মিথ্যা: নদীয়ার কল্যাণীতে এক রোগীর দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে
বুম জেএনএম হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডাক্তার অভিজিত মুখার্জির সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টিকে ভুয়ো গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর খবর ক্যালকাটা নিউজের এর সংবাদ-বুলেটিনে প্রকাশিত হয়েছে; যার স্ক্রিনশট সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে প্রচার করা হচ্ছে যে, ওই রোগীর দেহে সত্যি-সত্যিই করোনাভাইরাসের জীবাণু মিলেছে।
স্ক্রিনগ্র্যাবটির ক্যাপশন হলো: "করোনা সন্দেহে নদীয়ার জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি মহিলা"
বুম জেএনএম হাসাপাতালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডাক্তার অভিজিত মুখার্জির সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টিকে ভুয়ো গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, সৌম্যদীপ নন্দী নামে নিজের পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি ফেসবুকে একটি ভিডিও ছেড়ে কল্যাণীর উপকণ্ঠে (কাঁচরাপাড়া, ব্যারাকপুর, মদনপুর) বসবাসকারী লোকেদের সতর্ক করার নামে প্রচার করছে যে, ওই মহিলাটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং ওঁর শরীরে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছে।
প্রচারিত ভিডিওটিতে সোম্যদীপকে বলতে শোনা যাচ্ছে: "কল্যাণীতে কিন্তু করোনাভাইরাস পজিটিভ, একজন রোগী পাওয়া গেছে। এবং কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে আজ এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পজিটিভ জীবাণু মিলেছে।"
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি নীচে দেখুন:
ভিডিওটি ইউটিউবে ভাইরাল হয়েছে একই ক্যাপশানের সাথে।
ভারতে এখন পর্যন্ত ১৬৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাসের সতর্কতায় রাজ্যে বন্ধ থাকবে ইন্টারনেট খবরটি ভুয়ো
তথ্য যাচাই
বুম জেএনএম হাসপাতালের সুপার অভিজিত্ মুখার্জিকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এই হাসপাতালে কোনও করোনাভাইরাস পজিটিভ রোগী নেই। এখনও পর্যন্ত একজন রোগীকেই পরীক্ষা করে দেখা গেছে এবং তার শরীরে ওই জীবাণু নেইl
তিনি বলেন, "১৭ মার্চ রাত ১১টায় সর্দি-কাশি ও ঠাণ্ডা লাগার উপসর্গ নিয়ে এক মহিলা জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি হনl উনি কল্যাণীর চাকদা এলাকা থেকে এসেছিলেনl যেহেতু তখন অনেক রাত হয়ে গেছে, তাই আমরা ওই রোগীকে হাসপাতালে রেখে দেবার সিদ্ধান্ত নিইl আমরা ওঁকে আরও একটা দিন আইসোলেশন ওয়ার্ডে পর্যবেক্ষণে রাখতে মনস্থ করিl উনি কোন-কোন দেশে ঘুরেছেন, সে বিষয়েও আমরা জানতে চাই এবং জানতে পারি যে ওঁর এক বন্ধু ডাক্তারি পড়তে চিনে গিয়েছিল। সে ৪ জানুয়ারি চিন থেকে ফিরে এসেছেl প্রায় দু সপ্তাহ আগে বন্ধুটির সঙ্গে ওঁর যোগাযোগও হয়েছিল, তারপর থেকেই ওঁর শরীরটা কেমন করতে থাকেl আর এই সব শুনেই আমরা তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিইl পর দিন, ১৮ মার্চ তাঁর শরীরে আবার তেমন কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায়নিl তবু একদল চিকিৎসক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাঁকে পরীক্ষা করে দেখেন এবং তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের কোনও সংক্রমণ না মেলায় ১৮ তারিখেই বিকেলে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছেl"
অতএব, কল্যাণীতে করোনাভাইরাসে এখনও পর্যন্ত কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হননি।
এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কোভিড-১৯ ধরা পরেছে একজনের শরীরে। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন। সরকারী আমলা-পুত্র ওই রোগী সাবধনতা অবলম্বন না করায় রাজ্যে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই রোগীর সংস্পর্শে আসা মা-বাবা ও ড্রাইভারকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। গতকালের নাইসেডের পরীক্ষায় জানা গেছে তাদের দেহে কোভিড-১৯ ধরা পড়েনি। বিমানবন্দরে ওই রোগীর সংস্পর্শে আসা দুই অভিবাসন দপ্তরের আধিকারিককে আজ বাড়িতে আলাদা থাকার নির্দেশ দেওযা হয়েছে।
আর, তারপর থেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার গুজব ছড়াতে থাকে, যেমনটি ঘটেছে কল্যাণীতে।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ সংক্রামিত সন্দেহে চিনে রোগীদের উপর পুলিশি দমননীতির ভিডিওটি ভুয়ো