জেনে নিন বামফ্রন্টের নির্বাচনী ইস্তেহারে কী কী বিষয়ে জোর
নির্বাচনী ইস্তেহারে পরিযায়ী শ্রমিক, স্বচ্ছ নিয়োগ, কৃষি-শিল্পায়ন থেকে প্রান্তজনের স্বার্থরক্ষার কথা বলল বামফ্রন্ট।
কংগ্রেস ও ইসালামিক সেকুলার ফ্রন্টকে পাশে পেয়ে সংযুক্ত মোর্চার আসান ভাগাভাগিতে কার্যত শিলমোহর রাজ্য বাম ফ্রন্ট নেতৃত্বের। পলিটব্যুরোর তরফেও স্বীকৃতি মিলেছে এই গাঁটছড়ার। জামুরিয়াতে ঔশী ঘোষ, বালিতে দিপ্সিতা ধর কিংবা শতরুপের মত এক ঝাঁক নতুনের হাত ধরে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে কৌশলী ঘুঁটি সাজিয়েছে বামেরা।
বৃহস্পতিবার সপ্তদশ বিধানসভা ভোটের নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করল বামফ্রন্ট। শিক্ষা, কৃষি, শিল্পয়ন, কর্মসংস্থান, ধর্ম-নিরপেক্ষতা ও জনস্বাস্থ্য প্রভৃতি একাধিক বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে ওই ১৫ পাতার ইস্তেহারে।
কর্মসংস্থান সমস্ত সরকারি শূণ্যপদ পূরণ থেকে বেসরকারী ক্ষেত্রে স্বচ্ছ নিয়োগের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে মেধা তালিকা প্রকাশে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
১ বছরের মধ্যে মেধার ভিত্তিতে সরকারি-আধা সরকারি ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সমস্ত শূণ্যপদপূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকের কর্মদিবস বাড়িয়ে ১৫০ দিন করা, মজুরি বৃদ্ধি ও গ্রামাঞ্চল থেকে শহুরে এলাকায় প্রসারিত করার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। জোর দেওয়া হবে উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে।
শিক্ষায় রাজ্য বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক ও সরকারি ভাবে বাধ্যতামূলক করা হবে। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের পারিবারিক আয়ের নিরিখে এককালীন অর্থ সহায্য করা হবে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে পড়ার খরচ নিয়ন্ত্রণে আনার কথা বলা হয়েছে। অনুমোদিত মাদ্রাসাকে অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি জোর দেওয়া হবে মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনীকরণ ও সুসংহতকরণে। প্রত্যেক ব্লকে আইটিআই ও জেলায় নার্সিং স্কুল গড়ে তোলা হবে। ছাত্ররাজনীতির মান্যতা দিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য পরিসেবা রাজ্য সরকারের হাতে রেখে স্বাস্থ্যসাথীর বদলে জোর দেওয়া হবে বিনামূল্যের স্বাস্থ্য পরিসেবায়। ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক ও নার্সদের নিরাপত্তার দিকটিতে বিশেষ জোর দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ২০১৯ সালের বামফ্রন্টের ব্রিগেড জনসভার ছবি এবার ছড়াল বিজেপি অ্যাকাউন্ট
কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদিত ফসলের দামবৃদ্ধি, ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষকদের থেকে সরকারের প্রয়োজনমত ফসল ক্রয়ের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। ভূমিসংস্কারের ফলে জমি হারানো গরির কৃষকদের পুনর্প্রিতিষ্ঠা। রাজ্যে কেন্দ্রের পাশ করা তিনটি কৃষি বিল লাগু না করা ও এমপিএমসি আইন বাতিলের প্রসঙ্গ রয়েছে ইস্তেহারে।
শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে এলাকার সহমত ও পরিবেশের দিকটি মাথায় রাখা হবে। লাভজনক মূল্যের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অন্তত একজনকে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের বন্দ্যোবস্ত নেওয়া হবে। জৈব প্রযুক্তি ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের পাশাপাশি জোর দেওয়ার পাশা-পাশি ভারি শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হয়েছে।
শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে এই প্রথম নির্বাচনী ইস্তেহারে উঠে আসছে পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা। পরিয়ায়ী শ্রমিকদের জন্য রাজ্যে বিশেষ মন্ত্রাণালয় ও তাঁদের নথিভুক্ত করার প্রসঙ্গটি দেখা হয়েছে। বন্ধ কলকারখানা শ্রমিকদের মাসে ২, ৫০০ টাকা ভাতা ও রেশন সরবরাহ। শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা যাতে মাসিক আয় ২১,০০০ টাকা হতে পারে। অসংগঠিত শ্রমিক সুরক্ষা ও সরকারী কাজে নিযুক্ত অস্থায়ী শ্রমিকদের বেতন কাঠামো ও সামাজিত সুরক্ষা প্রকল্পের দিশা দেখানো হয়েছে।
জনজাতি, সংখ্যলখু ও প্রান্তিক উন্নয়ণে তফসিলি জাতি, জনজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের অধিকার রক্ষায় সংরক্ষণনীতির মানা হবে কঠোরভাবে। জনজাতি ও তফসিলি পড়ুয়াদের বুক গ্রান্ট ও ভাতা নিয়মিত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। জনজাতি ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনার সুযোগ পান দেখা হবে তাও। জোর দেওয়া হয়েছে প্রতিবন্ধাকতাযুক্ত মানুষজনদের অধিকারের বিষয়গলিতে। প্রতিবন্ধী শংসাপত্র পাওয়ার জন্য শিবির ও নিয়মিতভে ভাতা প্রদান ও বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, অধিকার ও উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে ইস্তেহারে।
জোর দেওয়া হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের (LGBTQIA+) মানুষদের উন্নয়নেও। উল্লেখ্য, এবারের বামেদর ব্রিগেডে এই সমাজের মানুষজন প্রথম অংশ নিল। বাম নেতা মহঃ সেলিম তাঁর বক্তব্যের শুরুতেও উল্লেখ করেন প্রান্তজনদের কথা।
দেখুন ওয়েবস্টোরি: বিধানসভা ভোটের বৈতরণী পেরতে ব্রিগেড মাঠে জন্ম নিল সংযুক্ত মোর্চা
বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে গরিব মানুষদের জন্য ভর্তুকির পাশাপাশি ২০০ ইউনিট বিনামূল্যে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কৃষিকাজের জন্য অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চালু করা হবেনা ও ১৯৭১ সাল পরবর্তী নাগরিক পুনর্বাসনের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হবে।
নিচে বিস্তারিত পড়ুন: