আম আদমি পার্টি কি প্রতিবন্ধীদের মধ্যে 'জাদু-কম্বল' বিলি করেছে? একটি তথ্য যাচাই
বুম দেখে, কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানটি উত্তরপ্রদেশের এক অসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এবং আম আদমি পার্টির সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।
নির্বাচনের প্রাক্কালে আম আদমি পার্টি প্রতিবন্ধী সেজে আসা একজনকে কম্বল বিলি করছে বলে যে ভিডিওটি ছড়ানো হচ্ছে, সেটি ভুয়ো।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হুইলচেয়ারে বসা এক ব্যক্তি কম্বল-বিতরণ অভিযানে দু হাত পেতে কম্বল নিচ্ছে, আর তার পরেই চেয়ার থেকে উঠে দিব্যি হেঁটে চলে যাচ্ছে। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, আম আদমি পার্টি প্রতিবন্ধী সাজিয়ে কিছু লোককে কম্বল বিলি করার নাটকটা সাজিয়েছে।
দিল্লি বিধানসভার ভোটগ্রহণ ৮ ফেব্রুয়ারি এবং ১১ ফেব্রুয়ারি তার ফল প্রকাশিত হওয়ার কথা।
ভিডিওটির ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "আম আদমি পার্টির দলীয় প্রচার! প্রতিবন্ধীদের মধ্যে কম্বল বিলি করা হচ্ছে! মনে হয়, এই সিনেমাটির পরিচালক "কাট" নির্দেশটা দিতে ভুলে গেছেন! তাই কম্বল হাতে পাওয়ার পরেই প্রতিবন্ধীটি দিব্যি হেঁটে চলে গেল! জাদু-কম্বল বটে! প্রশ্ন জাগে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বাস্তব জীবনের জোকাররা কেন ভারতেই বাস করে?"
ভিডিওটি ব্যাপকভাবে টুইটার ও ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে।
Propaganda video of @AamAadmiParty 😃🤣 Blankets being distributed to disabled persons. Director of "movie" forgot to say "cut" and the person starts walking away. Magic blanket !! ( #DelhiWithBJP @ShobhaBJP @vivekagnihotri @smritiirani @AmitShah @BJP4India @rvaidya2000 )@ANI pic.twitter.com/FZvM2o6XGh
— SPEAK TRUTH (@SPEAKTRUTH108) January 30, 2020
আরও পড়ুন: ইমরান খানের সঙ্গে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সাক্ষাতের ছবি দিল্লির নির্বাচনের প্রাক্কালে আবার জিইয়ে তোলা হল
তথ্য যাচাই
বুম এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে যে, কম্বল-বিতরণ অভিযানটির সঙ্গে আম আদমি পার্টির কোনও সংশ্রব নেই এবং কম্বল-প্রাপক প্রতিবন্ধীও কোনও নাটক করছে নাl আমরা দেখেছি, কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানটি উত্তরপ্রদেশের এক এনজিও-র আয়োজিত, যারা পূর্ণাঙ্গ ও আংশিক প্রতিবন্ধীদের মধ্যে কম্বল বিলি করছিলl
আপ (আম আদমি পার্টি) নয়, ডিজিটাল সাক্ষরতা সংস্থানই ছিল অভিযানটির আয়োজক
ভিডিওতে একটি ব্যানার টাঙানো দেখা গেছে, যেটিতে "ডিজিটাল সাক্ষরতা সংস্থান, কম্বল বিতরণ সমারোহ" কথাটি লেখা রয়েছে। আমরা ফেসবুকে এই সংগঠনের খোঁজখবর করে দেখেছি, এটি উত্তরপ্রদেশের একটি এনজিও।
সাক্ষরতা সংস্থান নামের এই এনজিওটি উত্তরপ্রদেশের বিজনৌর জেলার সেওহারায় জনৈক রবি সাইনি পরিচালনা করেন। সাইনির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের জানান, বাস্তবিকই তিনিই এই এনজিওটি পরিচালনা করেন এবং কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানটিও তাঁদেরই এবং হুইলচেয়ারে বসা প্রতিবন্ধীর নাম রমেশ সিং। সাইনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন, যিনি তথ্য ও সম্প্রচার প্রযুক্তির মন্ত্রকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত।
"আমার কোনও রাজনৈতিক পরিচয় নেই, আমি স্রেফ একজন ব্যবসায়ী, যে একটি এনজিও চালায়, যারা সরকারকে ই-সাক্ষরতা প্রচারে, যেমন গ্রামাঞ্চলে ওয়াই-ফাই বসানোর মতো কাজে সহায়তা করে থাকে। আম আদমি পার্টি কিংবা অন্য কোনও দলের সঙ্গেই আমি যুক্ত নই। আমি কেবল সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রকের সাহায্য নিয়ে কাজ করি এবং আমার বা আমার চালানো এনজিও-র কোনও রাজনৈতিক সংশ্রব নেই।"
সাজানো প্রতিবন্ধকতা?
হুইলচেয়ারে বসা বিশেষ ভাবে সক্ষম রমেশ সিংয়ের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ করি। তিনি জানান, "আমার প্রতিবন্ধকতা ৪০ শতাংশ এবং সেই মর্মে সরকারের দেওয়া শংসাপত্রও আমার কাছে রয়েছে।" চলাফেরা করার জন্য তাঁকে হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি উত্তর দেন-- না, তা হয় না, তবে সেদিন এনজিওর লোকেদের অনুরোধেই তাঁকে হুইলচেয়ারে বসতে হয়েছিল।
"আমার আংশিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও আমি হাঁটতে পারি, তবে সেদিন এনজিও-র লোকেরাই আমাদের বলে প্রতিবন্ধীরা যেন হুইলচেয়ারে বসে কম্বল নেয়।"
বুম রমেশ সিং-এর প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র ও পরিচয়পত্রও দেখেছে, যা প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকার মঞ্জুর করে থাকে।
আমরা সাইনিকেও প্রশ্ন করি কেন তাঁদের এনজিও সকল প্রতিবন্ধীকেই হুইলচেয়ারে বসতে বলেছিল, যদিও তাদের অনেকেই হাঁটা-চলা করতে পারে? জবাবে সাইনি বলেন, ''দেখুন ওরা কম-বেশি সকলেই প্রতিবন্ধী। ওরা দাঁড়িয়ে কম্বল নিচ্ছে, সেটা ভাল দেখায় না, তাই...।"