সম্পর্কহীন এই ছবি দুটি কোভিড-১৯ লকডাউন চলাকালীন পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা নয়
বুম যাচাই করে দেখেছে ছবি দুটি ২০১৯ সালের জুলাই ও ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে অনলাইনে রয়েছে।
সোশাল মিডিয়ায় পিঠে আঘাতের চিহ্ন থাকা দুই ব্যক্তির ছবি বিভ্রান্তিকর দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে। ওই ছবিগুলিকে দেশব্যাপী লকডাউনের সময়ে সাধারন মানুষের উপর পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা বলে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ছবি দুটিতে বিছানায় আধ-শোয়া অবস্থায় পিঠে কালশিটে দাগের এক যুবককে দেখা যাচ্ছে। আঘাতের ধরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে এগুলি লাঠি বা রড দিয়ে আঘাতের চিহ্ন। দুটি ছবিতেই যুবকটির কুনইয়ের উপরে হাতে, পিঠে, কাঁধে ও পায়ের উপরের অংশে আঘাতের চিহ্নগুলি ছড়িয়ে রয়েছে। বিছানার চাদরের নক্সা ও আঘাতের দাগগুলি দেখে বোঝা যায় ছবিগুলি একই যুবকের।
দ্বিতীয় ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে সাদা লুঙ্গি পরিহিত এক ব্যক্তির পিঠে আঘাতের দাগ। ছবিটি দেখলে মনে হয় তিনি রাস্তায় দাঁড়য়ে আছেন। ওই ব্যক্তিটির সামনে লাল ছাপা শাড়ির আঁচলে মাথা ঢাকা এক মহিলাকে মুখে হাত চাপা দিয়ে বিস্ময়ের ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়।
যুবকের পিঠে কালশিটে দাগের ছবিদুটি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন রাজস্থানের এক বাসিন্দা। তাঁর ফেসবুক পোস্টের হিন্দি ক্যাপশনকে বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, "পুলিশের এই অমানবিক ব্যবহার ঠিক না, কেউ কোনো কাজে গেলেও তাকে পেটানো হচ্ছে। এই ছেলেটা মেডিকেল ষ্টোরে যাচ্ছিলো ঔষধ আনতে, তার মা সুগারের রোগী। ছেলেটা বলেছিলো কিন্তু তা- সত্ত্বেও ছাড়েনি। তাকে এতো মারা হয়েছে যে সে এখন নিজের ঔষধ লাগাবে না নিজের মায়ের লাগাবে, কেননা ঘরের মধ্যে দুজনই আছেন শুধু। এখন বলুন পুলিশ কি ঠিক কাজ করছে?"
(হিন্দিতে মূল পোস্ট: ये पुलिस का अमानवीय व्यवहार सही नहीं है कोई किसी काम से जा रहा है उसे भी पिट रहे है कल ये लड़का मेडिकल स्टोर पर अपनी माँ की दवाई लेने जा रहा था इसकी माँ शुगर की मरीज़ है इस बेचारे ने बताया भी फिर भी नहीं छोड़ा इसे इतना मारा अब ये अपनी दवाई लाएगा या अपनी माँ की केवल घर में दो ही है अब बताओ आप क्या पुलिस ठीक कर रही है)
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
মধ্যপ্রদেশের প্রদেশ কংগ্রেসের সোশাল মিডিয়ার রাজ্য কোরডিনেটর শিল্পা ভোডকে ভাইরাল হওয়া একটি ছবি সহ হিন্দিতে টুইট করেছেন। টুইটটির বাংলা অর্থ, "যতটুকু শকি দিয়ে আজ দিনমজুর, হকার ও পথচারীদেরকে মেরে শক্তি প্রদর্শন করছে তার ১০ শতাংশ শক্তি দিয়ে রাহুল গান্ধীর সতর্কীকরণ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোকে বন্ধ করত তবে ভারত আজ সুরক্ষিত থাকত।''
(হিন্দিতে মূল টুইট: ''जितना आज दिहाड़ी,रेहड़ी,हाइवे पर चलते लोगो को मारकर सख्ती करी जा रही है, अगर इसकी 10% भी अगर @RahulGandhi जी की #कोरोना चेतावनी पर अंतराष्ट्रीय हवाई अड्डों पर कर ली जाती तो भारत सुरक्षित रहता!")
