সম্বিত পাত্রর মিথ্যে দাবি জেলের মধ্যে জঙ্গি আজমল কাসভ বিরিয়ানি খেত
২৬/১১ মুম্বই হামলা মামলায় সরকার পক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি উজ্জ্বল নিকমের এই সাজানো মিথ্যেটা সম্বিত পাত্র পুনরাবৃত্তি করেছেন।
বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র ভুয়ো বলে আগেই প্রমাণিত একটি দাবি পুনরুচ্চারণ করে বলেছেন, ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার আসামি আজমল কাসভ জেলে বিচারাধীন থাকা কালে তাকে বিরিয়ানি খাওয়ানো হতো।
বুম এ ব্যাপারে ওই মামলার বিশেষ সরকারি উকিল উজ্জ্বল নিকমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান— "এটা সর্বৈব মিথ্যা। কারণ আজমল কাসভ ছিল একজন সন্ত্রাসবাদী এবং তাকে কখনওই জেলে বিরিয়ানি খেতে দেওয়া হয়নি। জেল ম্যানুয়াল অনুযায়ী যা খাবার তার প্রাপ্য, শুধু সেটাই তাকে দেওয়া হয়।"
১০ সেপ্টেম্বর হিন্দি টিভি চ্যানেল আজতক-এর দঙ্গল অনুষ্ঠানে এক আলোচনায় যোগ দিয়ে সম্বিত বলেন, যখন এদেরই পয়সায় কাসভকে জেলখানায় বিরিয়ানি খাওয়ানো হচ্ছিল, তখন তো তিনি একবারও আপত্তি করেননি। সম্বিত তাঁর ওই বক্তব্যের একটি ক্লিপ ওকই দিনে টুইটও করেন।
৯ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ের নার্গিস দত্ত রোডে বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতের অফিস-বাড়ির একাংশ বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপাল কর্পোরেশন ভেঙে দেওয়ার পর দিনই এই আজতকে বিতর্ক আয়োজিত হয়।
আলোচক রবি শ্রীবাস্তব যখন প্রশ্ন করেন যে করদাতাদের অর্থ ব্যয় করে কঙ্গনা রানাউতকে ওয়াই ক্যাটেগরি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে কেন, তখনই উত্তরে সম্বিত প্রায়শ উদ্ধৃত ওই ভুয়ো দাবিটি আওড়ান।
কঙ্গনা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মুম্বই পুলিশ এবং মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে ও তাঁর দল শিবসেনা সম্পর্কে মন্তব্য করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন।
সম্বিতের টুইটটি নীচে দেখুন:
रवि श्रीवास्तव : कंगना को security मेरे पैसे से क्यों दो गयी?
— Sambit Patra (@sambitswaraj) September 10, 2020
मेरा उत्तर : जब अजमल कसाब को आपके पैसे से बिरयानी दो जा रही थी तब आपको कोई दिक़्क़त नहीं थी। pic.twitter.com/OuqGuzfOJS
সম্বিতের টুইটের আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ক্লিপটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হয়েছে এই হিন্দি ক্যাপশন সহ: "চামচা: আমার টাকা দিয়ে কেন কঙ্গনার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে? ভক্ত: তোমার টাকা থেকে যখন কাসভকে বিরিয়ানি খাওয়ানো হচ্ছিল, তখন তো তোমার তা নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি?"
(মূল হিন্দিতে: घंगोर चमचा : कंगना को security मेरे टैक्स के पैसे से क्यों दो गयी? भक्त : जब अजमल कसाब को आपके पैसे से बिरयानी दी जा रही थी तब आपको कोई दिक़्क़त नहीं थी।)
তথ্য যাচাই
বুম 'উজ্জ্বল নিকম ও কাসভ বিরিয়ানি'—এই শব্দগুলি বসিয়ে অনুসন্ধান চালালে ওই ভুয়ো দাবি সম্পর্কে বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন নজরে আসে।
২০০৮ সালের ২৬ থেকে ২৯ নভেম্বর মুম্বইয়ে সন্ত্রাসবাদী হানায় লস্কর-ই-তৈবার আজমল কাসভ সহ যে ৯ জন সদস্য অংশ নিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে আদালতে সরকারি কৌঁসুলি হিসাবে মামলা লড়েন নিকম। এদের মধ্যে কেবল কাসভকেই জীবিত ধরা গিয়েছিল এবং ২১ নভেম্বর ২০১২ সালে তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
বুম বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন দেখেছে, যেখানে উজ্জ্বল নিকম জানিয়েছেন, কাসভ কখনওই জেলে বসে বিরিয়ানি খাওয়ার আবদার করেনি এবং এটা ওঁর সাজানো মিথ্যে কথা।
আমরা নিকমের কাছে একটা বিবৃতি চেয়েছিলাম, পরিবর্তে তিনি ই-মেল করে জানান, "এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আজমল কাসভ একজন সন্ত্রাসবাদী এবং তাকে কখনওই জেলে বিরিয়ানি দেওয়া হয়নি, জেলে যা খাবার কয়েদিরা পেয়ে থাকে, তার বেশি কিছু তাকে দেওয়া হয়নি।"
২০১৫ সালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া একটি বিবৃতিতে নিকমবলেছিলেন: "সংবাদপত্রের আরও দায়িত্বশীল ও সজাগ হওয়া উচিত। সাংবাদিকরা কাসভের চোখের জল নিয়ে আবেগ প্রকাশ করেছে, ও এক নবীন কিশোর, যাকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে, এই সব বলেছে, এটা ঠিক নয়। গণমাধ্যমের এই ভূমিকায় জনমনে একটা সহানুভূতির বাতাবরণ তৈরি হয় আর তখনই আমি গোটা ঘটনার প্রেক্ষিত গুলিয়ে যাচ্ছে দেখে বানিয়ে-বানিয়ে বলি যে কাসভ জেলের মধ্যে থাকতে-থাকতেই মটন বিরিয়ানি খাওয়ার দাবি জানিয়েছিল।"
নিকমের এই বিবৃতি ইকনমিক টাইমস, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টুডে, ফার্স্ট পোস্ট ও অন্যান্য সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হয়েছিল।
নিউজ ১৮ চ্যানেলের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিকম সিএনএন-আইবিএন-কে বলেছিলেন— "মিডিয়া সেই সময় আমাকে এমন সব প্রশ্ন করছিল যেন কাসভ একটা বাচ্চা ছেলে, ওর মগজ-ধোলাই করা হয়েছে, ওকে বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে, ইত্যাদি। আর সে সবের জবাবেই আমি বলে দিয়েছিলাম, কাসভ তো মটন বিরিয়ানি পর্যন্ত খেতে চেয়েছিল, যেটা কখনওই সত্য ছিল না।"
আরও পড়ুন: আসানসোল পৌরনিগমের সাইনবোর্ডর কাটছাঁট করা ছবি মিথ্যে দাবি সহ ভাইরাল