ফ্যাক্ট চেক
ভারত-চিন সংঘর্ষ: লাদাখ নিয়ে ভুয়ো টুইটের স্ক্রিনশট ভাইরাল হলো
বুম দেখে টুইটের মধ্যে এমন সব অসঙ্গতি রয়েছে, যা থেকে স্পষ্ট এটি ফোটোশপ করা হয়েছে।

৫০ জন ভারতীয় জওয়ান নিহত এবং ৭৫ জনকে চিনা ফৌজ বন্দি করেছে বলে যে টুইটটির স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে, সেটি বানানো এবং ভুয়ো।
১১ হাজার সমর্থক রয়েছে, জিং শি নামে এমন এক ব্যক্তির যাচাই-না-হওয়া টুইট থেকে স্ক্রিনশটটি তোলা হয়েছে বলে মনে হয়l অ্যাকাউন্টটি মাত্রই ১৯ মার্চ ২০২০ সালে খোলা হয়।
গত ১৫ জুন চিন-ভারত সীমান্তের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দু-দেশের সেনাদের মধ্যে এক সংঘর্ষে এক কম্যান্ডার সহ ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যুর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই টুইটের স্ক্রিনশটটি ভাইরাল করা হয়। ওই সংঘর্ষে চিনা সৈন্যদেরও প্রাণহানি হয়েছে বলে শোনা গেছে, তবে তাদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
টুইটটির স্ক্রিনশটে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর একটি ছবিও দেওয়া আছে।
টুইটে লেখা: "ভারতীয় সেনারা চিনা ফৌজের সঙ্গে অনাচার চালাচ্ছিল, তাই শোধ নিতে ওদের ৫০ জন সৈন্যকে মেরে ফেলা হয়েছে এবং ৭৫ জনকে আমরা বন্দি করেছি l আমরা শীঘ্রই লাদাখ সাফ করার অভিযান শুরু করব এবং এক মাসের মধ্যেই লাদাখ থেকে ভারতকে বহিষ্কার করে দেব l"
বুম দেখেছে, ফেসবুকের বেশ কয়েকটি কাশ্মীরি পেজ-এ স্ক্রিনশটটি ব্যাপক ভাবে শেয়ার হচ্ছে। তবে টুইটে যে বিবরণটি উদ্ধৃত করা হলো, সেটি চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর, নাকি টুইটার জিং শি-র, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
আর্কাইভ সংস্করণ দেখা যাবে এখানে।
টুইটটির আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আর্কাইভ সংস্করণ দেখা যাবে এখানে।
পোস্টটির আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, গোটা স্ক্রিনশটটাই সাজানো, বানানোl এ ধরনের কোনও বয়ান কোনও অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত হয়নি। কারণ:
-ভাইরাল স্ক্রিনশটটিতে কোনও তারিখ উল্লেখ করা নেই,
-ফেসবুক পেজে শেয়ার হওয়া স্ক্রিনশটের বয়ানটির ছবি গোলমেলে,
-আর ৭ জুন-এর একটি পোস্ট থেকে ওই স্ক্রিনশটটি সাজানো হয়েছে।
-বুম ওই ভুয়ো টুইটের অ্যাকাউন্টে কাউকে কোনও উত্তর দিতেও দেখেনি।
টুইটার হ্যান্ডেল @চায়নাজিংশি-র টাইমলাইনে গিয়ে বুম দেখেছে, শেষবার ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করা হয়েছে ৭ জুন, তারপর ১৬ জুন সীমান্ত সংঘর্ষের আগে পর্যন্ত কোনও টুইট নেই।
৭ জুনের টুইটেও চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর ছবি যথারীতি রয়েছে, সঙ্গের বয়ানে লেখা— "চিনা জাতি একটি মহান জাতি l এই জাতি অনেক ঝড়ঝাপটার মধ্য দিয়ে গেছে, কিন্তু তবু একে দমন করা যায়নি l"
টুইটের এই বয়ানটি আসলে ২০১৭ সালের অক্টোবরে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির ঊনবিংশতি কংগ্রেসে দেওয়া প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর ভাষণের অংশ।
টুইটারের টাইমলাইন
প্রকৃত টুইটটির আর্কাইভ সংস্করণ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
একটি টুইটকে সম্পাদনা করে এই ভুয়ো স্ক্রিনশটটি বানানো
এটি যে ফোটোশপ করে সাজানো, তা বুম বুঝতে পেরেছে। স্ক্রিনশটটিতে যে কোনও তারিখ দেওয়া নেই, সেটা আগেই বলা হয়েছে। অথচ টুইটার হ্যান্ডেলের নামের কাছেই সেই তারিখ দেখতে পাওয়ার কথা, তা সে মোবাইলেই হোক, বা ল্যাপটপে।
ভুয়ো টুইটে তারিখের উল্লেখ নেই
প্রকৃত টুইটটির আর্কাইভ সংস্করণ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
স্ক্রিনশটে ট্যাগ করা অ্যাকাউন্টে কোনও উত্তর আসেনি
ভাইরাল স্ক্রিনশটে ট্যাগ করা অ্যাকাউন্টগুলো খোঁজ করে আমরা @চায়নাজিংশি, @চায়না,@চায়নাআর্মি জাতীয় কতগুলো টুইট খুঁজেও কোনও উত্তরের সন্ধান পাইনি।
যদি সত্যিই এমন কোনও টুইট থাকত এবং স্ক্রিনশটের দাবি মতো তাতে ১৬২ জনের উত্তর দেওয়া থাকত, তাহলে মুছে দেওয়া টুইটের জন্যেও কিছু উত্তর থাকতl আমরা টুইটটির আর্কাইভ সংস্করণেরও খোঁজ করি, কিন্তু তেমন কিছু পাইনি।
টুইটারে এডভান্সড সার্চের ফল
ফাইটার পাইলটের প্রোফাইল ফোটো
যাচাই-না-হওয়া টুইটার @চায়নাজিংশি ১৯ মার্চ ২০২০ তারিখে তৈরি করা হয় এবং সেটি হঙকং থেকে চালানো হয়, এমন দাবি। গুগল ইমেজেস-এ খোঁজ লাগিয়ে আমরা দেখি, এই অ্যাকাউন্টে একজন চিনা মহিলার ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে, যিনি ছিলেন জে-১০ ফাইটার প্লেনের পাইলট এবং যিনি ২০১৬-র ১৪ নভেম্বর একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন।
এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট থেকে সব মিলিয়ে ৩৩টি টুইট করা হয়েছে, যেগুলি সবই ইংরাজিতে লেখা।
এই @চায়নাজিংশি অ্যাকাউন্টটির পিছনে ঠিক কে বা কারা রয়েছে এবং অ্যাকাউন্টটি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য কিনা, সে বিষয়েও সংশয় রয়েছে।গেট্টি ইমেজ
গেট্টি ইমেজ
Claim : ছবিতে ভারত-চিন দ্বন্দ্ব নিয়ে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং এর ছবি সহ একটি টুইট দেখা যায়
Claimed By : Facebook Posts
Fact Check : False
Next Story