২০১৮'র স্কুলছাত্রীর শিরচ্ছেদের ঘটনা ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবি সহ ফিরে এল
একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর শিরচ্ছেদ করে আততায়ী, পরে আত্মঘাতী হয় সে। কোটমা পুলিশ জানিয়েছে ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক যোগ নেই।
২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশের কোটমা শহরে এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে মাথা কেটে খুন করে এক আততায়ী। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হল সেই ঘটনার ছবি। দাবি করা হল, আততায়ী ধর্মে মুসলমান। দাবিটি ভিত্তিহীন। কোটমা পুলিশ বুমকে নিশ্চিত করেছে যে ছবিটি সত্যিই সেই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের, কিন্তু ঘটনায় আততায়ী ধর্মে হিন্দু ছিল। তার নাম গুল্লু সাহু। সে পরে আত্মঘাতী হয়।
২৪ ফেব্রুয়াররি ২০২০ তারিখে ফেসবুকে "भगवा धारी ,कट्टर हिन्दू" নামে একটি পেজ থেকে দুটি বীভৎস ছবি শেয়ার করা হয়—তাতে একটি স্কুল ইউনিফর্ম পরা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে, যার মাথা কাটা হয়েছে। মাটিতে পড়ে থাকা একটি তরবারির ছবিও পোস্টটিতে শেয়ার করা হয়েছে। ছবিগুলির সঙ্গে থাকা ক্যাপশনে লেখা হয়েছে:
ক্যাপশন (হিন্দি থেকে অনুবাদ করা হয়েছে): "মেয়েটি একাদদশ শ্রেণিতে পড়ত। প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা দিতে স্কুলে গিয়েছিল। সে যখন স্কুল থেকে ফিরছিল, ২৫-২৬ বছর বয়সী একটি মুসলমান ছেলে লুকিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছিল। মেয়েটিকে দেখতে পেয়েই সে দ্রুত একটি তরবারি হাতে বেরিয়ে আসে, এবং মেয়েটির ঘাড়ে আঘাত করে। একটা মুসলমান ছেলে পূজা নামের এই হিন্দু মেয়েটিকে হত্যা করে। পুজা মধ্য প্রদেশের অনুপগড়ের কোটমা শহরের শঙ্কর লালের কন্যা। কারণ সে এই ছেলেটির লাভ জেহাদে অসম্মত হয়েছিল। এই দেশে আমরা হিন্দুরা অসহায়। এবং, এই জেহাদিরা সম্পূর্ণ নিরাপদ। এই রকম ঘটনায় আমার রক্ত ফুটতে শুরু করে।"
হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: "छात्रा 11वीं क्लास में पढ़ती थी, प्रैक्टिकल परीक्षा देने के लिए स्कूल गई हुई थी, परीक्षा देकर स्कूल से लौट ही रही थी, तभी स्कूल के बाहर घात लगाए बैठे एक मुसलमान युवक ने जिसकी उम्र लगभग 25 से 26 साल बताई जा रही है, तेजी से तलवार लेकर आया, और छात्रा के गर्दन पर वार कर दिया।मुस्लिम युवक ने तलवार से वार कर हिंदू लडकी पूजा,पुत्री शंकर लाल कोतमा अनूपगढ मध्य प्रदेश की हत्या इसलिये कर दी क्योंकि उसने उसके तथाकथित लव जेहादी प्यार को नकार दिया था ,हम हिंदू इस देश मे कितने लाचार हैं। ऒर कितने सुरक्षित हैं इन जेहादियो के आगे। खून खोलता है मेरा ऐसे मै"
বুম এই ক্যাপশন থেকে কিছু বিশেষ শব্দ বেছে নিয়ে ফেসবুক ও টুইটারে সার্চ করে। তাতে দেখা যায়, দুটি প্ল্যাটফর্মেই একই ছবি একই ক্যাপশনের সঙ্গে বহু বার শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম এই ছবিদুটির একটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। তাতে আমরা ভোপাল সমাচারের একটি প্রতিবেদনের সন্ধান পাই। ভাইরাল হওয়া পোস্টটির ক্যাপশনে যে ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছিল, এই সংবাদ প্রতিবেদনটির তথ্যের সঙ্গে তার মিল রয়েছে।
সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে নিহত মেয়েটির নাম পূজা। তার বয়স ১৭ বছর, সে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সংবাদ প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ২০১৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সে যখন স্কুল থেকে প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা দিয়ে ফিরছিল, তখনই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। আততায়ী তাকে একটি তরবারি দিয়ে আঘাত করে, এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য যে এই সংবাদ প্রতিবেদনে আততায়ীর ধর্ম বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
বুম কোটমা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ভাইরাল হওয়া পোস্টটি ছবি, ক্যাপশন সহ তাদের পাঠায়। পুলিশ জানায়, সত্যিই দুই বছর আগে কোটমা শহরে এই ঘটনাটি ঘটেছিল।
পুলিশ আরও জানায় যে নিহত মেয়েটির নাম পূজা পানিকা। সে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। স্কুল থেকে প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে সে আক্রান্ত হয়। আততায়ীর সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে পুলিশ জানায়, তার নাম গুল্লু সাহু, সে ধর্মে হিন্দু, এবং এই ঘটনার পরেই সে আত্মঘাতী হয়।
কোটমা পুলি্শের রাকেশ কুমার বেইর জানান, "আততায়ী এবং আক্রান্ত, দুজনেই ধর্মে হিন্দু। এবং, এই ঘটনায় এর বেশি কিছু নেই। অভিযুক্ত পরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়।"