নন্দীগ্রাম দিবস কী? পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ কেন?
নন্দীগ্রাম দিবস স্মরণে হুইল চেয়ারে বসে গাঁধীমূর্তির পাদদেশ থেকে হাজরা মোড় র্যালিতে অংশ নিলেন মমতা।
রবিবার চতুদর্শ বর্ষপূর্তি নন্দীগ্রাম দিবসের। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট (West Bengal Assembly Vote) আবহে এবছরের নন্দীগ্রাম দিবস (Nandigram Diwas) পালন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তৃণমূল কংগ্রেসের। হুইল চেয়ারে বসে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) গাঁধীমূর্তির পাদদেশ থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত র্যালিতে অংশ নেন। সাদা চাদর পাতা টেবিলে পুষ্পার্ঘ অর্পন করেন তিনি। পরে সেই টেবিল পৌঁছে দেওয়া হয় গাঁধী মূর্তির পাদদেশে। মমতা জনান এর পর দুর্গাপুরের সভার উদ্দেশে যাবেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন হাজরা মোড়ে জমায়েতে বলেন, "গণতন্ত্রের যন্ত্রনা বড়। অশুভ শক্তির যেন বিনাশ হয়। বাংলাকে ঘিরে চক্রান্ত নস্যাৎ হয় যেন। নন্দীগ্রাম বাসীকে ধন্যবাদ। মনে রাখবেন নিহত বাঘের থেকে আহত বাঘ ভয়ঙ্কর। হাজরা মোড় আমাকে আগে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে। গান্ধী মূর্তি থেকে শান্তির মিছিল শুরু করলাম তাই।''
২০০৭ সালের নন্দীগ্রাম ঘটনা
২০০৭ সালে তদানীন্তন বামফ্রন্ট পরিচালিত রাজ্যসরকারের আমলে সেজ প্রকল্প নিয়ে জমিঅধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে শিরোনামে উঠে আসে নন্দীগ্রাম। ২০০৭ সালের ২ জানুয়ারি তৃণমূল সমর্থিত কৃষি জমি রক্ষা কমিটির সদস্যদে সঙ্গে সিপিএম দলীয় কর্মীদের সংঘর্ষে নিহত হয় ৬ জন। শুরু হয় নন্দীগ্রাম আন্দোলন। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে আন্দোলনকারীরা বাধা দেয়। নির্বিচারে গুলি চালানোয় মারা যায় ১৪ জন ব্যক্তি। পুলিশের সঙ্গে সিপিএম কর্মীরাও ওই হামলাতে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ করে তৃণমূল কংগ্রেস।
২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সিবিআই এই ঘটনার দুটি চার্জশিট পেশ করে। ভাঙাবেড়িয়ায় পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা যার ফলে প্রথমে ১১ ও পরে আরও ৪ জন মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়। সিবিআই আরেকটি চার্জশিট পেশ করে অধিকারীপাড়ার ঘটনা নিয়ে। ওই চার্জশিটে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। এই চার্জশিটকে চ্যালেঞ্জজানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় নিহত ১৪ জনের পরিবারের লোকজন। হলদিয়া কোর্টে সিবিআই আবার অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। এই প্রথমবার ওই চার্জশিটে তিন পুলিশ আধিকারিকের নাম উল্লেখ করা হয়।
২০১৮ সালে রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি নতুন করে বিবৃতি দিয়ে জানায় তারা পুনরায় নন্দীগ্রাম ঘটনার তদন্ত শুরু করবে। প্রধান অভিযুক্ত সিপিআইএম নেতা লক্ষণ শেঠ পরে ২০১৬ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১৯ সালের আবার দলপরিবর্তন করে কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাজপেয়ী সহকর্মী প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিংহ তৃণমূলে যোগ দিলেন
কয়েকমাস আগে এক জনসভায় নন্দীগ্রাম থেকে বিধাসভা ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো মনোনয়পত্রও জমা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু আচমকা সেদিনই গাড়ির পাদানিকে পা রেখে জানলা দিয়ে হাত নাড়িয়ে জনসংযোগ করার সময় বাম পায়ের গোড়ালি, কাঁধে চোট পান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা অভিযোগ করেন ৪-৫ জন ভিড় থেকে ঠেলে দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়। ঘটনার দিনই রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মমতাকে। পায়ের পাতা ও গোড়ালিতে চিড় ধরা পরে। শুক্রবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। নির্বাচনী প্রচারে ছেদ পড়ে কিছুটা। রবিবার কর্যত নন্দীগ্রাম দিবস পালনের মধ্যে দিয়ে আবার ভোট প্রচারের ময়দানে ফিরে এলেন তিনি।
নন্দীগ্রামে একই বিধানসভা আসনে বিজেপি ঘোষণা করে তাদের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু অধিকারী পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রীত্ব ও একাধিক সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে বিজেপিতে যোগ দেন। নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থী করেছে মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে।
"ডাক্তার ১৫ দিন আমাকে বেড রেস্ট নিতে বলেছিল। কিন্তু নিবাচনের সময় প্রতিটা মূহূর্ত মূল্যবান। আমি হুইল চেয়ারে বসেই প্রচার করবো।'' ৭ দিন পর ডাক্তারের চেকাপ এদিন বলেন তিনি।
সকালে টুইট করে নন্দীগ্রামের নিহত পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরুপ বিশ্বাস, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ হাজির ছিলেন এদিনের পদযাত্রায়।
নন্দীগ্রামে মহাপঞ্চায়েত করতে হাজির হয়েছেন কৃষক আন্দোলনের অন্যতম মুখ উত্তরপ্রদেশের কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে দোলা সেন বিমানবন্দরে তাঁকে পুষ্পস্তবক সহ স্বাগত জানান।
আরও পড়ুন: জেনে নিন বামফ্রন্টের নির্বাচনী ইস্তেহারে কী কী বিষয়ে জোর