ঘিয়ের পাত্রে লুকনো বন্দুকের পুরনো ভিডিও মিথ্যে ভাবে জোড়া হল দিল্লি দাঙ্গার সঙ্গে
বুম দেখে ভিডিওটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের। সেই সময় দিল্লি পুলিশের এক স্পেশাল সেল একটি বন্দুক পাচারকারী দলকে ধরে যারা মধ্যপ্রদেশ থেকে বন্দুক নিয়ে দিল্লিতে বেচার পরিকল্পনা করেছিল।
একটি পুরনো ভিডিওতে দিল্লি পুলিশের একটি বিশেষ শাখাকে বন্দুক পাচারকারীদের ধরতে দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর ২০১৯-এ ঘিয়ের পাত্রের মধ্যে লুকিয়ে ২৬ বন্দুক নিয়ে আসার সময় তারা গাজিপুরে ধরা পড়ে। পুরনো ওই ভিডিওকে উত্তর-পূর্ব দিল্লির সাম্প্রতিক দাঙ্গার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।
এক মিনিটের একটু বেশি বড় ওই ক্লিপটি এখন সোশাল মিডিয়া আর হোয়াটসঅ্যাপে ব্যাপক ভাবে শেয়ার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে, দাঙ্গায় ব্যবহার করার জন্য বন্দুকগুলি নিয়ে আসা হচ্ছিল।
ভিডিওটি বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে (৭৭০০৯০৬১১১) আসে। সোশাল মিডিয়া মারফত ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে অনুরোধ করা হয়।
@CPDelhi @DelhiPolice As shared with me on #WhatsApp - How Gun's r supplied to #DelhiViolance @free_thinker @boomlive_in Please verify #Isupportdelhipolice #ArrestTahirHussain #AAP_के_आतंकी #AnkitSharma pic.twitter.com/HeoNLkTSUV
— VAIBHAV Aggarwal (@thevaibhavag) February 28, 2020
ভিডিওটির ক্যাপশনে সাম্প্রদায়িক রঙ চড়িয়ে তা শেয়ার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, "হিন্দু আর শিখদের মারার জন্য ঘিয়ের পাত্র করে বন্দুক নিয়ে আসার সময়, সন্ত্রাসবাদী জিহাদিরা দিল্লিতে ধরা পড়ে যায়।"
(হিন্দিতে মূল ক্যাপশন: दिल्ली में हिंदुओं और सिक्खों की सामूहिक हत्याएं करने के लिए आतंकवादी जेहादी घी के डिब्बे में अवैध हथियार सप्लाई करते हुए धर दबोचे गए)
ওই ভিডিও সহ একটি ফেসবুক পোস্ট নীচে দেওয়া হল। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
একই ক্যাপশন সহ আরও অনেক ফেসবুক পোস্ট আমরা দেখতে পাই।
তথ্য যাচাই
হিন্দি কি-ওয়ার্ড 'ঘি', 'ডিব্বে' আর 'পিস্তল' দিয়ে আমরা গুগুলে সার্চ করি। তার ফলে, সেপ্টেম্বর ২০১৯-এর বেশ কিছু রিপোর্ট সামনে আসে যেখানে ওই একই ভিডিও ব্যবহার করা হয়।২৭ সেপ্টেম্বর 'নবভারত টাইমস'-এর একটি ভিডিও রিপোর্টে বলা হয় যে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, দিল্লি পুলিশের একটি বিশেষ শাখা এক অস্ত্র সরবরাহকারী চক্র ভেঙ্গে দেয়। রিপোর্টে বলা হয়, দু'টি ঘিয়ের টিন থেকে পুলিশ প্লাস্টিকে মোড়া ২৬ পিস্তল আর ম্যাগাজিন উদ্ধার করে। যে দু'জন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়, পুলিশ তাদের জিতেন্দ্র, ওরফে জিতু, ও রাজ বাহাদুর হিসেবে শানাক্ত করে। প্রথম জন মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা আর দ্বিতীয় ব্যক্তি উত্তর প্রদেশের। তারা ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিওন (এনসিআর) বা জাতীয় রাজধানী এলাকায় অস্ত্র ও গুলি সরবরাহ করত। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের ডিসিপি প্রমোদ সিং কুশওয়াহার'র কাছে গোপন খবর আসে যে, অস্ত্র সমেত একটি গাড়ি গাজীপুর দিয়ে যাবে।
ভাইরাল ভিডিওর এক ব্যক্তিকে ওই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত 'দ্য হিন্দু'র প্রতিবেদনেও দেখা যায়।
অভিযুক্তরা মধ্যপ্রদেশ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে তা ইটাওয়া, গোয়ালিয়র ও ধোলপুরে বিক্রি করত বলে জানায় দ্য হিন্দু। ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায় যে, পাচারকারীরা পয়েন্ট ৩২ ক্যালিবারের পিস্তল ৮,০০০-১২,০০০ টাকায় কিনে তা ২৫,০০০-৩০,০০০ টাকায় বিক্রি করত দিল্লিতে। দামটা অবশ্য নির্ভর করত পিস্তলের মানের ওপর। (আরও জানতে ক্লিক করুন এখানে ও এখানে। )
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের পুরনো সংঘর্ষের ভিডিও দিল্লির সাম্প্রতিক দাঙ্গা বলে ছড়াল