মাছে মরফিন ভাইরাস? আবার ফিরলো পুরনো গুজব
২০১৮ সালে এরকম গুজব ছড়ানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডি দপ্তর ৪ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। মাছের পিসে ওই জীব নিতান্ত পরজীবি।
ফেসবুক ভাইরাল হওয়া পোস্টে দাবি করা হয়েছে বিষ্ণুপুরে-এ মরফিন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ হাতপাতালে ভর্তি হয়েছে। সঙ্গে এক কেজির বেশি মাছ খেতে নিষেধ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা জন স্বার্থে নাকি এই বার্তা প্রচার করা হচ্ছে।
এই পোস্টের সঙ্গে একটি ভিডিও যোগ করা হয়েছে। ২ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে ছুরির শীর্ষভাগ দিয়ে মাছের ফিলে থেকে লালচে কেঁচো জাতীয় প্রাণীদের বের করা হচ্ছে। সঙ্গে হিন্দিতে এক ব্যক্তি বলছেন বান মাছের দেহ থেকে পাওয়া যাচ্ছে এগুলি। ফ্রিজের রাখা মাছ বাইরে নিয়ে এলে এই জীবগুলি বেরতে দেখা যায়।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে একই রকম মরফিন ভাইরাসের গুজব ছড়ানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডি দপ্তর ৪ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে।
ভাইরাল হওয়া পোস্টটিতে লেখা হয়েছে, ''বিষ্ণুপুরে এ মরফিন ভাইরাস পোঁছে গেছে ৷ এখন পর্যন্ত অনেক মানুষকে বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৷ Dr.ডেভিস দিসুজা বলেছেন এই রোগটি বিষ্ণুপুরে এ এলো বিষ্ণুপুর লোকাল বাঁধ এর মাছ এর মাধ্যমে ৷ তিনি এও বলেছেন যদি এটা এইভাবেই চলতে থাকে তবে অতিশিঘ্রই লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ মারাযাবে এক সপ্তাহের মধ্যে৷ তাই সবাইকে জানানো যাচ্ছে যে আপনারা কেউ এক কেজির উর্ধে মাছ বর্তমানে এক মাস পর্যন্ত খাবেন না এবং বাচ্চাদেরকে এর থেকে দূরে রাখবেন ৷ পুকুর এ প্রচুর পরিমাণে মুরগি সার ব্যবহার করার জন্য এই রোগটি বেশি ছড়াচ্ছে , এই রোগটি বিশেষ করে কিডনিকে নষ্ট করে দিচ্ছে । দুর্গাপুর এর Dr. অসীম কুম্ভকার নিজেও এই রোগের শিকার হয়েছেন ৷ এই রোগের কোনো ওষুধ বার হয়নি তাই এই রোগকে সারানো বর্তমানে অসম্ভব ৷ Dr. ডিসুজা বলেছেন এই রোগে কিডনি ব্যপক ভাবে খতিগ্রস্ত হচ্ছে যার ফলে মানুষটি মারা যাচ্ছে৷ দয়াকরে খবরটি অন্য সবাইকে জানান in PLEASE FORWARD THIS MSG পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা জন স্বার্থে প্রচারিত।''
একই বয়ানে ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
মাছের পরজীবি
বুম খুঁজে দেখেছে এই ভিডিওটি ইউটিউব ও রেডইটে রয়েছে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে। ''বিষ্ণুপুরে এ মরফিন ভাইরাস পোঁছে গেছে ৷ এখন পর্যন্ত অনেক মানুষকে বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা'' এই শিরোনামে ওই ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছিল ২৫ নভেম্বর ২০১৯।
এই ধরণের পরজীবি মাছে থাকা খুবই সাধরণ ঘটনা। নিমোটোড বর্গের বিভিন্ন পরজীবি বাসা বাঁধে মাছের দেহে। এগুলি মানব শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নয়।
বুম পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ডঃ তপস কুমার ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, ''পশ্চিমবঙ্গের পুকুরের মাছের ক্ষেত্রে এই ধরণের মাছের মাংস ভেদ করে বেরনো নিমাটোডের খবর তাঁরা পাননি। তবে মাছের অন্ত্রে নিমাটোড থাকা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। মাছ চাষ করা পুকুরের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত। মাত্রাতিরিক্ত পোল্ট্রি সার বা মুরগির ছাঁট মাছ চাষযোগ্য পুকুরের ক্ষতিসাধন করে।''
বুমের তরফে তামিল নাড়ুর ডঃ জয়ললীতা মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পুন্নেরিতে অবস্থিত একটি মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের প্যথলজি ও হেলথ্ ম্যানেজমেন্ট এক গবেষক-অধ্যাপিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অধ্যাপিকা আমাদের জানান, ''শুধু সামু্দ্রিক মাছ নয়। দেশীয় মিষ্টি পুকুরের জলের মাছেও এই ধরণের নিমাডোটস/পরজীবি বাসা বাঁধতে পারে। এগুলি মানবশরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক না হলেও মাছের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।''
''আমি আবাক হচ্ছি মানুষজন কেন একে ভাইরাস বলে গুজব ছড়াচ্ছে, ভাইরাস তো অত্যাধুনিক অনুবীক্ষন যন্ত্র ছাড়া দেখায় যায়না।'' তিনি আরও বলেন।
''ফিশ ওয়ার্ম'' ও ''ইয়ালো টেল'' লিখে ইউটিউবে সার্চ করলে এই ধরণের পরজীবি বের করার ভিডিও ইউটিউবে দেখা যায়। ফিলমেটরোয়েডস সিরিওলি (Philometroides seriolae) নামে একই ধরণের একটি পরজীবি নিমাটোডের ছবি দেখা যাবে এখানে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মরফিন ভাইরাস নিয়ে একই বয়ানের ভুয়ো মেসেজ ছড়ানোর জন্য ''বনগাঁ লোকাল'' নামে একটি ফেসবুক গ্রুপকে চিহ্নিত করা হয়। উত্তর ২৪ পরগণার বনগাঁ মহাকুমা থেকে ওই গ্রুপের অ্যডমিন তিনজনকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিসের গোয়েন্দা দপ্তর। পরে আরও একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
চিনের উহানে প্রাদুর্ভাব হওয়া করোনাভাইরাসে এপর্যন্ত মৃত ১,১১৭ জন। ধারণা করা হচ্ছে সামুদ্রিক খাদ্যের বাজার থেকে ছড়িয়ে মারণরোগের ভাইরাস করোনা।
আরও পড়ুন: ক্যাপসিকামের ভেতরে সাদা রঙের এটা কি সরু-ছোট-বিষধর সাপ?