এক ব্যক্তির হিন্দুদের অবমাননার ভিডিও ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবিসহ ছড়াল
বুমকে হরিদ্বারের সিটি এসপি স্বতন্ত্র কুমার সিং নিশ্চিত করে বলেন ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির নাম দিলীপ বাঘেল, জাভেদ হোসেন নয়।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয় যেখানে একজন ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম (Muslim) হিসেবে দাবি করে হিন্দুদের (Hindus) বিরুদ্ধে তাকে অবমাননাকর মন্তব্য করতে দেখা যায়। এই ভিডিও সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যকে নষ্ট করছে দাবি করে ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এই ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে একজন পাগড়িধারি ব্যক্তিকে নদীর ধারে বসে নিজেকে জাভেদ হোসেন বলে পরিচয় দিয়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে দেখা যায়। ভিডিওতে ওই ব্যক্তি হিন্দু ব্রাহ্মণদের কুকুরদের সাথে তুলনা করেন এবং অন্যান্য অবমাননাকর মন্তব্যও করেন।
এই ভিডিওতে আরেকজন ব্যক্তির গলাও শোনা যায় যিনি এই মন্তব্য গুলির বিরোধিতা করেন এবং বলেন তিনি এগুলো ধৈয্য ধরে এইজন্যই শুনছেন কারণ তিনি একজন হিন্দু।
তবে বুমকে হরিদ্বারের সিটি এসপি স্বতন্ত্র কুমার সিং নিশ্চিত করে বলেন ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির নাম দিলীপ বাঘেল, জাভেদ হোসেন নয়। এছাড়াও আমরা এই ব্যক্তির এক ভিডিও খুঁজে পাই যেখানে তিনি বলেন তার আসল নাম হল দিলীপ বাঘেল এবং তিনি নেশাগ্রস্থ অবস্থায় ওই মন্তব্যগুলি করেন।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ভিডিও পোস্ট করে লেখেন,"হিন্দুদের তীর্থ স্থান হরিদ্বারে বসে তীর্থ যাত্রীদের কাছে ভিক্ষা করে পেট চালায় জাভেদ হোসাইন। আর সেই স্থানে বসেই ব্রাহ্মণদের কুত্তা বলে গালি দিচ্ছে। হিন্দু ধর্মকে বকবাজ, ভূয়া বলেও গাল দিচ্ছে। প্রশ্ন কর্তা শুধু এতো টুকুই বল্লেন যে, আজ আমি হিন্দু বলেই হিন্দুদের গালি দিয়ে এখনো এখানে বসে আছেন। আজ আমার জায়গায় আপনি হলে কি আমাকে এভাবে আপনি ছেড়ে দিতেন?? তখন জাভেদ বললো, কখনো-ই ,,, না,,,, হয়তো ধর থেকে মাথা টা মাটিতেই গড়াগড়ি খেতো।"
ওই পোস্ট এখানে দেখা যাবে।
দক্ষিণপন্থী সংবাদ মাধ্যম সুদর্শন নিউজের সাংবাদিক সাগর কুমার এই ভিডিও পোস্ট করে হিন্দি ক্যাপশনসহ লেখেন,"আমার উত্তরাখণ্ডকে বাঁচান"।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এই ভিডিও আরেকজন ব্যবহারকারী পোস্ট করে লেখেন,"এনার পরিচয় জাভেদ হোসেন যিনি হিন্দু সাধুর বেশে একজন মুসলমান, ইনি ভিক্ষা করেন এবং হিন্দু ধর্মের ও হিন্দু ভগবানদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর ধারণা প্রকাশ করেন।"
এই পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমেই এমন এক পোস্টের উত্তর অংশে লক্ষ্য করে উত্তরাখণ্ড পুলিশের ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে এক স্পষ্টীকরণের উল্লেখ করেছে।
উত্তরাখণ্ড পুলিশের অফিসিয়াল এক্স প্রোফাইলে এই একই ব্যক্তির ভিডিও দেখা যায় এবং তার সাথে লেখা হয়,"ভিডিওর বিষয় তদন্ত করার সময় হরিদ্বার পুলিশ জানতে পারে একজন ব্যক্তি এই কথিত সাধুকে নেশার দ্রব্য দিয়েছিলেন এবং তাকে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে বলে সেই ভিডিও করেন। এই কথিত সাধুর বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিয়েছে হরিদ্বার পুলিশ।ভিডিওটি যে ব্যক্তি তৈরি করেছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।"
এই পোস্ট এখানে দেখা যাবে।
উত্তরাখণ্ড পুলিশের পোস্ট করা সেই ভিডিওতে ওই একই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়,"আমি দিলীপ বাঘেল, বাবার নাম ভগবতী প্রসাদ বাঘের। আমি ধমটা গ্রামের বাসিন্দা, ডাকঘর কুন্দল, এবং থানা আগ্রা জেলার ডাওকির। রাত ৯.৩০-১০.০০ নাগাদ একজন ব্যক্তি আমার কাছে আসেন গঙ্গা ঘাটে, আমায় একটি জিনিস খেতে বলেন এবং নিজের পরিচয় জাভেদ হোসেন হিসেবে দিতে বলেন...আমার আসল পরিচয় দিলীপ বাঘেল।"
এবিষয়ে আরও বিশদ বিবরণ পেতে আমরা কথা বলি হরিদ্বার এসপি সিটি স্বতন্ত্র কুমার সিংয়ের সাথে। তিনি বুমকে জানান এই ব্যক্তি হলেন একজন হিন্দু এবং উত্তরপ্রদেশের আগ্রার বাসিন্দা। আমরা জিজ্ঞেস করায় তিনি উত্তরাখণ্ড পুলিশের টুইট করা ভিডিওর বিবরণগুলিও সঠিক বলে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, "একজন ইউটিউবার প্রচার পাওয়ার জন্য এই কাজ করেন। আমরা এই ইউটিউবারের খোঁজ করছি। যদিও আমরা মুসলমান সেজে কথা বলা ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছি এবং তিনি এখন জেলে।"