ইসলাম নিয়ে আমির খানের ভুয়ো সাক্ষাৎকার শেয়ার করলেন কঙ্গনা রানাউত
এই ভুয়ো সাক্ষাৎকারটির দাবি আমির খান বলেছেন তাঁর স্ত্রী হিন্দু ধর্মের হলেও, তাঁর ছেলেমেয়েরা শুধু ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করবে।
বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত একটি ভুয়ো সাক্ষাৎকার টুইট করে দাবি করেছেন, আমির খান নাকি একজন জঙ্গি ইসলামপন্থী, যেহেতু তিনি তাঁর সন্তানরা ইসলাম ধর্ম পালন করবে বলে জানিয়েছেন।
ভুয়ো সাক্ষাৎকারটিতে আমির খানের মুখে বসানো হয়েছে, যদিও তাঁর স্ত্রী এক হিন্দু মহিলা, তথাপি তাঁর ছেলেমেয়েরা কেবলমাত্র ইসলাম ধর্মই অনুসরণ করবে। আমির খানের গোষ্ঠী অবশ্য আগেই এই তথাকথিত সাক্ষাৎকারটিকে ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
কঙ্গনার টুইট করা সাক্ষাৎকারটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং টাইমস অফ ইন্ডিয়া ও পিংকভিলা সেটি প্রকাশও করে দেয়, কোনও সংযোজন বা যাচাই ছাড়াই যে, এ ধরনের কোনও সাক্ষাৎকারের অস্তিত্বই নেই, এটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। আমির খান প্রডাকশনস-এর একটি সূত্র বুমকে জানিয়েছে, এমন কোনও সাক্ষাৎকার আমির খান কখনও কাউকে দেননি।
এই ভুয়ো সাক্ষাৎকার সহ প্রতিবেদনটি শেয়ার হতে শুরু করে আমির খান তুরস্কের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী এমিনে এর্দোগানের সঙ্গে ১৫ অগস্ট সাক্ষাৎ করার পর। আমির খান তুরস্কে গিয়েছেন তাঁর পরবর্তী চলচ্চিত্র লাল সিং চাড্ডার শুটিং-এর লোকেশন ঠিক করতে।
পরিচালিকা কিরণ রাও-এর সঙ্গে আমিরের বিয়ে হয়েছে। আমির তাঁর ছেলেমেয়েদের কেবল ইসলাম ধর্মের শিক্ষাই দেবেন, এই মর্মে তাঁর ভুয়ো উদ্ধৃতি দিয়ে কঙ্গনা রানাউত টুইটে দাবি করা হয় যে, তিনি একজন উগ্র ইসলামপন্থী। ২০১২ সালে নাকি এই ভুয়ো সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছিল এবং তাতে নাকি আমির তাঁর প্রথমা স্ত্রী রিনা দত্ত এবং দ্বিতীয়া স্ত্রী কিরণ রাও সম্পর্কে নানা কথা বলেছিলেন।
কঙ্গনা রানাউত টুইটs লিখছে: "হিন্দু+মুসলিম—মুসলিম। এটাই চরমপন্থা। একটি বিবাহ কেবল দুটি ভিন্ন সংস্কৃতির মিলন নয়, দুটি ধর্মেরও মিলন। বাচ্চাদের যেমন আল্লার কথা শেখাবেন, তেমনি শ্রীকৃষ্ণের কথাও শেখাতে হবে, তাই না? সেটাই তো ধর্মনিরপেক্ষতা!"
@aamir_khan आप तो सबसे ज़्यादा टॉलरंट थे आप कबसे हिंदूइज़म केलिये इंटॉलरंट हो गए? हिंदू माताओं की संतानें जिनकी रागों में श्री कृशन और श्री राम का खून बह रहा है,सनातन धर्म, भारतीय शभ्यता, यहाँ की संस्कृति जिनकी धरोहर है, वो सिर्फ़ और सिर्फ़ इस्लाम को फ़ॉलो करेंगे, ऐसा क्यूँ?
