মিথ্যে: করোনাভাইরাস রুখতে ঘরে থাকলে ফ্রি ইন্টারনেট দেবে ভারত সরকার
বুম যাচাই করে দেখেছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে একটি বার্তা, সরকারের তরফে এই ধরণের কোনও অফার ঘোষণা করা হয়নি।
সোশাল মিডিয়ায় আবার ভাইরাল হলো বিনামূল্যে ইন্টারনেট ডেটা পরিসেবা দেওয়ার বার্তা। গত কয়েকদিন ধরে সোশাল মিডিয়ায় বিশেষ করে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভুয়ো বার্তা ভাইরাল হয়েছে, বাংলাতে লেখা এই বার্তাতে বলা হয়েছে- ভারত সরকার ১০ জিবি ইন্টারনেট ডেটা বিনামূল্যে দিচ্ছে যেন করে কেউ ঘর থেকে না বেরোয় এবং ৩০ জনকে শেয়ার করলেই ২ মিনিটের পাওয়া যাবে এই ফ্রি ডেটা।
করোনাভাইরাসের মোকবিলায় মঙ্গলবার রাত আটটায় জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া ভাষণে ২১ দিন লকডাউনের নির্দেশ দিলে এই ভুয়ো বার্তাগুলি আরও ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই বার্তাটিতে লেখা হয়েছে, ''করোনা ভাইরাসের কারণে কেউ ঘর থেকে যেন বাইরে না যায়, সে জন্য ভারত সরকার 10 GB ইন্টারনেট দিচ্ছে একদম ফ্রি। শুধুমাত্র এই মেসেজটি 30 জনকে শেয়ার করো ৷ 2 মিনিট পর ব্যালেন্স চেক করো ৷ প্রথমে আমি বিশ্বাস করি নি, আমার এক বন্ধু পেয়েছে। তারপর আমি শেয়ার করেছি, আমিও পেয়েছি৷''
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুকে একই বয়ানে ভাইরাল হয়েছে মেসেজগুলি।
ঠিক একই রকমভাবে ফেসবুকে বিনামূল্যে ১০০০ জিবি ইন্টারনেট ডেটা ফ্রি দেওয়ার কথা বলে ভুয়ো পোস্ট করা হয়েছে যা হোয়াটসঅ্যাপেও ছড়ানো হয়েছে। বার্তাটির বাংলা মানে করলে দাঁড়ায়, ''করোনাভাইরাসকে রুখতে আমরা আপনাকে ১০০০ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট পরিসেবা দিচ্ছি নিরাপদে ঘরের মধ্যে থাকার জন্য' এবং একে চালু করার জন্য একটি লিঙ্কে যেতে বলা হয়েছে।''
(মূল ইংরেজিত লেখা বার্তাটি: ''To Counter the Corona Virus we offer you 1000 GB of free internet connection to stay at home safely and enjoy the internet connection to stay at home safely and enjoy the internet Activate the internet package! http:/../internet'')
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন (+৯১ ৭৭০০৯০৬১১) নম্বর-এ তথ্য যাচাইয়ের জন্য বার্তাগুলি পাঠানো হয়েছিল।
বাংলাদেশেও এই একই বার্তা ভাইরাল হয়েছে, তা নিয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা আবার বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন।
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখেছে ইন্টারনেট ডেটা দেওয়ার খবরটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ভুয়ো।
এই তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বুম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে মেজসজটা ও মিথ্যে। ভারতের টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা- ট্রাই, ভারতের তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক দপ্তর, ভারতের গৃহমন্ত্রনালয় বা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর কোথাও এই ধরণের ঘোযণার কথা খুঁজে পায়নি বুম।
১০০০ জিবি ডেটা: ভুয়ো পুরনো লিঙ্ক
বুম আরও অনুসন্ধান চালায় এবং জানতে পারে একইরকম ফ্রি ইন্টারনেট ডেটা পাওয়া যাবে এই বয়ানে একই ভুয়ো দাবি গতবছরে অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুলাই-আগষ্টেও ভাইরাল হয়েছিল।
ভারতের কিছু কিছু নিউজ ওয়েবসাইটেও খবরটির প্রতিবেদন করা হয়েছিল যা পড়া যাবে এখানে ও এখানে।
হু ইন্ট (https://www.who.int/) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো লিঙ্কে https:// লেখা নেই। এই ধরণের ওয়েবসাইট অসুরক্ষিত, সাধারনত তথ্য হাতানোর কাজ করে।
আমেরিকার সাইবার সিকিউরিটি গবেষনা সংস্থা ইসেট'র একটি ব্লগপোস্টে এই ধরণের বার্তা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল। ইসেটের বিশেষজ্ঞদের মতে এরকম ভুয়ো মেসেজের উদ্দেশ্য থাকে ভুয়ো বিজ্ঞাপনের প্রচার, বা ম্যালওয়ার (ত্রুটিপূর্ণ পোগ্রাম) ঢুকিয়ে দেওয়া অথবা ব্যক্তিগত তথ্যকে হাতিয়ে নেওয়া।
ভারতের প্রধান প্রধান টেলিকম পরিসেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি লকডাউনের ফল ইন্টারনেটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন অফার চালু করেছে তবে সেখানে কোনও ভুয়ো লিঙ্কে ক্লিক করার কথা বলা হয়নি।
সমস্ত অনুসন্ধান থেকে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য সোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা এরকম ফ্রি ইন্টারনেট ডেটার প্রতিশ্রুতি মিথ্যে ও প্রতারণামূলক। এরকম মেসেজ থেকে সাবধান থাকার জন্য নেটিজেনদের অনুরোধ করা হচ্ছে।
সম্প্রতি, কোভিড-১৯ অতিমারির ত্রাস চীন থেকে ইউরোপ হয়ে ভারতে এসে প্রবেশ করেছে। এই মুহূর্তে ভারতে আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬০০ জনের বেশি।
আর ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথেই সোশাল মিডিয়ায়, বিশেষ করে ফেসবুক ও হোয়াটস্যপে বাড়ছে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত ভুয়ো তথ্য।
আরও পড়ুন: না, এটি ইতালিতে করোনাভাইরাসে পরিজন হারানোয় শোকে আত্মহত্যার ঘটনা নয়