স্ট্যাচু অব ইউনিটির পাদদেশ প্লাবিত বলে ছড়ালো ২০১৯ সালের পুরানো ভিডিও
বুম যাচাই করে দেখে ২০১৯ সালে ওই এলাকা সফরের পর আসল ভিডিওটি টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
স্ট্যাচু অব ইউনিটির প্রায় এক বছরের একটি পুরনো ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে বর্ষার পর স্ট্যাচু অব ইউনিটির চারপাশে নর্মদা নদীর বন্যার জল জমে থাকতে দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের পর কর্তৃপক্ষ স্ট্যাচুর যথাযথ দেখভাল করছে না দাবি করে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে।
বুম দেখেছে ভিডিওটি ২০১৯ সালের। ওই অঞ্চলে তাঁর সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথম এই ভিডিওটি টুইট করেন। সর্দার সরোবর নর্মদা নিগম লিমিটেড নামে যে সংস্থা স্ট্যাচুটির রক্ষণাবেক্ষণ করে, আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা নিশ্চিত ভাবে জানায়, ভিডিওটি পুরনো। তারা আরও জানায় যে মূর্তির চারপাশের অঞ্চল সুরক্ষিত রাখার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজনীতিক এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী বল্লভভাই পটেলের প্রায় ৬০০ ফুট লম্বা এই মূর্তিটি গুজরাতের কেভাড়িয়া অঞ্চলে নর্মদা নদীর তীরে সাধু বেট দ্বীপে অবস্থিত। স্ট্যাচু অব ইউনিটি নামে পরিচিত এই মূর্তিটি ২০১৮ সালের অক্টোবরে উদ্বোধন করা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মূর্তি হওয়ায় এটি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। মূর্তিটি বিভিন্ন সংস্থার যথেষ্ট সমালোচনার মুখেও পড়েছিল। পরিবেশ ও আদিবাসী অধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অভিযোগ, এই মূর্তিটি বানানোর জন্য উপযুক্ত ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।
ভিডিওটি দুই ধরনের ক্যাপশনের সঙ্গে ছড়িয়েছে— একটিতে বলা হয়েছে যে কর্তৃপক্ষ বর্ষার সময় মূর্তিটির যথাযথ দেখভাল করেছে না; অন্যটিতে মূর্তিটির সাম্প্রতিক অবস্থার ছবি তুলে ধরা হয়েছে।
घनघोर बारिश में भारत की अखंडता का संदेश देते हुए Statue of Unity का
— Priyanka Sharma (@Priyankabjym) July 23, 2020
यह वीडियो#StatueOfUnity pic.twitter.com/uSvsvrMTZm
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুকে একটি ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, দেশের যে টাকা খরচ করে মূর্তিটি বানানো হয়েছে তা জলে গেল। ক্যাপশনটির অনুবাদ: '৩০০০ কোটি টাকা জলে ধুয়ে গেল।'
(হিন্দিতে লেখা মূল লেখা: देश का 3000 करोड़ रुपया बह गया पानी मे।)
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
একই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে যেখানে অন্যান্য ফেসবুক ব্যবহারকারী সাম্প্রতিক ভেবে পুরানো ভিডিও শেয়ার করেছেন।
তথ্য যাচাই
বুম দেখেছে ভিডিওটি ২০১৯ সালের এবং এই অঞ্চলে তাঁর সফরের সময় নরেন্দ্র মোদী নিজের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে এটি টুইট করেন।
আমরা টুইটারে 'স্ট্যাচু অব ইউনিটি' এই কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করি এবং ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মোদীর অফিসিয়াল হ্যান্ডেল থেকে করা একটি টুইট দেখতে পাই। এই টুইটে তিনি লিখেছেন, "একটু আগে কেভাড়িয়া পৌঁছেছি। বিরাট 'স্ট্যাচু অব ইউনিটি'র দিকে একবার তাকান, মহান সরদার প্যাটেলের প্রতি ভারতের শ্রদ্ধার্ঘ্য।"
Reached Kevadia a short while ago.
— Narendra Modi (@narendramodi) September 17, 2019
Have a look at the majestic 'Statue of Unity', India's tribute to the great Sardar Patel. pic.twitter.com/B8ciNFr4p7
ভাইরাল হওয়া ভিডিও এবং মোদীর টুইট করা ভিডিওর দৃশ্যগুলি মিলে যায়। দুটিতেই জলে পরিপূর্ণ নর্মদা নদী দেখা যাচ্ছে, কিন্তু নদীর জল ছাপিয়ে কোনও ভাবেই মুর্তির কোনও ক্ষতি হচ্ছে না বা কোনও বন্যা পরিস্থিতিও তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে না।
আমরা সর্দার সরোবর নর্মদা নিগম লিমিটেডের (এসএসএনএনএল) সুপারিন্টেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আর জি কানুনগোর সঙ্গেও যোগাযোগ করি। তিনি নিশ্চিত ভাবে জানান যে ভিডিওটি পুরানো। তিনি বলেন, "মূর্তিটি ব্রোঞ্জের তৈরি যার উপর মরচে পড়ে না।" কানুনগো জানান যে ওই অঞ্চলে খুব বেশী বর্ষা হয়নি, ফলে ভিডিওতে যেমন জল কাদা দেখা যাচ্ছে সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
যদিও ২০১৯ সালের বর্ষায় স্ট্যাচু অব ইউনিটির ক্ষতি না হলেও তার চারপাশে দর্শকদের জন্য যে গ্যালারি করা ছিল তা বন্যার জলে ভেসে যায়। গ্যালারিতে জল ঢোকার ছবি ও ভিডিও দর্শকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে। স্ট্যাচু অব ইউনিটির অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডল থেকে তখন টুইট করে জানানো হয়েছিল যে গ্যালারি এমন ভাবেই তৈরি যাতে দর্শকরা সবচেয়ে বেশি সুবিধা পান।
মূর্তিটির চারপাশে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে কানুনগো বলেন, "দর্শকদের গ্যালারি এবং চারপাশের জায়গা সুরক্ষিত করতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে আমরা সর্দার পটেলের মাথার উপর ছাতা ধরতে পারি না, তাই না? এটি একটি ব্রোঞ্জের তৈরি মূর্তি, তাই এটির কিছু হবে না। এগুলি সব ব্রিভান্তিকর পোস্ট।"
আরও পড়ুন: ২০১৭ সালে বিহারে হাসপাতালের বেডে কুকুর শোয়ার ছবি সাম্প্রতিক বলে ভাইরাল