মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের ছবিকে ভারতে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোগান্তি বলা হল
বুম দেখে ছবিটি ২০১৭ সালের। ওই রোহিঙ্গা মুসলিম ব্যক্তিটি মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয়ের খোঁজে আসছিলেন।
একজন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পুরুষ নিজের মাকে পিঠে বয়ে নিয়ে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছেন, এরকম একটি মুহূর্তের ছবিকে ভুয়ো দাবির সাথে শেয়ার করা বলা হচ্ছে এটা ভারতে করোনা লকডাউনের সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুঃসহ যন্ত্রণার একটি দৃষ্টান্ত। বুম দেখে ছবিটি ২০১৭ তে তোলা। ছবিতে থাকা ঐ ব্যাক্তিকে ওসিউর রহমান বলে শনাক্ত করা হয়, তিনি একজন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মুসলমান । মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে আত্মরক্ষায় বাংলাদেশে যাওয়ার পথে উনি নিজের মাকে পিঠে নিয়ে বেশ কয়েকদিন হাঁটেন।
এই ছবিটিকে ভারতে এমনই একটি সময়ের সন্ধিক্ষণে ছড়ান হচ্ছে যখন অগণিত ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে নিজেদের রাজ্যের দিকে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের বেশীরভাগই কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু থেকে ফিরে যাচ্ছেন নিজেদের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও ওডিশার দিকে। এই সহনাগরিক শ্রমিকদেরকে সময় মতো সাহায্য করতে অসমর্থ হওয়ায় এবং তাদের পরিবহনের ব্যবস্থা না করার জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলিকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। গত ৮ মে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের কাছে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায়, ১৫ পরিযায়ী শ্রমিক ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান। কয়েকদিন টানা হাঁটার পর, ওই অবসন্ন শ্রমিকরা রেললাইনের ওপরই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার কয়েকটি রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজেদের রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে।
মাকে পিঠে নিয়ে, কাঁদতে কাঁদতে হেঁটে-চলা ঐ প্রৌঢ়ের ছবিটি টুইটারে শেয়ার করা হচ্ছে। সঙ্গে ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে এটি সরকারের দ্বারা উপেক্ষিত ভারতের একজন পরিযায়ী শ্রমিকদের ছবি।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের তপশিলি জাতি শাখা ছবিটি টুইট করে। সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে উদ্দেশ্য করে জানতে চাওয়া হয় যে, উনি তাদের 'অসহায়তা' দেখতে পাচ্ছেন কিনা।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
.@narendramodi जी, क्या आप इनके चेहरे की बेबसी को आप पढ़ पा रहे हैं?
— Dalit Congress (@INCSCDept) May 10, 2020
कुछ तो करो सरकार.. pic.twitter.com/9OaAaQ0h4H
অর্থনীতিবিদ রূপা সুব্রহ্মণ্যিয়া ও সাংবাদিক স্বাতী চতুর্বেদী তিনটি ছবির একটি কোলাজ শেয়ার করেন। তার মধ্যে দুটি ছবি ভারতের পরিযায়ী শ্রমিকদের। তৃতীয় হল ওই রোহিঙ্গা মুসলমান ব্যক্তিটির ছবি।
How do we sleep at night? pic.twitter.com/RmTC4wDwJd
— Swati Chaturvedi (@bainjal) May 11, 2020
Truly no words. https://t.co/0phmPLPG3q pic.twitter.com/vLm1SglOAt
— Rupa Subramanya (@rupasubramanya) May 10, 2020
আরও পড়ুন: পরিবার নিয়ে এক পায়ে সাইকেল চালানোর ভিডিওটি লকডাউনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ছবিটি একজন রোহিঙ্গা মুসলমানের, যিনি ২০১৭ এর সঙ্কটের সময় তাঁর মাকে নিয়ে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছিলেন।
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর একটি প্রতিবেদন সামনে আসে। সেটি 'প্রেসেনজা' নামে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ ওয়েবসাইটে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ওই লেখা ৮ নভেম্বর ২০১৭'য় প্রকাশিত হয়েছিল। 'রোহিঙ্গা রিফিউজিস অ্যাট কক্সেস বাজার, বাংলাদেশ' শিরোনামের ওই লেখায় তাঁদের অবস্থা বর্ণনা করা হয় এবং বাংলাদেশে তোলা তাঁদের ছবি ছাপা হয়।
ওই সাইটে ছবিগুলির জন্য মোবারক হোসেন নামের একজন চিত্রসাংবাদিককে কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
এর পর আমরা বাংলায় 'মোবারক হোসেন' লিখে সার্চ করি। এর ফলে, আমরা বাংলাদেশের সংবাদ ওয়েবসাইট 'উখিয়া নি্উজ'-এর সন্ধান পাই। তার একটি প্রতিবেদনে ওসিউর নামের এক ব্যক্তির ওপর খবর করা হয়েছিল। বলা হয়, ওই ব্যক্তি চার দিন ধরে তাঁর মাকে পিঠে নিয়ে হাঁটছিলেন।
খবরটি পড়া যাবে এখানে।
ঐ একই প্রতিবেদনের মধ্যে বুম ওসিউর হোসেনের সাক্ষাৎকারের একটি ফেসবুক ভিডিও পায়। ওই একই সংবাদ মাধ্যম সেটি আপলোড করেছিল। মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার জন্য কীভাবে তাঁর মাকে বয়ে নিয়ে চার দিন ধরে হেঁটেছেন, ওসিউর তারই বর্ণনা দেন ওই ভিডিওতে। সেটি ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭'য় ফেসবুকে আপলোড করা হয়। নীচে সেটি দেখুন।