বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বাঙালি সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেননি
বুম যাচাই করে দেখেছে যে, বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বাঙালিদের শারমেয়র সঙ্গে তুলনা করে কোনও অবমাননাকর মন্তব্য করেননি।
সোশাল মিডিয়াতে ভুয়ো গ্রাফিক পোস্টার শেয়ার করে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে, বিজেপির সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় নাকি বলেছেন, ''বাঙালিদের যতই খাবার দাও, খাবার পাইনি বলে, সারাদিন কুত্তার মত ঘেউ ঘেউ করে।''
ফেসবুক পোস্টটিতে যে ছবি শেয়ার করা হয়েছে, সেখানে কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে গেরুয়া উত্তরীয় ও হালকা হলুদ রঙের হাফহাতা নেহরু কোট পরে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। পিছনে বাংলা ও হিন্দিতে বিজেপির দলীয় প্রতীক সহ পশ্চিমবঙ্গ লেখা রয়েছে। সামনে মাইক্রোফোন থাকায় অনুমান করা যায় ছবিটি দলীয় সংবাদিক সম্মেলনের।
ছবিটির বাম পাশে একটি কুকুরের ছবি জোড়া হয়েছে তার গায়ে হিন্দিতে লেখা হয়েছে 'বাঙালি' শব্দ এবং ডানপাশে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি।
পোস্টটারটিতে লেখা হয়েছে, ''বাঙালিদের যতই খাবার দাও, খাবার পাইনি বলে, সারাদিন কুত্তার মত ঘেউ ঘেউ করে। বিজেপির নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। পশ্চিমবঙ্গে বাঙালি জাতিকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা করলেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়।''
ভাইরাল হওয়া ফেসবুকে পোস্টটিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "বাঙালি জাতির উপর আবার ও আঘাত করলেন বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। বাঙালি জাতিকে কুকুরের সাথে তুলনা করলেন। বিজেপির এই নেতার কথা শুনে বাঙালি জাতির মধ্যে সমালোচনার ঝড়।''
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯: ট্রাকে চড়ে তবলিগি জামাত সদস্যদের যাওয়ার ভিডিওটি ইসলামাবাদের
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল হওয়া ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখেছে যে, কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের এই ছবিটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের একটি সংবাদিক সম্মেলনের ছবি। সংবাদ সম্মেলনটি কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।
ভিডিওটি কলকাতা টুডে ও নিউজ-১৮ বাংলাতে ইউটিউবে আপলোড করেছিল ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর এবং ১৩ ডিসেম্বর।
এই সংবাদ সম্মেলনে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বাঙালিদের শারমেয়দের সঙ্গে তুলনা করে কোনও বক্তব্য রাখেননি।
বুম কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের বিভিন্ন টুইটার ও ফেসবুকের নানা পোস্ট দেখে এই সংক্রান্ত কোনও মন্তব্য খুঁজে পাননি।
২০২০ সালের শুরুতে কৌলাস বিজয়বর্গীয় নির্মানকর্মীদের 'চিড়ে' খাওয়া দেখে 'বাংলাদেশি' ও 'অনুপ্রবেশকারী' হিসেবে চেনা যায় বলে বিতর্কিত মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: না, গ্রাম্য দুস্থ্যদের নিয়ে কুমন্তব্য করেননি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়
অতীত শারমেয় প্রসঙ্গ
২০১৫ সালে কৌলাস বিজয়বর্গীয় তৎকালীন বিজেপি নেতা ও সহকর্মী শত্রুঘ্ন সিনহাকে 'শারমেয়' উপমা দিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন। কৌলাস বিজয়বর্গীয় ২০১৭ সালে বিরোধীদের এক জোট হওয়াকে 'শারমেয়' ও শার্দূলের যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেন।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসেই তৃণমূল দল বদলে বিজেপি যাওয়া লোকসভা সংসদ সৌমিত্র খান সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরোধিতা করা বিশিষ্টজনদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুকুর বলে আখ্যা দেন। এছাড়াও, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধীদের শারমেয়দের মতো গুলি করে মারা উচিত বলে বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।