগাট (Sangeeta Phogat) এবং বজরং পুনিয়াকে (Bajrang Punia) দেখা যাচ্ছে, অন্য ছবিটিতে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা প্রতিবাদ মঞ্চ।
বুম প্রতিবাদের জায়গা সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখেছে, এই দাবিটা ভুয়ো এবং যন্তর-মন্তরে কুস্তিগিরদের প্রতিবাদ আগের মতোই অব্যাহত।
ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান বিজেপি এমএলএ ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে ভিনেশ ফোগত, সঙ্গীতা ফোগাট, সাক্ষী মালিক এবং বজরং পুনিয়া সহ অন্য কুস্তিগিরদের প্রতিবাদ যন্তর-মন্তরে নতুন করে শুরু হয় এক নাবালিকা সহ ৭ জন মহিলা কুস্তিগিরকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগের প্রতিবিধানের দাবিতে।
এর মধ্যেই কয়েকটি ব্যাগ ও একটি কম্বল নিয়ে কুস্তিগিরদের ছবি প্রকাশ করে বলা হয়, যেন তাঁরা প্রতিবাদ মঞ্চ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। অন্য একটি ছবিতে দূর থেকে দেখানো হয়, প্রতিবাদ-মঞ্চটি যেন কেমন ফাঁকা-ফাঁকা।
ছবিদুটি শেয়ার করে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, “কয়েক ঘন্টাতেই যন্তর-মন্তর অনাথ হয়ে গেল! কী ভাবা হয়েছিল, আর কী ঘটলো!”
(মূল হিন্দিতে ক্যাপশন: "चंद घन्टों में जंतर-मंतर #अनाथ हो गया। क्या सोचा था, यह क्या हो गया?")
এই পোস্টটি দেখতে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
এই ভুয়ো দাবিটা টুইটারেও ঘুরছে।
টুইটটি দেখুন এখানে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, এই দাবিটা সর্বৈব মিথ্যা, কেননা ফেডারেশন প্রধান বিজেপি রাজনীতিকের বিরুদ্ধে কুস্তিগিরদের প্রতিবাদে কোনও ভাঁটা পড়েনি।
গুগল-এ এই ছবিগুলির খোঁজ লাগিয়ে আমরা ২৮ এপ্রিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের দেখা পাই, যাতে ছবির ক্যাপশনে লেখা—‘নতুন দিল্লির যন্তর-মন্তরে চলতে থাকা প্রতিবাদের মধ্যে কুস্তিগির বজরং পুনিয়া ও সঙ্গীতা ফোগাটের রাত্রিবাস।’
কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর দাবি করেন, তিনি পাক্কা ১২ ঘন্টা কুস্তিগিরদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। বজরং পুনিয়া সেই দাবি নস্যাৎ করে দিয়ে বলেন, অনুরাগ মাত্র ২-৪ মিনিট কুস্তিগিরদের সঙ্গে ছিলেন।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
বুমের একজন সংবাদদাতা একটা গোটা সন্ধে যন্তর-মন্তরের প্রতিবাদ-মঞ্চে কাটান। সেখানে তিনি কুস্তিগির সহ অন্যান্য অনেকের সঙ্গেই কথাবার্তা বলেন। সকলেই প্রতিবাদ প্রত্যাহারের গুজব উড়িয়ে দেন।
কুস্তিগির বজরঙ পুনিয়া এবং সঙ্গীতা ফোগাট বলেন—‘এই গুজবটা ভুয়ো এবং এই ছবিটাও ২৮ এপ্রিলের। আমাদের আন্দোলন ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত চলবে’।
ফোগাট আরও বলেন—“মেয়েরা কোথায় জামা-কাপড় ছাড়বে? নিশ্চয়ই খোলা আকাশের নীচে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নয়। তা ছাড়া বাথরুমে জলের সরবরাহ পর্যন্ত নেই।”
সাক্ষী মালিকের স্বামী কুস্তিগির সত্যব্রত কাদিয়ান (যিনি এই প্রতিবাদের সংগঠকও বটেন) প্রতিবাদ থেমে যাওয়ার ভুয়ো গুজব নস্যাৎ করে বলেন—“আমরা প্রতিদিন সকালেই আমাদের কম্বল-বিছানা ভাঁজ করে আমাদের গাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখি—ছবিতে সেটাই দেখিয়েছে। এর সঙ্গে প্রতিবাদ প্রত্যাহারের কোনও সম্পর্ক নেই।” পিছন থেকে তোলা দ্বিতীয় ছবিটার বিষয়ে তাঁর বক্তব্য—‘এই ছবিটাতে আমাদের দল সমাবেশে হাজির লোকেদের সাজাচ্ছে—’
মনদীপ ক্রান্তিকারী নামে জাতীয় স্তরের এক কুস্তিগিরও বুম-কে জানান—প্রথম ছবিটা সাম্প্রতিক নয়, ২৮ এপ্রিলের। “আমাদের দিন শুরু হয় সকাল সাড়ে পাঁচটা-ছটায়। কুস্তিগিররা এই ছবিতে তাদের জিনিসপত্র গোছাচ্ছে।”
“সকাল থেকে কত রকম লোকজন আমাদের এখানে সমর্থন জানাতে আসছে। আমরা তো এখানেই রয়েছি। আমরা তো কোথাও চলে যাইনি।” মনদীপ আরও জানালেন, দ্বিতীয় যে ছবিটা ভাইরাল করা হয়েছে, তাতে তিনিও রয়েছেন বাঁদিকে। “আমরা প্রতিদিন জায়গাটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করি, কম্বল-টম্বল ঝাড়াঝাড়ি করি। তখনই বোধহয় ওই ছবিটা তোলা হয়েছে।”
আমরা যখন প্রতিবাদস্থলে যাই, তখন সেখানে বেশ ভিড়। নিয়মিত বক্তৃতা চলছে, চলছে স্লোগান দেওয়াও। তাতে প্রতিবাদের ইস্যুগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। শ্রোতাদের উদ্দেশ করে এক বক্তাকে বলতে শোনা গেল—“ব্রিজ ভূষণ আমাদের অনেকের মেয়েদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছে। আমাদের সেই সব মেয়েদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা উচিত। বিজেপির সরকার আমাদের ঘরের মেয়েদের, দলিতদের, চাষিদের এবং আরও অন্যান্যদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে।”
প্রতিবাদ প্রত্যাহার বিষয়ে কোনও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে কিনা, আমরা তারও খোঁজ করি, কিন্তু সে রকম কিছু আমাদের চোখে পড়েনি।
বরং ৭ মে কুস্তিগিরদের একটি প্রতিবাদী মোমবাতি মিছিল আয়োজিত হয়, যার ভিডিও তাঁরা সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন।
ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন এবং সংযুক্ত কিসান মোর্চা সহ খাপ পঞ্চায়েতের নেতারা কুস্তিগিরদের প্রতিবাদের সমর্থনে শামিল হয়েছেন এবং সরকারকে ২১ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছেন ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার।