বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়াল মোদী ও গুরমিতের হেলিকপ্টার চড়ার ছবি
বুম যাচাই করে দেখে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী বেসরকারী সংস্থার কপ্টার ভাড়া করেছিলেন।
![বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়াল মোদী ও গুরমিতের হেলিকপ্টার চড়ার ছবি বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়াল মোদী ও গুরমিতের হেলিকপ্টার চড়ার ছবি](https://bangla.boomlive.in/h-upload/2020/11/18/934527-ram-rahim-helicopter-02.webp)
সোশাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কপ্টার চড়ে ভোট প্রচার ও ধর্ষণে অভিযুক্ত হরিয়ানার ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিমের চ্যাটার্ড কপ্টারে চড়ার সম্পর্কহীন ছবি বিভ্রান্তিকর দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবি দুটির একটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি কপ্টার থেকে নামতে দেখা যায়। আরেকটি ছবিতে দেখা যায় গুরমিত রাম রহিম কপ্টারে বসে রয়েছেন। দুটি কপ্টারেরই গায়ে লেখা রয়েছে 'এডাব্লু ১৩৯'
ফেসবুক পোস্টে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, ''যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন ধর্ষণকারীকে নিয়ে আসার জন্য নিজের হেলিকপ্টার পাঠায় তখন "বেটি বাঁচাও" এর স্লোগান প্রহসনে পরিণত হয়ে যায়,,, ছিঃ বিজেপি ছিঃ....''
একই ক্যাপশন সহ ছবি দুটি ফেসবুকের বিভিন্ন পেজে ভাইরাল হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা সলমন নিজামি ওই ছবি দুটি ২০১৭ সালে টুইট করে লেখেন, ''তাহলে ধর্ষক বাবা আকাশপথে ওড়ে মোদীর প্রিয় গৌতম আদানির মালিকানার এডাব্লু ১৩৯ হেলিকপ্টারে। ধন্যবাদ!''
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: কর্নাটকে ভয়াবহ অগ্নিদ্বগ্ধ এক যুবতীর দেহ উত্তরপ্রদেশের ঘটনা বলে ভাইরাল
তথ্য যাচাই
বুম এই ছবি দুটিকে ঘিরে নানা ভুয়ো তথ্য ২০১৭ সালের অগস্ট মাসে খণ্ডন করেছে।
'এডাব্লু ১৩৯' কপ্টার
'এডাব্লু ১৩৯' হল অগস্টা ওয়েস্টল্যান্ড সংস্থার কপ্টার, এটি কোনও কপ্টারের রেজিস্ট্রেশন নম্বর নয়। এডাব্লু ১৩৯ হল মাঝারি আকারের দুটি ইঞ্জিন চালিত ১৫ আসনের হেলিকপ্টার যার নির্মাতা ইতালির অগস্টা ওয়েস্টল্যান্ড সংস্থা। বিশিষ্ট ব্যক্তি, কর্পোরেট পরিবহন, দূরবর্তী যাতায়াত, অগ্নি নির্বাপন, প্রশাসন, তল্লাশি ও উদ্ধারকাজে ব্যবহার হয় অগস্টাওয়েস্টল্যান্ড বিমানের।
ইতালির রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা পৃষ্ঠপোষকাতায় চলা সংস্থা ফিনমেসানিকা তৈরি করে এটি। ভারতের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় এই কপ্টারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিতর্কিত ইতিহাস। ২০১০ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জামানায় একধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সামরিক আধিকারিকদের নাম জড়ায় ঘুষ কেলেঙ্কারিতে। (পড়ুন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন)
গুরমিত রাম রহিম ও প্রধানমন্ত্রী চেপেছেন একই কপ্টার?
অসামরিক বিমান পরিবাহন মন্ত্রকা (ডিজিসিএ) এর তালিকায় আদানির নামে কোনও 'এডাব্লু ১৩৯' বিমান নেই
বুমকে ২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের মুখপাত্র বলেন, 'আদানির কোনও হেলিকপ্টার নেই। কোনও এই ধরণের কপ্টার ভাড়াও করেনি। অতঃপর গুরমিত সিংহের পরিবহনে বা রাজনৈতিক দলকে এডাব্লু ১৩৯ ভাড়া দেওয়ার খবর মিথ্যে।''
ওই মুখপাত্র আরও বলেন অতীতে সংস্থাটি হেলিকপ্টারের বায়না দিলেও তা বাতিল হয়ে যায়। ২০১১ সালের টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন ও অগস্টাওয়েস্টল্যান্ড-এর প্রেস রিলিজে বলা হয় আদানি সংস্থা ওই সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি এডাব্লু ১৩৯ কপ্টার কিনেছে।
অনলাইনে থাকা ২০১৭ সালের ২০ জুলাইয়ের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন এর ''এয়ার আপারেটর পারমিট'' এর তালিকা অনুযায়ী আদানি সংস্থার কার্নাবতী অ্যাভিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের তিনটি বিমান রয়েছে তা হল- হকার ৮৫০ এক্সপি, সিএল ৬০০-২বি১৬ এবং ইএমবিজে-১৩৫বিজে লেগাসি ৬৫০। এই তালিকায় এডাব্লু ১৩৯ নামে কোনও কপ্টার নথিভুক্ত নেই।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী চড়েন আদানির বিমান ও ডিএলএফ এর এডাব্লু ১৩৯ হেলিকপ্টার
২০১৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী আদানির অধীন তিনটি বিমানে চড়েন। (তথ্যসূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ)
২০১৪ সালে একটি নির্বাচনী প্রচারে যেতে মোদী ডিএলএফ এর মালিকানায় থাকা এডাব্লু ১৩৯ কপ্টার ব্যবহার করেন।
২০১৪ সালে এপ্রিল মাসে প্রকাশিত টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনেও উল্লেখ রয়েছে সেই তথ্যের।
''গত কয়েকদিন ধরে ডিএলএফ গ্রুপের এডাব্লু-১৩৯ অগস্টা চপারে মোদী উড়ান দেন উত্তর ভারতের বিশেষত উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে র্যালিতে যেতে।''
হরিয়ানার অতিরিক্ত মুখ্য সচিব রাম নিবাস বলেন হেলিকপ্টারটি বেসরকারী সংস্থার থেকে রাজ্য ভাড়া নেয়
হিন্দি সংবাদপত্র দৈনিক ভাস্করকে এক সাক্ষাৎকারে অতিরিক্ত মুখ্য সচিব রাম নিবাস বলেন একটি প্রাইভেট চার্টার সংস্থা থেকে এডাব্লু ১৩৯ ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, আদানিদের থেকে নয়।
ডেরা সাচা সৌদার প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংহ দোষী সাব্যস্ত হলে সেসময় হরিয়ানার মনোহর লাল খট্টরের সরকার হিংসা থামাতে ব্যার্থ হয়। যার জেরে মারা যায় ৩৬ জন ও আহত হয় শতাধিক ব্যক্তি।
আরও পড়ুন: না, এই ব্যক্তি বিহারের গুলনাজ খাতুন হত্যাকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত নন