পেগাসাস আড়িপাতার নিশানায় রাহুল, প্রশান্ত, অভিষেক: রিপোর্ট
রাহুল গাঁধী, প্রশান্ত কিশোর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পেগাসাসের সম্ভাব্য নজরদারির তালিকায় ছিলেন।
ইজরায়েলি এনএসও গ্রুপের ভারতীয় ব্যবহারকারী ক্লায়েন্ট দ্বারা সাম্ভাব্য আড়িপাতার শিকার হয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi), ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor), তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Bannerjee), কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, প্রহ্লাদ সিংহ পটেল। এই নামগুলি উঠে এসেছে 'পেগাসাস প্রজেক্ট'-এ অংশ নেওয়া গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী রাহুল গাঁধীকে আড়ি-পাতাতে (survillance) সম্ভাব্য নিশানা করা হয়েছিল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন।
রাহুল গাঁধীর ব্যবহার করা দুটি ফোন নম্বরের হদিস মিলেছে এনএসও গ্রুপের নজরে থাকা ফাঁস হওয়া নথির তালিকায়। ফরাসি অসরকারী সংস্থা "ফরবিডেন স্টোরিজ" এই নথি হাতে পেয়েছে।
দ্য ওয়ার প্রতিবেদনে জানিয়েছে গাঁধীর ব্যবহার করা ৯ টি নম্বর এবং তাঁর বন্ধুদের ৫ টি নম্বর ওই প্রকাশিত নথিতে প্রকাশ পেয়েছে। এটি কোনও ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে নজরদারির সবচেয়ে বড় মাপের তালিকার মধ্যে অন্যতম।
দ্য ওয়ার জানিয়েছে যে এটা থেকে "সিদ্ধান্ত উপনিত" হওয়া যাচ্ছে না যে পেগাসাস গাঁধীর উপর সফলভাবে নজরদারি চালিয়েছে কিনা কারণ তিনি ওই সময়ে ব্যবহার করা ফোন এখন আর ব্যবহার করেন না।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুনরায় জেতাতে মুখ্য ভোট কুশলী ছিলেন প্রশান্ত কিশোর। ২০১৮ সাল থেকে কিশোরের উপর আড়ি-পাতছিল পেগাসাস যা চিহ্নিত করা যায় এবছরের ১৩ জুলাই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো, তৃণমূল কংগ্রসের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ব্যক্তিগত সহয়াকও এই নজরদারিতে সম্ভাব্য নিশানা ছিলেন।
নজরদারিতে বিজেপির মন্ত্রীরা
নব নিযুক্ত যোগাযোগ, ইলেক্ট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী এবং রেলমন্ত্রী আশ্বিনী বৈষ্ণব ২০১৭ সালে সম্ভাব্য নজরদারিতে ছিলেন যখন তিনি বিজেপিতে যোগ দেননি। বৈষ্ণবের সহধর্মিনীর নম্বরও সম্ভাব্য নিশানায় ছিল।
এইসব নতুন তথ্য প্রকাশের আগে বৈষ্ণব লোকসভায় সোমবার বলেন, এই "পেগাসাস প্রজেক্টের" এই সব তথ্য "ভারতীয় গণতন্ত্র ও সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানকে কালিমালিপ্ত করার প্রচেষ্ঠা।"
জলশক্তি মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিংহ পটেল, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর ঘনিষ্ট ১১ জন ব্যক্তি ২০১৯ সালে সম্ভাব্য নিশানায় ছিলেন। তাঁর মধ্যে ছিলেন পটেলের ব্যক্তিগত সচিবরা, রাজনৈতক ও কার্যালয়ের কর্মকর্তারা যেমন তাঁর রাধুনি ও মালি।
প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর বিরুদ্ধে অভিযোগকারিণী ছিল নিশানায়
সুপ্রিম কোর্টের কর্মচারী যিনি ২০১৯ সালে ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন তাকেও পেগাসাসের সম্ভাব্য নিশানা হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
২০১৯ সালে যখন তাঁর অভিযোগ প্রথম খবরে আসে সেই সপ্তাহেই অভিযোগকারিণীর তিনটি নম্বরের পাশাপাশি তাঁর স্বামীর ও দুই ভাইয়ের আটটি নম্বর নজরদারির সম্ভাব্য তালিকায় ছিল।
অভিযোগকারিণী ও তাঁর পরিবারের ফোনগুলি আদৌ পেগাসাসের আড়িপাতার শিকার হয়েছিল কিনা তা অবশ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি কারণ তাঁরা সংশ্লিষ্ট ফোনগুলি ফরেনসিক বিশ্লেষণে দিতে সম্মত হননি।
অশোক লাভাসা, গগনদীপ কাং এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের ভারতীয় প্রধান নিশানায় ছিলেন
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী ও তৎকালীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে আদর্শ নির্বাচন বিধি লঙ্ঘনের রায় দেওয়ার সপ্তাহখানেক পর প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসাকেও সম্ভাব্য নজরদারির নিশানায় নেওয়া হয়।
নির্বাচন কমিশনের তিনজন সদস্যের মধ্যে লাভাসা একমাত্র সদস্য যিনি মোদী ও শাহের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন।
ভাইরাসবিদ গগনদীপ কাং ২০১৮ সালে নিপা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় মূল ভূমিকা পালন করায় তিনিও সেসময় সম্ভাব্য নিশানায় ছিলেন।
হরি মেনন, ভারতে বিল ও মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের প্রধান, ২০১৯ সালে সম্ভাব্য নিশানা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: হিমাচল প্রদেশের বিধায়কের ভাষণ নেপালি সাংসদের সমালোচনা বলে চালানো হচ্ছে