— Kangana Ranaut (@KanganaTeam) August 17, 2020
টুইটটি দেখা যাবে এখানে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
কঙ্গনার দ্বিতীয় টুইটটি এ রকম: "আপনি তো সব থেকে সহিষ্ণু, হিন্দু ধর্মে আপনি কবে আত্মস্থ হলেন? হিন্দু মায়েদের ছেলেমেয়েরা, যাদের শরীরে শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরামচন্দ্রের রক্ত বইছে, সনাতন ধর্ম, ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিই তো তাদের উত্তরাধিকার। তারা কেন শুধু ইসলামকে অনুসরণ করবে?"
প্রতিবেদনটির শিরোনাম: "আমার স্ত্রীরা হিন্দু হতে পারে, কিন্তু আমার সন্তানরা শুধু ইসলামই অনুসরণ করবে: আমির খান।" ২০১২ সালে তনকিদ নামে একটি ওয়েবসাইটে এটি সাক্ষাৎকার হিসাবে প্রকাশিত হয়, সাক্ষাৎকার নেন শাহিন রাজ নামে এক প্রতিবেদক।
প্রতিবেদনটিতে ধর্ম নিয়ে আমির খানকে প্রশ্ন করা হয় এবং তিনি কীভাবে ইসলামের শিক্ষা অনুশীলন করেন জানতে চাওয়া হয়। একটা প্রশ্ন ছিল তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এবং জানতে চাওয়া হয়, দত্ত বা রাওকে বিয়ে করতে গিয়ে তিনি কোনও ধর্মীয় দ্বিধাদ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়েছিলেন কিনা।
ভুয়ো প্রতিবেদনটির দাবি, এর উত্তরে আমির নাকি বলেছিলেন—"না, আমরা কোনও সমস্যায় পড়িনি। আমরা কখনও একে অন্যকে অন্যের ধর্ম পালনে বাধ্য করিনি, তবে এটা অবশ্যই আমি সবসময়েই বলে এসেছি যে, আমার বাচ্চারা ইসলাম ধর্মই পালন করবে।"
ভুয়ো সাক্ষাৎকারটি শেষ হচ্ছে প্রতিবেদকের একটি মতামত দিয়ে: "এটাকে আমি ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই বলতে পারি না।"
টাইমস অফ ইন্ডিয়া এবং বিনোদনের ওয়েবসাইট পিঙ্কভিলা ভুয়ো সাক্ষাৎকার সহ কঙ্গনার টুইটটি অবিকল ছেপে দিয়েছে, কোনও মন্তব্য ছাড়াই, এমনকী বলিউড অভিনেত্রী উদ্ধৃত প্রতিবেদনটি যে ভুয়ো সে কথারও কোনও উল্লেখ ছাড়াই।
এটা একটা ভুয়ো সাক্ষাৎকার: আমির খান প্রডাকসন সূত্র
বুম আমির খান প্রডাকশনস-এর এক কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এটা সম্পূর্ণ ভুয়ো একটি সাক্ষাৎকার এবং এ ধরনের কোনও সাক্ষাৎকারর আমির কাউকে কখনও দেননি।
"২০১২ সালেই আমরা এ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করেছিলাম এবং পুলিশ এই ভুয়ো সাক্ষাৎকার ছড়ানোর জন্য হায়দরাবাদ থেকে একজনকে গ্রেফতারও করেছিল।" আমির খানের নামে এই যে সব কথা চালানো হচ্ছে, এর কোনও ভিত্তি নেই।
ভুয়ো সাক্ষাৎকারটির উৎস
খোঁজখবর চালিয়ে আমরা দেখেছি, ২০১০ সালের একটি ব্লগে এই ভুয়ো সাক্ষাৎকারটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
ব্লগের প্রতিবেদনটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
২০১০ সালের এই ব্লগটিই ডেইলি-ও নামে একটি সাইটের প্রতিবেদনে উদ্ধৃত হয়, যার নাম ছিল—'সুপারস্টার আমির খানের বর্ধমান অসহিষ্ণুতা।' এটি প্রকাশ করা হয় ২০১৫ সালের নভেম্বরে। ২০১০ সালের ব্লগটিতে এখন আর পৌঁছনো যায় না, তবে এটাই তনকিদ-এ ২০১২ সালে প্রকাশিত ভুয়ো সাক্ষাৎকারটির অবিকল উৎস ও প্রতিধ্বনি।
আরও পড়ুন: না, এই ভাইরাল ছবিটি কোনও যথোপযুক্ত ভারতীয় সেনার নয়