প্রধানমন্ত্রী মোদী কি ড্রোন-বিস্ময় প্রতাপকে ডিআরডিও বিজ্ঞানীর চাকরি দিলেন?
একটি ভাইরাল অনুপ্রেরণামূলক বার্তায় প্রতাপ এন এম-এর জীবনকাহিনীতে কিঞ্চিৎ রঞ্জিতভাবে একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সোশাল মিডিয়ায় এখন একটি একটি ভাইরাল মেসেজ ঘুরছে। মেসেজটিতে বলা হয়েছে, ২১ বছর বয়সী ড্রোন বিজ্ঞানী প্রতাপকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনে বিজ্ঞানী হিসাবে নিয়োগ করেছেন।
বুম প্রতাপের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ডিআরডিও বিজ্ঞানী হিসাবে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে ডাক পাওয়ার কথাটি মিথ্যে। তা ছাড়া, প্রতাপের এখনও কোনও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেই। ডিআরডিওতে সবচেয়ে নিচুতলার বিজ্ঞানী হিসাবে যোগ দিতে গেলেও ন্যূনতম স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকাটা জরুরি।
টুইটার ব্যবহারকারী অমিত সিংহ রাজাওয়াত (@satya_AmitSingh) একটি থ্রেডে প্রতাপের একটি ছবি শেয়ার করেছেন সঙ্গে ক্যাপশন দিয়েছেন, "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিয়োগ করা ডিআরডিও বিজ্ঞানীর মজাদার গল্প। তিনি প্রতাপ, বয়স ২১। তিনি মাসের ২৮ দিন বিদেশে ঘুরে বেড়ান। ফ্রান্স তাঁকে তাদের সংস্থায় যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছে, সঙ্গে ১৬ লাখ টাকা বেতন, ৫ ঘরের বাড়ি এবং আড়াই কোটি টাকা দামের গাড়ি দেওয়ার কথা জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে উপযুক্ত পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেছেন এবং ডিআরডিওকে তাঁকে কাজে নিতে বলেছেন।"
থ্রেডের বাকি অংশে বলা হয়েছে প্রতাপের জীবন সংগ্রামের কথা, এবং কী ভাবে তিনি এক জন বিজ্ঞানী হয়ে উঠলেন, সেই গল্প। পুরো থ্রেডটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
এই একই থ্রেড ফেসবুকেও শেয়ার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: অ্যানিমেশন ভিডিও শেয়ার করে দাবি পুলে জিরাফদের শারীরিক কসরতের দৃশ্য
তথ্য যাচাই
আমরা "প্রতাপ ডিআরডিও বিজ্ঞানী" কিওয়ার্ড দিয়ে গুগলে সার্চ করি, এবং ডেকান হেরাল্ড-এর একটি প্রতিবেদনের সন্ধান পাই। সেই প্রতিবেদনে কর্ণাটকের মন্দ্যা নামে একটি গ্রাম থেকে উঠে আসা ২২ বছর বয়সী এক ড্রোন বিজ্ঞানীর কথা হলা হয়েছে। তিনি গত বছর অগস্টে কর্ণাটকে বন্যার সময় তাঁর ড্রোনটি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে তাদের উদ্ধারকার্যের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে দেন। এখন ভাইরাল হওয়া মেসেজটিতে যাঁর ছবি দেখা যাচ্ছে, সংবাদ প্রতিবেদনটিতেও সেই একই ব্যক্তির ছবি ছিল।
বুম প্রতাপের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি জানান, ভাইরাল হওয়া থ্রেডটিতে যে কথাগুলি বলা হয়েছে, তার বেশির ভাগই সত্যি। কিন্তু, তাঁকে ডিআরডিও-র বিজ্ঞানী হিসেবে চাকরি দেওয়ার কথাটি সত্যি নয়। প্রতাপ জানান, "আমি সদ্য দিল্লি থেকে এক জনের ফোন পেয়েছি। একটি প্রকল্পের ব্যাপারে আমাকে কয়েক জনের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি কী নিয়ে, আমি স্পষ্ট জানি না। আমার মনে হয় না প্রধানমন্ত্রী এ ভাবে সরাসরি কাউকে চাকরি দিতে পারেন বলে, এবং আমি তাঁর থেকে ডিআরডিও-র চাকরির কোনও নিয়োগপত্র পাইনি।"
প্রতাপ দাবি করেন যে মেসেজের বাকি কথাগুলি সত্যি। তিনি জানালেন, "আমি ফ্রান্স থেকে সত্যিই একটা অফার পেয়েছি। এই মেসেজটিতে সেই চাকরির যে মাইনে এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোও সত্যি। কিন্তু আমি সেই অফার প্রত্যাখ্যান করেছি, কারণ আমি বেঙ্গালুরুতে একটা গবেষণাগার তৈরি করতে চাই।" বুম নিরপেক্ষ ভাবে এই দাবিটির সত্যতা যাচাই করেনি। প্রতাপ বর্তমানে বেঙ্গালুরুকে এ্যারোহোয়েল স্পেস অ্যান্ড টেক নামে একটি স্টার্ট-আপে কর্মরত।
তা ছাড়াও, ভারত সরকারের রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ডঅ্যাসেসমেন্ট সেন্টার-এর তথ্য অনুসারে, ডিআরডিও-তে প্রাথমিক স্তরের বিজ্ঞানীর পদে যোগ দিতে হলেও বিজ্ঞান শাখার কোনও একটি বিষয়, গণিত বা মনস্তত্ত্বে মাস্টার্স ডিগ্রিতে প্রথম শ্রেণিতে পাশ করা আবশ্যক, অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনোলজি বা মেটালার্জিতে প্রথম শ্রেণির ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। এবং, সেই ডিগ্রি কোনও স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা সমতুল প্রতিষ্ঠানের হতে হবে।
প্রতাপ আমাদের ফোনে জানালেন যে তিনি এখনও স্নাতকোত্তর স্তরের ডিগ্রি পাননি। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করার পর সুযোগ পেলে তিনি কি ডিআরডিও-তে কাজ করতে চান? "হ্যাঁ, নিশ্চয়," জানালেন প্রতাপ।
বুম ডিআরডিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির থেকে উত্তর পেলে তা এই প্রতিবেদনের সঙ্গে যোগ করা হবে।
আরও পড়ুন: না, জিয়ানলি ইয়াং বলেননি গালওয়ানে শতাধিক চিনা সেনা নিহত হয়েছে