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
जितना आज दिहाड़ी,रेहड़ी,हाइवे पर चलते लोगो को मारकर सख्ती करी जा रही है,
— Shilpa Bodkhe INC (@BodkheShilpa) March 27, 2020
अगर इसकी 10% भी अगर @RahulGandhi जी की #कोरोना चेतावनी पर अंतराष्ट्रीय हवाई अड्डों पर कर ली जाती तो भारत सुरक्षित रहता! @LambaAlka @sujitsingh__ pic.twitter.com/oeAde4qbUE
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর নামে ফেসবুকে থাকা তাঁর অনুগামীদের পেজ থেকেও ছবিগুলি ব্যবহার করা হয়েছে একই বয়ানে। এই ফেসবুক পেজটি লাইক করেন এক লক্ষের বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারী লুঙ্গি পরা ব্যক্তির ছবিটিকে আবার সে দেশের লকডাউন চালাকালীন পুলিশি নির্মমমতার ছবি বলে দাবি করেছে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: কল্পবিজ্ঞান টিভি সিরিজের দৃশ্যকে কোভিড-১৯ বিধ্বস্ত ইতালিতে গণকবর বলা হল
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখেছে ছবিগুলি সাম্প্রতিক সময়ে লকডাউন বহাল রাখতে পুলিশের নির্মমতার ছবি নয়।
পিঠে কালশিটে দাগের যুবকের ছবিটি ২০১৯ সালের জুলাই মাস এবং পিঠে আঘাতের দাগ থাকা লুঙ্গি পরিহিত ব্যক্তির ছবিটি ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে অনলইনে রয়েছে।
যুবকের ছবি
বুম প্রথমে রিভার্স ইমেজ সার্চ ও পরে ফেসবুকে কিওয়ার্ড সার্চ করে জানতে পারে পিঠে কালশিটে দাগের যুবকের ওই ছবিটি ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে অনলাইনে রয়েছে। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল।
ফেসবুক পোস্টগুলিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছিল, "পেরেম করা সহজ, মেয়ের বাপের মাইর থেকে বাঁচা কঠিন। ইসলামে যেটা জেনা, যেটা বাংলায় পেরেম,যারা করছে প্রত্যেকে যদি এর মত মেয়ের বাপের হাতে মাইর খাইত, যুগের পোলা মাইয়া সব ভাল হয়ে যেত।" এরকম দুটি ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ করা আছে এখানে ও এখানে।
বুম এব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছে ছবিগুলি লকডাউন চলাকালীন সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের অত্যাচারের ছবি নয়, তবে বুমের পক্ষে ছবিগুলির ঘটনাক্রম সম্পর্কে স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
ছবিগুলি কলকাতা পুলিশের টুইটার ও ফেসবুক প্রোফাইল থেকে টুইট ও পোস্ট করে জানানো হয়। ছবিগুলির দাবি গুলি সত্য নয়।
— West Bengal Police (@WBPolice) March 27, 2020
পোস্টের মূল বক্তব্য ছিলো এরক, "লকডাউন চলাকালীন কয়েকটি ছবি, ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ভিডিওটির সত্যটা যাচাই করে দেখা গেছে যে ভিডিওটি আদেও নয়। সুতরাং এই ধরনের ভুয়ো খবর যে বাব যারা ছড়াবে বা ছড়াচ্ছে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাই গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন। সাবধানে থাকুন। দায়িত্বশীল থাকুন। #FakePostAlert #StayHomeStaySafe''
সাদা লুঙ্গি পরা ব্যক্তি
সাদা লুঙ্গি পরা পিঠে আঘাতের চিহ্নের ব্যক্তির ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ (আর্কাইভ পোস্ট)। পোস্টটিতে দাবি করা হয়েছে ঢাকার শান্তিনগরে রিক্সাচালক ওই ব্যক্তি ট্রাফিক পুলিশ দ্বারা প্রহৃত হন। বুমের পক্ষে এই ছবিটিও স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
''#ঢাকা শান্তিনগর মোড়ে একজন সাধারণ রিক্সা চালকে ট্রাফিক পুলিশে মেরে প্রমান করে দিলো যে গরিবের উপর ক্ষমতার অপব্যবহার করা যায়, বিবেক থাকলে শেয়ার না করে যাবেন না।''
যদিও লকডাউনের শুরুতে বিভিন্ন জায়াগায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যপুলিশের নির্মমতা ও অতিসক্রিয়াতার অভিযোগ ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকটি জায়গার পুলিশ আধিকারিককে ক্লোজ করেন বা বসিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: আমদাবাদে পুলিশের ওপর পাথর ছোঁড়ার ভিডিওকে কলকাতার ঘটনা বলা হল