মিথ্যে: 'এক পরিবার এক চাকরি' প্রকল্প ঘোষণা করলো কেন্দ্র সরকার
বুম দেখে কেন্দ্র সরকার 'এক পরিবার এক চাকরি' নামে কোনও প্রকল্প ঘোষণা করেনি, তবে সিকিমে এই রকম একটি প্রকল্প চালু আছে ২০১৯ সাল থেকে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে 'এক পরিবার এক চাকরি প্রকল্প' নামে একটি কর্মসংস্থান প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে বলে একটি বিভ্রান্তিকর ইউটিউব ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রীর নামও ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে লকডাউনের ফলে যাদের কাজ হারাচ্ছেন ও আসন্ন আর্থিক সংকটের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রের সরকার এই প্রকল্প ঘোষণা করেছে।
ফেসবুক পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। ফেসবুক পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ওই ফেসবুক পোস্টে ৭মিনিট ৩২ সেকেন্ডের একটি ইউটিউব ভিডিওর লিঙ্ক শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটি ২৬ এপ্রিল ২০২০ 'সরকারি চাকরির প্রস্তুতি' (Sarkari Chakrir Prostuti) নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল আপলোড করা হয়। ভিডিওটিতে এক ব্যক্তিকে একটি কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির প্রকল্পের নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। ইউটিউবে ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা আছে: "এক পরিবার এক চাকরি প্রকল্প ২০২০। পরিবারে একজন পাবেন সরকারি চাকরি। অনলাইনে আবেদন। যোগ্যতা, বেতন?" (সঙ্গে হ্যাশট্যাগ লেখা আছে: #EkParibarEkChakriPrakalpa, #1Family1Job, #SarkariChakrirP)
ভিডিওর বক্তব্যের সারাংশ
ভিডিওটিতে দাবি করা হয়, কেন্দ্রীয় সকরারের 'এক পরিবার এক চাকরি যোজনা" প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে লকডাউন পরবর্তী আর্থিক সংকটের কথা মাথায় রেখে বেকারত্বের সুরাহা করা। ভিডিওটিতে ২৫ এপ্রিল ২০২০ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন-এর ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়। যেখানে শিক্ষাগত মান, কর্মক্ষেত্রের স্থান প্রভৃতির উল্লেখ করা হয়।
নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বলা হয় অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ, তবে উচ্চশিক্ষিতরাও আবেদন করতে পারেন। অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হলেও পরে নাকি স্থায়ীকরণের সুযোগ থাকবে।যে সব কর্মপ্রার্থীদের বাড়িতে পরিবারের কোনও সদস্য সরকারি চাকরি করেননি বা করেনা তারা শুধুমাত্র এই সুযোগ পাবে। অনলাইনে আবেদন করা যাবে। তবে পশ্চিমবঙ্গে কবে শুরু হবে এই ব্যাপারে ওই ভিডিওটিতে বলা হয়, এটি কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প। শীঘ্রই চালু হবে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতে। এবং কোন ওয়েবাসাইটে আবেদন করা যাবে তাও নাকি জানানো হবে ওই ইউটিউব চ্যানেলে। বর্তমানে নাকি শুধু শিকিমে চালু হয়েছে এই প্রকল্প। হিন্দিতে এই কর্ম সংস্থান প্রকল্পের নাম, "এক পরিবার এক নকরি যোজনা।"
ইতিমধ্যে, প্রায় সাড়ে ৪২ লক্ষের বেশি ব্যক্তি এই ভিডিওটি দেখেছেন। ভিডিওটি নীচে দেখুন।
ক্যাপশন সার্চ করে ইউটিউবে একইরকম বিভ্রান্তিকর দাবি সহ অনেকগুলি ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়।
ফেসবুকেও ক্যাপশন দিয়ে সার্চ করে একই রকম বিভ্রান্তিকর কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি প্রকল্পের পোস্ট দেখতে পায় বুম।
হেসট্যাগ এক পরিবার এক নকরি লিখে ইন্টারনেটে সার্চ করেও বুম কিছু ভুঁইফোড় হিন্দি ওয়েবসাইটে একই রকম কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি দেখতে পায়।
বুম গুগুলে সার্চ করে এই প্রকল্প নিয়ে ২৭ এপ্রিল প্রকাশিত একটি বাংলা প্রতিবেদনেরও হদিস পায়। প্রতিবেদটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: আরএসএস-এর পোশাকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের ছবিটি সম্পাদিত
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল ভিডিওতে বলা 'এক পরিবার এক চাকরি' কর্মসংস্থান প্রকল্প নিয়ে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করে জানতে পারে এই ধরণের কোনও প্রকল্প ঘোষণা করেনি ভারত সরকার।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী সন্তোষ কুমার গাঙয়ার, মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল ও প্রধানমন্ত্রীর কোনও দপ্তর থেকে কোনও বিজ্ঞপ্তি ও ঘোষণা খুঁজে পায়নি বুম। 'এক পরিবার এক চাকরি' যোজনা নিয়ে কোনও বিশ্বসযোগ্য সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনও বুমের নজরে আসেনি।
বুম দেখে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের অঙ্গরাজ্য সিকিমে "এক পরিবার এক চাকরি" নামে একটি সরকারি কর্মসংস্থান প্রকল্প চালু করা হয়। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন কুমার চামলিং এই প্রকল্পের সূচনা করেন। প্রকল্পের অধীন পালজোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত "কর্ম সংস্থান মেলা"-তে ১২,০০০ বেকারকে তৎক্ষনাৎ নিয়োগ পত্র তুলে দেওয়া হয়। এই বিষয়ে এনডিটিভি এবং ইন্ডিয়াটুডে'র প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে ও এখানে।
শিক্ষিত বেকারদের "রাষ্ট্রীয় শিক্ষিত বেরোজগার" যোজনার অধীন ৫০,০০০ টাকা ভাতা দেওয়া হবে বলে আরেকটি ভুয়ো খবর সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এ ব্যাপারে বুমের প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে। পিআইবি ফ্যাক্টচেক গুজবটিকে টুইট করে নস্যাৎ করেছে।
Claim: Govt has started a scheme named Rashtriya Sikshit Berojgar Yojana to provide relief package of Rs 50000 to all ration card holders#PIBFactCheck: No such scheme has been launched by Govt of India. Beware of such fake and fraudulent sites collecting your personal info/fees pic.twitter.com/RTawkuzmDK
— PIB Fact Check (@PIBFactCheck) May 2, 2020