করোনাভাইরাস সংক্রমনের পর চিন মুসলিমদের হাতে কোরান তুলে দিচ্ছে?
বুম খুঁজে পেয়েছে ভিডিওটি ২০১৩ সালের মার্চ মাস থেকে ইউটিউবে রয়েছে। ভিডিওটিকে ধর্মীয় ওয়েবসাইটে চিনে বাইবেল দেওয়ার দৃশ্য বলা হয়েছে।
চিনের লোকজনের হাতে বাইবেল দেওয়ার একটি পুরনো ভিডিও বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ফেসবুকে ছড়াচ্ছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, কোরানের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর চিনের মুসলিমদের কোরান নেওয়ার দৃশ্য এটি। ৫৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে বাক্স খুলে বই নিতে দেখা যায় তরুণ তরুনীদের। হাতে বই পাওয়ার পর অনেকে বইগুলিতে স্নেহভরে চুম্বন করে। কাউকে কাউকে উচ্ছাসে বিহ্বল হয়ে কাঁদতেও দেখা যায়।
ভিডিওটি শেয়ার করে ফেসবুক পোস্টে হিন্দিতে লেখা হয়েছে, "অল্লাহের কী মহিমা দেখ, চিনের লোক কালকে পর্যন্ত ঘৃনা করতো। আজকে তারা হৃদয়ে ধরে রাখছে। #আল্লাহু আকবর''
আরও পড়ুন: না, করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে মসজিদে যাননি চিনের প্রধানমন্ত্রী
মূল হিন্দিতে লেখা পোস্ট, ''#Allah की कुदरत तो देखो जो चीन के लोग कल तक नफरत करते थे। आज बही दिल से लगा रहे है। #Allah_hu_Akbar''
একই বয়ানে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে ভিডিওটি।
ফেসবুকে ইংরেজি ক্যাপশন সহ ভাইরাল হয়েছে একই ভিডিও। সেখানে বলা হয়েছে, ''পবিত্র কোরান নিষিদ্ধ হয়েছিল চিনে। এখন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। চীনের মুসলিমরা এখন পবিত্র কোরান পড়তে পারছে। আনন্দটা দেখুন!!!"
(ইংরেজিতে মূল পোস্ট: "The Holy Quran was banned in China. Now the ban has been lifted. Chinese Muslims are allowed to read Holy Quran. Look at Joy!!!")
জানুয়ারি মাসে চিনে করোনাভাইরাস আক্রান্তের খবর ছড়ালে চিন সংক্রান্ত নানা গুজব ইন্টারনেটে খুরপাক খাচ্ছে। চিনের প্রেসিডেন্টের মসজিদ দর্শনের পুরনো ছবি থেকে ফ্লুর প্রকোপ থামাতে শূকর নিধনের পুরনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক ঘটনা বলে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে। এমনকি শি জিনপিংয়ের পুরনো সফরের ভিডিও শেয়ার করে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে চিনে কেন মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষরা করোনা আক্রান্ত হয়নি তা পর্যালোচনা করতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মুসলমানদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘুরে দেখছেন!
আরও পড়ুন: না, শি জিনপিং করোনাভাইরাসের ঠেকানোর কৌশল জানতে মুসলিমদের বাড়ি যাননি
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স সার্চ ও ইউটিউবে কিওয়ার্ড সার্চ করে খুঁজে পেয়েছে ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। ২০১৩ সালের মার্চ মাস থেকে অনলাইনে বিভিন্ন ধর্মীয় সাইট ও ইউটিউব চ্যালেনে ভিডিওটির হদিস মেলে। সেখানে এই ভিডিওটিকে কোরান গ্রহণে দৃশ্য বলে দাবি করা হয়নি।
২০১৩ সালের মার্চ, মে ও জুন মাসে একই ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে এগুলিকে চিনের বাসিন্দাদের পবিত্র বাইবেল নেওয়ার দৃশ্য বলা হয়েছে। নীচে ভিডিওটি দেখুন।
২০১৩ সালের মার্চ প্রকাশিত গসপেল প্রাইম নামে একটি পর্তুগিজ ওয়েবসাইট ও আরেকটি স্প্যানিশ ওয়েবসাইটে ভিডিওটিতে চিন দেশে বাইবেল গ্রহণের দৃশ্য বলা হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মপ্রচারের সাইটে এগুলিকে চিনে পবিত্র বাইবেল দেওয়ার দৃশ্য বলা হয়েছে।
বুম এব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছে যে ভাইরাল ভিডিওটি বেশ পুরনো ও সাম্প্রতিক সময়ে কোরান দেওয়ার দৃশ্য নয়। বুমের পক্ষে ভিডিওটির ব্যাপারে ওই ধর্মীয় ওয়েবসাইটগুলির দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: শি জিন পিং-এর মসজিদ সফরের পুরনো ছবিকে করোনাভাইরাসের সঙ্গে জোড়া হচ্ছে