সম্পর্কহীন ভিডিও ছড়াল হাথরসের নির্যাতিতার মাকে পুলিশের মারধোর বলে
বুম যাচাই করে দেখে যে ভাইরাল হওয়া ক্লিপটি উত্তরপ্রদেশের হামিরপুরের এবং এর সঙ্গে হাথরসের ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।
একটি অস্বস্তিকর ভিডিও, যাতে দেখা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের হামিরপুর জেলায় এক পুলিশ অফিসার এক মহিলাকে লাথি মারছেন এবং গালাগাল করছেন। হাথরসের নির্যাতিতার মা তাঁর মেয়ের দেহ তাড়াহুড়ো করে পুড়িয়ে দেওয়ার আগে দেখতে চেয়েছেন বলে পুলিশ তাঁকে মারধর করেছে, এই মিথ্যে দাবি করে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে।
২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশের হাথরসের এক দলিত তরুণী দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে মারা যান। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্লিপটি শেয়ার করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওই তরুণী যখন মাঠে পশুখাদ্য সংগ্রহ করছিলেন, তখন চার জন উচ্চবর্ণের পুরুষ তাঁকে গণধর্ষণ ও অত্যাচার করে বলে অভিযোগ ওঠে।চার অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভোরবেলা হাথরসের পুলিশ পরিবারের অনুমতি ছাড়াই নির্যাতিতার দেহ সৎকার করে দেয় বলে অভিযোগ করা হয় এবং তার ফলে রাজ্য প্রশাসনকে যথেষ্ট সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
২৫ সেকেন্ডের ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে, এক মহিলা মেঝেতে বসে কাঁদছেন, এবং এক জন পুলিশ তাঁকে লাথি মারছেন ও গালাগাল দিচ্ছেন। মহিলার পাশে একটি বাচ্চা রয়েছে।
ক্লিপটিতে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "উত্তরপ্রদেশ। হাদারার মেয়েটির শরীর কবর দেওয়ার আগে যোগীর পুলিশ মা সমেত তার পুরো পরিবারের লোকেদের আটক করে এবং যখন তার মা মেয়ের দেহ দেখতে চান তখন তাকে মারধর করে। বোকা পুলিশ।"
পোস্টটি দেখতে এখানে এবং আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: কলকাতার পুরনো নারীবাদী প্রতিবাদের ভিডিওকে জোড়া হল হাথরসের সঙ্গে
ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে
একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করে আমরা দেখতে পাই ক্লিপটি মিথ্যে দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
পোস্টটি দেখতে এখানে এবং আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
আমরা ভিডিওটিকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশে ভেঙ্গে নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি এবং কিছু সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই যাতে বলা হয়েছে যে, তারিখহীন এই ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের হামিরপুরের এবং ভিডিওটি গত সপ্তাহে উঠে এসেছে ও ভাইরাল হয়েছে।
২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে ভিডিওতে ফোন হাতে নিয়ে যাঁকে ওই মহিলাকে মারতে এবং গালাগাল দিতে দেখা গেছে, তিনি কোতোওয়ালির স্টেশন অফিসার শ্যাম প্রতাপ প্যাটেল।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, হামিরপুর পুলিশ ওই ঘটনার তদন্ত করছে এবং তারা দাবি করে ভিডিওটি পুরানো। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে হামিরপুরের সুপারিন্টেনডেন্ট অব পুলিশ নরেন্দ্র কুমার সিংহের মন্তব্য উদ্ধৃত করে লেখা হয়, "ভিডিওতে যে পুলিশকর্মীকে দেখা যাচ্ছে, তিনি কোতোওয়ালির এসও শ্যাম প্রসাদ প্যাটেল। আমি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি এবং সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।"
দৈনিক ভাস্করের প্রতিবেদন অনুসারে ভাইরাল ভিডিওতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে আম্বেদনগর অঞ্চলে তাঁর একটি সব্জির দোকান আছে। এপ্রিলে লকডাউনের সময় তিনি দোকান খুলেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয় এবং সে জন্য তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর অভিযুক্ত পুলিশ তাঁকে মারধর করেন।
২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হামিরপুর থানার সরকারি টুইটার হ্যান্ডেল থেকে টুইট করে ভাইরাল ক্লিপের ব্যাপারে উত্তর দেওয়া হয় যে পুলিশ ভিডিওটি লক্ষ্য করেছে এবং ক্লিপে যে পুলিশকর্মীকে দেখা যাচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই উত্তরে আরও বলা হয়েছে যে, ভিডিওটি দেখে পুরানো বলে মনে হচ্ছে এবং তদন্ত শেষ হলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।
ইন্ডিয়া টুডে এর আগে ওই একই ক্লিপের তথ্য যাচাই করেছে।
এর আগে হাথরসের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন এক তরুণীর ছবি, যা মৃত নির্যাতিতার দেহ বলে মিথ্যে দাবি করে শেয়ার করা হয়েছিল, বুম সেই দাবির তথ্য যাচাই করে সেটিকে মিথ্যে প্রমাণ করে।
নীচে হাথরাসের ঘটনাকে ঘিরে বুমের তথ্য যাচাইগুলো পড়ুন:
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশে ধর্ষণে অভিযুক্তর ছবি জোড়া হল হাথরসের ঘটনার সঙ্গে