কোভিড-১৯ সংক্রামিত সন্দেহে চিনে রোগীদের উপর পুলিশি দমননীতির ভিডিওটি ভুয়ো
বুম দেখে ভিডিওটি ২০১৯'র অগস্টে হংকংয়ের রাজনৈতিক প্রতিবাদ দমনের দৃশ্য, যার সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনও সম্পর্কই নেই।
হংকং-এর একটি পুরনো ভিডিও, যাতে দেখা যাচ্ছে, দাঙ্গা-দমনকারী পুলিশ শহরের একটি মেট্রো স্টেশনে ঝড়ের মতো ঢুকে প্রতিবাদীদের উপর দমননীতি প্রয়োগ করছে, সেটিকে শেয়ার করে ভুল ভাবে দাবি করা হচ্ছে যে, চিনা পুলিশ সন্দেহভাজন করোনাভাইরাস আক্রান্তদের এইভাবে দমন করছে।
৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের এই ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ মেট্রো স্টেশনের ট্রেনের কামরায় ঢুকে লাঠি চার্জ করছে এবং গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়াচ্ছে। দৃশ্যটিতে অনেক ট্রেনযাত্রীর সঙ্গেই ছাতা দেখা যাচ্ছে, যা গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনকারী হংকং-বাসীদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
ভিডিওটির ক্যাপশন অনুবাদ করলে দাঁড়ায়: "আপনারা এখানে বসে হোয়াটসঅ্যাপ আর ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করছেন! করোনাভাইরাস চিনে কী সমূহ তাণ্ডব চালাচ্ছে, সেটা প্রত্যক্ষ করতে এই ভিডিওটি দেখুন। একবার নয়, দুবার নয়, মন দিয়ে অন্তত তিন-তিনবার দেখুন! মহামারীতে আক্রান্ত এই মানুষগুলির অবস্থা দেখুন! আক্রান্তদের পাকড়াও করতে পুলিশ প্রশাসনকে সেখানে কী ঝামেলাতেই না পড়তে হচ্ছে! এটা দেখলে আপনার হৃদয় স্তব্ধ হয়ে যাবে!"
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
(মূল হিন্দিতে পোস্ট: हम यहां बैठकर.. व्हाट्सएप और फेसबुक पर.. *कोरोना वायरस* का मजाक उड़ाने में लगे हुए हैं अगर.. कोरोना का असली कहर देखना है तो.. चाइना से आई इस वीडियो को देखें . एक बार नहीं , दो बार नहीं , 3 बार बड़े ध्यान से देखें. कि इस महामारी के शिकंजे में फंसे हुए लोगों को.. पकड़ने के लिए.. वहां पुलिस प्रशासन को कितनी दिक्कतें झेलनी पड़ रही हैं .आपका दिल भी दहल उठेगा इस वीडियो को देखकर.)
