জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন মনমোহন সিংহ দাবিটি ভুয়ো
জো বাইডেন ম্যজিক নম্বর ২৭০ পেরলেও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে এখনও অনেক দেরি।
ফেসবুক সহ একাধিক সোশাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করা হয়েছে আমেরিকার ৪৬ তম রাষ্ট্রপতি হিসবে জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহকে। বুম মনমোহন সিংহের কার্যালয়ের এক ঘনিষ্ঠ কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বুমকে জানান তাদের কাছে এই ধরণের কোনও তথ্য এই মূহূর্তে নেই।
বাইডেন ইলেক্টোরাল কলেজের নির্ধারিত সংখ্য ২৭০ পেরিয়ে রাষ্ট্রপতি পদের যোগ্য হলেও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হননি। বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান অথবা অন্যদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানদের সাধারণত আমেরিকার রাষ্ট্রপতিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় না।
তাছাড়া এখনও জর্জিয়া, অ্যারিজনা, আলাস্কা প্রভৃতি রাজ্যে গণনা প্রক্রিয়া চলছে। গণমাধ্যম এই সব রাজ্যের ফল এখনও ঘোষণা করেনি।
আমেরিকার সংবিধান অনুয়ায়ী নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরের বছর ১০ জানুয়ারি দুপুর থেকে দায়িত্বভার নেবেন।
মনমোহন সিংহ ২০০৯ থেকে ২০১৭ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাইডেনের সঙ্গে দপ্তরীয় কাজকর্ম করেছেন, যখন বাইডেন আমেরিকার উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন।
বম্বে আইআইটির প্রাক্তন অধ্যাপক ও সমাজকর্মী ড. রাম পুনিয়ানি নামে তৈরি একটি ফেসবুক পেজের পোস্টে দাবি করা হয়েছে, "বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হতে চলেছেন ড. মনমোহন সিংহ। পোস্টটিতে সূত্রের উল্লেখ না থাকায় বুম এই পেজটি থেকে জানতে চেয়েছে এই খবরের উৎস।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বাংলাতেও একাধিক পোস্টে দাবি করা হয় একই তথ্য।
এরকম একটি ফেসবুক পোস্টে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "আমেরিকার রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গন্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে ভারতীয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কে সম্মানীয় ভাবে আমন্ত্রণ করা হলো, লজ্জার বিষয়, মোদিকে ডাকা হলো না।"
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে গ্রাফিক পোস্টও শেয়ার করা হয়েছে। তাতে লেখা, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং"
গ্রাফিক পোস্টটি শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "স্বদেশে পূজ্যতে রাজা, বিদ্বান্ সর্বত্র পূজ্যতে।।" #মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি #জোবাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মূখ্য অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ভারতের #UPA সরকারের প্রাক্তন #প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং। আপনার কর্মদক্ষতার জন্য আজ সমগ্ৰ ভারতবাসী গর্বিত। আন্তরিক শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন।"
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: গিরিরাজ সিংহ বিহারে মুখ্যমন্ত্রী হোক, প্রধানমন্ত্রী মোদীর চিঠিটি ভুয়ো
বুম এই সম্পর্কিত একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখে সরকারি সূত্র কিংবা নিভর্রযোগ্য কোনও গণমাধ্যমে এব্যাপারে সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।
এখনও পর্যন্ত আমেরিকার নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। এখনও ৪ টি রাজ্যে নির্বাচন মেটেনি। যদিও চিরাচরিত ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী বাইডেন ও হ্যারিস তাদের সংশ্লিষ্ট পদে মনোনীত হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর নাগাদ আনুষ্ঠানিক নির্বাচন হবে যখন ইলেক্টোরাল কলেজ তাদের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভোট নিয়ে হাজির হবে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প পোনিসিলভিয়া, জর্জিয়া এবং মিশিগানের গণনা প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক মামলা করেছেন যার ফলে বাইডেনের নির্বাচনের জন্য গণনা প্রক্রিয়া আরও দেরি হতে পারে। কার্যত বিডেনের নির্বাচন নিয়ে এখনও হার স্বীকার করেননি ট্রাম্প।
বাইডেনের প্রচারদল এখনও তাঁর অভিষেক দল ঘোষণা করেনি, যা হবু রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করতে পারে। এই দল প্রচারের নিরিখে সব নিমন্ত্রণ ও রসদ দেখভাল করে, অন্যদিকে সংযুক্ত কংগ্রেসেনাল কমিটি সরকারের তরফে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখাশোনা করে। ২০১৬ সালে তৎকালীন বিজয়ী রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ১৫ নভেম্বর তাঁর দল ঘোষণা করেছিলেন।
বর্তমান রাষ্ট্র প্রধান অথবা অন্যদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানদের সাধারণত আমেরিকার রাষ্ট্রপতিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। যদিও রাজধানীতে উপস্থিত বিদেশী অভ্যাগতদের একাংশ আমন্ত্রিত হয়ে থাকেন। এই অনুষ্ঠানে নতুন রাষ্ট্রপতি সাধারণত প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হন। ইউএস কংগ্রেস আয়োজিত বল নাচ, দ্বিপ্রহরিক আহার ও বর্ণাঢ্য প্যারাডের মাধ্যমে সম্মান জানানোর পর, নয়া রাষ্ট্রপতি দায়িত্বভার গ্রহণ করে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের জন্য প্রচারে নরেন্দ্র মোদীকে দায়ী করা জো বাইডেনের টুইট ভুয়ো