না, ভিডিওটি খৈনি খেয়ে প্রৌঢ়ের ঠোঁটের নীচে ম্যাগট সংক্রমণের ঘটনা নয়
বুম দেখে ২০১৯ সালে সাউথ আফ্রিকার কোয়াজুলু ন্যাটালে চিকিৎসার গাফিলতিতে এক ব্যক্তির মুখে ম্যাগট সংক্রমণের ঘটনা এটি।
সোশাল মিডিয়ায় উপরের ঠোঁটের নীচে ম্যাগট সংক্রমণের পুরনো ভিডিও বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ছড়ানো হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে, খৈনি খাওয়ার ফলেই নাকি এই পরিণতি হয়েছে। ম্যাগট হল পা বিহীন লার্ভা জাতীয় প্রাণী।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ১৭ সেকেন্ডের ভিডওতে দেখা যায় হওয়া একজন প্রৌঢ় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন। অন্য এক ব্যক্তি আঙুল দিয়ে তার মাড়ি ফাঁক করে দেখালে উপরের ঠোঁটের নীচে অজস্র সাদা ম্যাগট দেখা যায়। ভিডিওটিতে দ্বিতীয় বারও ঠোঁট উল্টিয়ে ম্যাগট দেখানো হয় ওই ভিডিওটিতে। কাউকে বিব্রত তিরস্কারের ভঙ্গিতে কাউকে ডাকতেও শোনা যায় ওই ভিডিওটিতে।
ভিডিওটি শেয়ার করে ফেসবুকে ইংরেজিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "খৈনি / সজন প্রেমী।"
(ইংরাজিতে মূল ক্যাপশন: "khaini/sajan lover")
উল্লেখ্য, সাজন হল একটি সুগন্ধিত খৈনি ব্রান্ড।
ভিডিওটি স্পর্শকাতর হওয়ায় বুম প্রতিবেদনে পোস্টটির স্ক্রিনশট অস্বচ্ছ করে অন্তর্ভুক্ত করছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বিষ প্রয়োগে বানর হত্যার ছবি ভারতে সাম্প্রদায়িক রং সহ ছড়ালো
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটিকে কয়েকটি মূল ফ্রেমে ভেঙ্গে রিভার্স সার্চ করে দেখে যে, ভিডিওটি ২০১৯ সালের জুলাই মাসের। দক্ষিণ আফ্রিকায় সাউথ ডারবানের আর .কে. খান হাসপাতালের এক ব্যাক্তির ম্যাগট সংক্রমণের ভিডিও এটি।
২০১৯ সালের ৮ জুলাই প্রকাশিত মিররের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাহান্ন বছরের আবদুল ইব্রাহিম নামের ওই ব্যক্তি সামান্য পায়ে আঘাত নিয়ে চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালটি কোয়াজুলু ন্যাটাল প্রদেশে অবস্থিত। সাধারন চিকিৎসা করে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মাসখানেক পরে পায়ের আঘাতপ্রাপ্ত অঞ্চল কালো এবং জেলির মতো হয়ে গেলে তাঁকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে ইব্রাহিমের পা কেটে বাদ দেওয়া হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে সঠিক পরিসেবার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর ছেলে আজাদ বাবাকে দেখতে গিয়ে দেখেন ঠোঁটের ওপরের অংশ ফোলা। আর তার ভালো করে খেয়াল করতে গিয়েই দেখেন এই বিপত্তি। ঠোঁটের নীচে আস্তানা জমিয়ে থিক থিক করছে ম্যাগট। এই অবস্থায় ভয় পেয়ে সাহায্যের আবেদন করা সত্ত্বেও হাসপাতালের কোন নার্স কে পাওয়া যায়নি। আজাদ নিজেই পরে টিসু পেপার দিয়ে বাবার মুখ পরিস্কার করেন।
এমনিতেই ২০১৪ সালের স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে ইব্রাহিম কথা বলতে বা নড়াচড়া করতে পারতেন না। জুলাই মাসে আবদুলের মৃত্যু হয়। আজাদের সন্দেহ পুরো ঘটনাটির জন্য হাসপাতালের গাফিলতি দায়ী।
এই ঘটনার পরে ডারবান হাইকোর্টে ইব্রাহিমের ছেলে এবং স্ত্রী আর. কে. খান হাসপাতাল এবং প্রাদেশিক স্বাস্থ্য সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার মামলা রুজু করেন।
ঘটনাটি নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদপত্র 'দ্য সান'-এর প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে।
আরও পড়ুন: মিথ্যে: এই ভিডিও করোনাভাইরাসের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না