টুইটারে ভাইরাল
আমরা টুইটারে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, একই একই বিভ্রান্তিকর ক্যাপশন দিয়ে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।
👆👆हम यहां बैठकर.. व्हाट्सएप और फेसबुक पर.. *कोरोना वायरस* का मजाक उड़ाने में लगे हुए हैं 🤔
— राज शर्मा कानपुर (@RajShar41438261) March 16, 2020
अगर.. कोरोना का असली कहर देखना है तो.. चाइना से आई इस वीडियो को देखें
एक बार नहीं , दो बार नहीं , 3 बार बड़े ध्यान से देखें कि इस महामारी के शिकंजे में फंसे हुए लोगों को..! pic.twitter.com/fwixqasj7Q
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
हम यहां बैठकर.. व्हाट्सएप और फेसबुक पर.. *कोरोना वायरस* का मजाक उड़ाने में लगे हुए हैं 🤔
— 100% Follow back (@SufiyanYusuf12) March 15, 2020
अगर.. कोरोना का असली कहर देखना है तो.. चाइना से आई इस वीडियो को देखें
वहां पुलिस प्रशासन को कितनी दिक्कतें झेलनी पड़ रही हैं 👇👇 आपका दिल भी दहल उठेगा इस वीडियो को देखकर#SAARCfightsCorona pic.twitter.com/cBkEEgaCM4
টইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: না, রোনাল্ডোর হোটেলগুলো করোনাভাইরাসের রুগিদের হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়নি
তথ্য যাচাই
আমরা ভিডিওটিকে মূল কয়েকটি ফ্রেমে ভেঙে নিয়ে রুশ সার্চ ইঞ্জিন ইয়ানডেক্স মারফত সন্ধান করে দেখি, এটি ২০১৯ সালের ৩১ অগস্টের একটি ঘটনার দৃশ্য, যখন হঙকঙ পুলিশ মঙ কক এবং প্রিন্স এডোয়ার্ড এমটিআর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের গ্রেফতার করে। অর্থাৎ ডিসেম্বরে চিনে করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের খবর প্রকাশিত হওয়ার অন্তত ৩ মাস আগের ঘটনা এটি।
হঙকঙের একটি সংবাদ ওয়েবসাইট হংকং ফ্রি প্রেস(এইচকেএফপি)-এর আপলোড করা ভিডিওতেও একই দৃশ্যের দেখা মেলে।
২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর এইচকেএফপি রিপোর্ট করে, আগের রাতে, ৩১ অগস্ট আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে উঠলে জন-পরিষেবা রেলের (এমটিআর) ৫টি লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং পুলিশ অন্তত ২ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে।
BREAKING: At 11:20pm, the MTR announced the closures of the entirety of the Tsuen Wan and Kwun Tong lines due to police operations.
— Hong Kong Free Press (@HongKongFP) August 31, 2019
In full: https://t.co/kmLJLFCnSX. Photo: @mtrupdate. #hongkong #hongkongprotests #antiELAB pic.twitter.com/3S5ygwghed
ভাইরাল হওয়া ফুটেজটি ট্রেনের কামরার ভিতরের দৃশ্য, যখন পুলিশ প্রিন্স এডোয়ার্ড স্টেশনে আন্দোলনকারীদের উপর চড়াও হয়।
হংকং সরকার সে সময় জানিয়েছিল যে, আন্দোলনকারীরা স্টেশন চত্বর ভাঙচুর করছিল এবং তাণ্ডব চালাচ্ছিল এবং সরকারি আধিকারিকদের আক্রমণ করছিলl তাদের সংযত করতে এবং দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতেই পুলিশকে বাধ্য হয়ে ব্যবস্থা নিতে হয়।
৩১ অগস্ট ২০১৯ আবার ছিল সেই দিনটির পঞ্চম বার্ষিকী, যেদিন চিন সরকার হংকং-এর মুখ্য প্রশাসক নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল। যে শ্বেতপত্রের প্রতিবাদে ২০১৪ সালে হংকং জুড়ে ৭৯ দিন ব্যাপী অবরোধ ও দখলের আন্দোলন চালায় গণতন্ত্রপ্রেমীরা। "ছাতা আন্দোলন" নামে পরিচিত সেই প্রতিবাদ শেষ পর্যন্ত সফল হয়, যখন হংকং-এর জনপ্রতিনিধিরাও চিনা সরকারের সেই সব বিধিনিষেধ প্রত্যাখ্যান করেন।
একই দৃশ্য ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ইউটিউবে বিবিসি-র আপলোড ক
রা একটি ভিডিওতেও দেখা যাবে।
২০২০ সালের ১৮ মার্চ পর্যন্ত ভারতেও ১২২ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ভুয়ো বিবরণী দিয়ে চিনের করোনাভাইরাস মোকাবিলার ভুয়ো ভিডিওটি ভাইরাল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: এই বইগুলি কি করোনাভাইরাসের প্রকোপের ব্যাপারে ভবিষ্যৎ বাণী করেছিল?