ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতির কান্নার ছবিকে করোনাভাইরাস-বিধ্বস্ত ইতালির রাষ্ট্রপতি বলে চালানো হল
ভাইরাল হওয়া ছবিতে ব্রাজিলের প্রেসেডেন্ট জাইর বোলসনারোকে দেখা যাচ্ছে, যিনি গত ডিসেম্বরে একটি দুর্ঘটনার কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
ব্রাসিলিয়ায় এক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসনারোর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার ছবি মিথ্যে দাবির সঙ্গে নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ছবিটিকে ইতালির প্রেসিডেন্টের বলে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে। ইতালিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতি চিনের থেকেও ভয়াবহ।
ভাইরাল হওয়া এই ছবিতে ইতালির এই নেতার একটি ভুয়ো উদ্ধৃতিও দেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃতিটিতে মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর ইতালির ভয়াবহ অবস্থা এবং সেখানকার স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর বিপুল চাপের কথা বলা হয়েছে।
এ রকম একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, "ইতালির প্রধানমন্ত্রী গিউসেপ কোন্তে, "আমরা পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি। আমরা এই মহামারিকে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে মেরে ফেলেছি। বুঝতে পারছি না আমরা আর কী করতে পারি, আমাদের সমস্ত সমাধান কার্যক্ষেত্রে ব্যর্থ। আমাদের একমাত্র আশা আকাশ থেকে ঈশ্বর তাঁর মানুষদের রক্ষা করবেন।"
নীচে এ রকম একটি পোস্ট দেওয়া হল।
একই বক্তব্যের সঙ্গে ছবিটি মিমস র্যাডার নামের একটি মিম পেজেও দেওয়া হয়েছে। পোস্টটির স্ক্রিনশট এখন হোয়্যাটসঅ্যাপে ভাইরাল হয়েছে। পরে এই পেজের অ্যাডমিন কমেন্টে লেখেন যে এই ছবিটি ইতালির প্রেসিডেন্ট ছবি নয়। এটা খুব পরিষ্কার নয় যে ছবিটি প্রথমে মিম হিসাবে তৈরি হয়েছিল কি না। তবে বুম এ রকম বহু ফেসবুক পেজের খোঁজ পেয়েছে যেখানে নেটিজেনরা ছবিটিকে সত্যি ভেবেছেন।
ইতালিকে বর্তমানে কোভিড-১৯-এর নতুন এপিসেন্টার বা কেন্দ্রস্থল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতালিতে এখন পর্যন্ত ৪৮২৫ জন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং ৫৩,৫৭৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন। কোনও একটি দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার নিরিখে এটিই দুনিয়ায় সর্বাধিক। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর ইতালিতে দশ দিন ধরে লকডাউন চলছে।
আরও পড়ুন: কন্টাজিয়ন সিনেমার দৃশ্যকে ইতালিতে করোনাভাইরাসে মৃতদের গণকবর বলা হল
তথ্য যাচাই
বুম নিশ্চিত ভাবে জেনেছে যে ক্রন্দনরত এই নেতার ছবিটি গিউসেপ কন্তের নয়, বরং জাইর বলসনারোর। আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চ চালাই এবং দেখতে পাই যে বলসনারোর এই ছবিটি তোলা হয় গত বছর ডিসেম্বর মাসে, এভাঞ্জেলিক্যাল ওরশিপের সময় যখন তিনি ভেঙ্গে পড়েন। মার্চের শুরুতে যখন অনেকগুলি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয় যে জাইর বলসনারো্র নভেল করোনাভাইরাস টেস্ট পজিটিভ এসেছে, তখন তিনি জানান যে তাঁর টেস্টে আসলে নেগাটিভ এসেছে। (আরও পড়ুন এখানে)
বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ সালে প্লানাল্টো প্রাসাদে একটি এভাঞ্জেলিক্যাল কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং সেখানে একটি দুর্ঘটনার কথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। একটি ব্রাজিলিয়ান সংবাদসংস্থা পডার ৩৬০ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, "হল ভর্তি আধিকারিক এবং বিশ্বাসীদের সামনে ২০১৮ সালে নির্বাচনী প্রচারের সময় জুইজ দি ফুরায় (এম জি) তাঁর উপর হওয়া ছুরিকাঘাতের কথা স্মরণ করে প্রেসিডেন্ট কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন"। পডার ৩৬০ নামের সংবাদ সংস্থাটির হয়ে সার্জিও লিমা এই ছবিটি তোলেন।
আমরা সে তিনটি পেজও খুঁজে বার করি যেখান থেকে এই ভুয়ো তথ্যটি ছড়িয়ে পড়ে। এটি প্রথম দেখা যায় ২১ মার্চ এবং তারপর এটি ভাইরাল হয়ে যায়। এখানে এবং এখানে ক্লিক করুন।
করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ এবং বিপুল প্রাণহানির ফলে ইতালির নেতারা কি হাল ছেড়ে দিয়েছেন?
বুম ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাতারেলা এবং প্রধানমন্ত্রী গিউসেপ কন্তে সোশ্যাল মিডিয়া পেজ দেখে এবং এ রকম কোনও উদ্ধৃতি সেখানে দেখতে পায়নি যাতে মনে হয় ইতালির সরকার সমস্ত আশা ছেড়ে দিয়েছে। আমরা এই বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করেও কন্তের এই রকম কোনও মন্তব্য খুঁজে পাইনি। বরং আমরা কন্তের একটি টুইট দেখতে পাই যাতে তিনি সমস্ত ইতালিবাসীকে সাহস জুগিয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে সরকার তাঁদের সঙ্গে আছে। ওই টুইটে তিনি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং আর যারা এই অসুখের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই করছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানান।
159 anni fa veniva proclamata l'Unità d'Italia. Da allora il nostro Paese ha affrontato mille difficoltà, guerre mondiali, il regime fascista. Ma gli italiani, con orgoglio e determinazione, hanno sempre saputo rialzarsi e ripartire. A testa alta.
— Giuseppe Conte (@GiuseppeConteIT) March 17, 2020
আমরা ইতালিয়ান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্সির অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টেও যাই এবং প্রেসিডেন্টের করা এ রকম কোনও মন্তব্য সেখানে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: না, ট্রাম্প রোচে-র তৈরি কোনও করোনাভাইরাস প্রতিষেধক বাজারে ছাড়ার কথা ঘোষণা করেননি