মিথ্যে: চিনা গোয়েন্দা আধিকারিক জানিয়েছেন করোনাভাইরাস একটি জৈব অস্ত্র
এই দাবিটির উৎস 'আর/নোস্লিপ' নামের একটি রেডিট ফোরাম। সেটি ভয়ের গল্প ছড়িয়ে থাকে।
সোশাল মিডিয়ায় একটি ব্লগপোস্ট দাবি করা হয়েছে যে, উহানের প্রাণী বাজারের কাছে এক ধরনের জৈব অস্ত্র অসাবধানতায় ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই করোনাভাইরাসের গল্পটি সাজানো হয়।
লেখাটির নাম, 'করোনা রহস্য উদঘাটন: চিনা গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফাঁস করে দিলেন চিনের ভুয়ো করোনাভাইরাস সঙ্কটের বিস্তার'। বুম দেখে লেখাটি কাল্পনিক এবং তার উৎস 'আর/নোস্লিপ' নামের একটি রেডিট ফোরাম। এই ফোরাম ব্যবহারকারীরা ভয়ের গল্প শেয়ার করে থাকে। সেগুলির অনেকই আবার আসল কোনও ঘটনার ওপর ভিত্তি করে লেখা।
লেখাটির সত্যতা যাচাই করে দেখার জন্য বুমের পাঠকরা সেটিকে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে পাঠান। লেখাটির আর্কাইভ সংস্করণ দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
লিঙ্কটা ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্বের ব্লগ 'ইউফোস্পটলাইট'-এর একটিলেখা আমাদের সামনে আনে। পড়ে মনে হবে লেখাটি কোনও এক চিনা গোয়েন্দা কর্তার লেখা, যিনি বর্তমান করোনাভাইরাসের উৎস উদঘাটন করেছেন বলে দাবি করছেন। ওয়ার্ডপ্রেস একাউন্টে প্রকাশিত লেখাটিতে বলা হয়েছে যে, নতুন করোনাভাইরাসটি কোনও ভাইরাসই নয়, বরং একটি জৈব অস্ত্র। এক চিনা বিশ্বাসঘাতক সেটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করার সময় সেটি তার পাত্র থেকে লিক করে বেরিয়ে যায়।
লেখাটির একটি অংশ দেওয়া হল নীচে।
২০১৯-এনকরোনাভাইরাস—যার অপর নাম এনসিপি বা কেবল 'করোনাভাইরাস'—সেটির সাম্প্রতিক সংক্রমণ সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই জেনেছেন। আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন যে, চিনের শিল্পনগরী উহানে এর উৎপত্তি। এবং সেখানকার জীবজন্তু বিক্রির বাজারে সম্ভবত বাদুড় বা প্যাঙ্গলিন থেকে ভাইরাসটি ছড়ায়। আপনাদের হয়ত এও বলা হয়েছে যে, ইনফ্লুয়েঞ্জা মতোই একটি অসুখ এটি, যার প্রকোপ বেশি হলে সেটি নিউমোনিয়া ও নিশ্বাসের কষ্ট সৃষ্টি করে, যার ফলে মারাও যেতে পারে মানুষ।
এবং পরিশেষে আপনারা হয়ত এও জেনেছেন যে, অসুখটি কেবল বয়স্ক মানুষ ও যাঁদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাঁদের ক্ষেত্রেই মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। সরকারিভাবে যে মৃত্যুহার দেখানো হচ্ছে তা হল ২ শতাংশ বা তার একটু কম বেশি।
কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় তার বন্ধুদের গোপন সমর্থনে চিন ওই মিধ্যে গল্প দাঁড় করিয়েছে। এবং ওই সব দেশের অনুগত সংবাদ মাধ্যমগুলি সেই গল্প প্রচার করেছে।
লেখাটির বাকি অংশ জুড়ে আছে এক চিনা গবেষকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ওই মারাত্মক জৈব অস্ত্র বিক্রি করার প্রয়াস ভেস্তে যাওয়ার কথা। ওই জৈব অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্য ছিল হংকংয়ের প্রতিবাদ ঠাণ্ডা করা। ওই লেখায় আরও বলা হয়েছে যে, চিনা কর্তৃপক্ষ ওই হস্তান্তর রুখতে গেলে, উহানের বন্যপ্রাণীর বাজারের কাছে ওই জৈব বস্তুটি লিক করে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: রুশদের ঘরে আটকাতে পুতিন কি রাস্তায় সিংহ ছেড়েছেন? উদ্ভট দাবি ভাইরাল হল
তথ্য যাচাই
বুম দেখে গল্পটির সঙ্গে বাস্তবের কোনও সম্পর্ক নেই। এবং তার উৎস হল রেডিটের একটি গ্রুপ, আর/নোস্লিপ। রেডিটের এই গ্রুপটি আসল ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভয়ের গল্প শেয়ার করে থাকে। 'উহানভাইরাসথ্রোআওয়ে' নামে ওই গ্রুপের একজন ব্যবহারকারী রেডিট ফোরামে ওই গল্পটি প্রকাশ করেন।
আর/নোস্লিপ-এর নীতিমালায় বলা আছে সব লেখার প্লটই কাল্পনিক এবং কোনও তথ্যই সত্য নয়। ওই ফোরামের নীতিমালা নীচে দেওয়া হল।
- পাঠকদের ধরে নিতে হবে যা লেখা হয়েছে তা সত্যি এবং তারই ভিত্তিতে মন্তব্য করতে হবে।
- খণ্ডন, সংশয় প্রকাশ, বা সমালোচনা (ইতিবাচক বা অন্য রকম)করা চলবে না।
- প্রমাণ চাওয়া চলবে না।
- একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
- মন্তব্য এমন হতে হবে যাতে তা আলোচনাকে সমৃদ্ধ করে।
- এই নির্দিশিকা লঙ্ঘন করে, সে রকম মন্তব্য সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে।
তাছাড়া ওই ফোরামের 'ফ্রিকোয়েন্টলি আস্কড কোয়েশ্চেনস' (এফএকিউ) বিভাগে বলা হয়েছে যে, ফোরামের প্রকাশিত গল্পগুলিকে সত্য বলে ধরে নেওয়া চলবে না। "এখানকার গল্পগুলি কি সত্যি? সম্ভবত নয়। কিন্তু আপনি যতক্ষণ আর/নোস্লিপ-এ আছেন, ততক্ষণ সবই সত্যি। আর/নোস্লিপের বাইরে গল্পগুলি বাস্তব হতেও পারে আবার কাল্পনিকও। কিন্তু আর/নোস্লিপ-এ থাকাকালে সব কিছুকে সত্য ঘটনার বিবরণ বলে গণ্য করতে হবে," বলা হয়েছে এফএকিউ-তে।
আর/নোস্লিপ-এর গল্পগুলি বাস্তবকে অতিরঞ্জিত করে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। তাই রেডিট ফোরামের বৈশিষ্ট্য না জেনে কেউ যদি সেগুলিকে ঘটনার সত্য বিবরণ বলে শেয়ার করেন, তা হলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
এই লেখাটি এর আগে 'স্নোপস' যাচাই করেছিল।
আরও পড়ুন: না, এটি ইতালিতে করোনাভাইরাসে পরিজন হারানোয় শোকে আত্মহত্যার ঘটনা নয়