মান্ধাতা আমলের টোটকাকে ভারতীয় ছাত্রের কোভিড-১৯ ওষুধ উদ্ভাবন বলা হল
পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দাবিটি খারিজ করে বলেছেন কোভিড-১৯-এর ওষুধ তাদের কোনও ছাত্র আবিষ্কার করেনি।
কাশি কমানোর জন্য আদা, গোলমরিচ ও মধুর মিশ্রণ সেবনের সুপ্রাচীন ঘরোয়া টোটকাকে পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভারতীয় ছাত্রের আবিষ্কৃত কোভিড-১৯-এর ওষুধ বলে চালানো হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কোভিড-১৯-এর নিরাময়ের কোনও ওষুধ আবিষ্কারের কথা ঘোষণাই করেনি।
বুম পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছে। তিনি জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনও ঘটনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ নেই। বার্তাটি ঠিক কোথা থেকে ছড়ালো, সেটা স্পষ্ট নয়। এটা একটা রসিকতা হিসাবে প্রচার করা হয়েছে কিনা, স্পষ্ট নয় সেটাও।
ভাইরাল হওয়া বার্তাটিতে দাবি করা হয়েছে, রামু নামে পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্র নাকি কোভিড-১৯-এর ওষুধ আবিষ্কার করে ফেলেছে, যাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃতিও দিয়েছে। সর্দি-কাশির উপশম ঘটাতে ভারতীয়রা দীর্ঘ কাল ধরে যে টোটকা ব্যবহার করে থাকেন, সেটাকেই এই আবিষ্কার বলে চালানো হচ্ছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গোটা সোশাল মিডিয়া জুড়ে যে অগণিত দেশি ওষুধ নিয়ে প্রচার চলছে, এটি তাতে নবতম সংযোজনও বলা যেতে পারে।
দাবিটি এই রকম: "পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত রামু নামের এক ছাত্র কোভিড-১৯-এর ওষুধ আবিষ্কার করেছে, যেটি ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতিও পেয়েছে। ছাত্রটি প্রমাণ করেছে যে দু-চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ গোলমরিচের গুঁড়ো এবং কিছুটা আদার রস মিশিয়ে পর-পর ৫ দিন খেলেই করোনাভাইরাস দমিত হবে এবং সম্পূর্ণ নিরাময়ও হয়ে যাবে। সারা বিশ্ব এই ওষুধটি শিরোধার্য করে নিচ্ছে। অবশেষে ২০২০ সালে ভাল একটা কিছু ঘটলো।"
সোশাল মিডিয়ায় এই দাবিসহ বার্তাটি ভাইরাল হয়েছে এবং বুম-এর হোয়াটঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও এটির সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ নিয়ে পাঠানো হয়েছে।
ফেসবুক এবং টুইটারেও পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে।
পোস্টটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: গরম জলে ভাপ, গার্গল ও চা পানেই চিনে সেরে উঠছে কোভিড-১৯ রোগী?
তথ্য যাচাই
বুম পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গুরমিত সিং-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন: "এটা সম্পূর্ণ ভুয়ো। বিশ্ববিদ্যালয়কে মিছিমিছি এর মধ্যে টেনে আনা হচ্ছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ছাত্রই করোনাভাইরাস নিরাময়ের কোনও ওষুধ তৈরিতে যুক্ত নয়।"
বার্তাটিতে আরও দাবি করা হয়েছে যে, WHO নাকি এই দেশি টোটকাকে কোভিড-১৯-এর ওষুধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, যেটা একেবারেই বাজে কথা। কারণ এখনও পর্যন্ত কোনও ওষুধ বা টিকা এই সংস্থার ছাড়পত্র পায়নি। এইডস ভাইরাস বিরোধী লপিনাভির, রিটোনাভির, স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসোন এবং রেমডিসিভির, ফ্যাভিপিরাভির, টসিলিজুমাব জাতীয় কিছু ওষুধ নিয়ে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে দেখা হচ্ছে মাত্র। সব মিলিয়ে ১৩২ ধরনের টিকা তৈরি করার জন্য গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে, মানব রোগীর উপর পরীক্ষাও শুরু হয়েছে।
আদা, মধু ও গোলমরিচের সুফল
ভাইরাল হওয়া বার্তাটির দাবি— পর-পর পাঁচ দিন দু-চামচ মধু, এক চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো এবং আদার রস মিশিয়ে খেলেই নাকি করোনাভাইরাস জব্দ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আমরা মুম্বইয়ের গ্লোবাল হাসপাতালের চিকিত্সক ডাঃ হরিশ চাফলে-র সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ সবের আয়ুর্বেদিক গুণ সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে কার্যকরী হতে পারে, কিন্তু করোনাভাইরাসের উপর এ সবের কোনও প্রভাব পড়বে না।
ডাঃ চাফলে-র মতে "আয়ুর্বেদ সর্দি-কাশির ওপর এই সব আদা, গোলমরিচ, মধু ইত্যাদি দিয়ে তৈরি দেশি টোটকার কথা বলে বটে, কিন্তু করোনাভাইরাসের মতো জীবাণুর ক্ষেত্রে এ সবের কোনও রকম প্রভাব নেই।"
যেমন গোলমরিচের কিছু জীবাণুনাশক গুণ রয়েছে, কিন্তু WHO অনেক আগেই ঘোষণা করে দিয়েছে যে, কোভিড-১৯-এর উপর তার কোনও জারিজুরিই খাটে না। একই ভাবে, মধুরও কিছু জীবাণু-প্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু করোনাভাইরাসের উপর তার প্রভাব নির্দিষ্ট করা যায়নি।
আর আদার রস যে কোভিড-১৯ আক্রান্তের ক্ষেত্রে কোনও কাজে আসে না, বিশেষজ্ঞের মতামত উদ্ধৃত করে বুম আগেই সে কথা জানিয়ে দিয়েছে।
অনেক ভারতীয়ই আদা, মধু আর গোলমরিচের মিশ্রণ নিয়মিত সেবন করে থাকেন সর্দি-কাশির উপশমের জন্যl শুকনো গলা-খুশখুশেও এ সব খুব কাজে দেয়।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ হোম কিটসের পরামর্শ দেওয়া ভাইরাল বার্তাটি টাটা হেলথের নয়