হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হয়েছে ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ তালিকার এক ভুয়ো ছবি
হোয়াটসঅ্যাপে প্রচারিত ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের ভুল তালিকা খন্ডন করেছে আরবিআই। বৃত্তি-প্রাপক সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতেই ওই পোস্ট।
হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল-হওয়া ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের এক ভুল তালিকা খারিজ করে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)। বলেছে, ওই তালিকা তারা তৈরি করেনি।
তালিকায় পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ করা হয়েছে বলে দাবি।
ব্যাঙ্ক একীকরণের ওই তালিকা শেয়ার করার মধ্যে দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বৃত্তিপ্রাপক পড়ুয়াদের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। বলার চেষ্টা হয়েছে যে, তারা যেন তাদের পরিবর্তিত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য ‘সংখ্যালঘু দপ্তর’কে জানিয়ে দেয়। তা না করলে, তাদের বৃত্তি তাদের কাছে পৌঁছবে না। ছবিটি নীচে রয়েছে।
ছবিটি বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে (৭৭০০৯০৬১১১) একাধিকবার আসে।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ৩০ অগস্ট কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করার পরই ওই ছবি ভাইরাল হয়। সরকার চার ভাগে ১০ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মিলন ঘটিয়ে, ৪ সংযুক্ত ব্যাঙ্ক তৈরি করার কথা ঘোষণা করে।
ছবিটিকে কেন ভুয়ো বলা হচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করছে বুম।
ছবিটি খন্ডন করেছে আরবিআই
রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে দেখা যাচ্ছে যে, ওই তালিকার ছবিটি প্রথমে প্রকাশিত হয় একটি ব্লগে। ব্লগটি এখন আর নেই। তবে গুগুলের সংগ্রহে সেটি আছে। দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে।
ছবিটি ২৫ মে তারিখের ‘কোরা’ ওয়েবসাইটেও আছে। সেটির আর্কাইভ করা আছে এখানে। ছবিটেতে একটি আরবিআইয়ের প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সেটিকে জাল বলে খারিজ করে দিয়েছে।
আরবিআইয়ের একজন আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে বুম। উনি জানান,
“এই বিজ্ঞপ্তি আমরা দিইনি। সঠিক তথ্যের জন্য, আরবিআইয়ের ওয়েবসাইট দেখুন।”
তাছাড়া বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত রটনা সম্পর্কে আরবিআই আবারও এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। দু’ দিনের মধ্যে সেটা ছিল তাদের দ্বিতীয় ঘোষণা।
সংযুক্ত হওয়া ব্যাঙ্কের তালিকা বেঠিক
যে ব্যাঙ্কগুলিকে বড় ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে, ভাইরাল তালিকায় সেগুলির নাম সঠিক নয়।
দ্বিতীয় সেটে দেখানো হয়েছে যে, দেনা ব্যাঙ্ক আর বিজয়া ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ বরোদার সঙ্গে যুক্ত করা হবে। কিন্তু তথ্যটি বেঠিক। কারণ, ওই সংযুক্তিকরণ ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে। এ বছরের ১ এপ্রিল সে কাজ সম্পন্ন হয়। সে সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন এখানে।
বাকি চারটি অংশও বেঠিক
৩০ অগস্ট অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন:
- ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স আর ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশে যাবে।
- অন্ধ্র ব্যাঙ্ক এবং করপোরেশন ব্যাঙ্ক মিশে যাবে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে।
- ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশে যাবে এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক।
- কানাড়া ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হবে সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক।
অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা দেখা যাবে এখানে।
ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক, ইউকো ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র এবং সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া একক ব্যাঙ্ক হিসেবেই থেকে যাবে। সংযুক্তি প্রক্রিয়ার পর ভারতে কতগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থাকবে, তার তালিকা দেওয়া হল নীচে। সংযুক্তিকরণের পরিকল্পনা ঘোষণা করার সময় সীতারামন ওই তালিকা প্রকাশ করেন।
২০১৮ সালের অগস্ট-এর পরে, আইডিবিআই ব্যাঙ্ক থেকে নিজের নিয়ন্ত্রক শেয়ার লাইফ ইনসিওরেন্স করপোরেশনকে হস্তান্তর করে সরকার। সে বিষয়ে পড়ুন এখানে।
ব্যাঙ্ক শিল্পের ওপর ভুয়ো খবরের আঘাত
পাঞ্জাব অ্যান্ড মহারাষ্ট্র ব্যাঙ্কের ওপর বিধিনিষেধ আরোপিত হওয়ার পর ইন্টারনেটে আর্থিক ভীতি ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
এর আগে, সোশাল মিডিয়ায় একটি মিথ্যে খবর ছড়িয়ে ছিল। বলা হয়েছিল, আরবিআই নাকি ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বন্ধ করে দিতে চলেছে। বুম সেই খবরটি নস্যাৎ করে।
আরও পড়ুন: ভুয়ো সোশাল মিডিয়া বার্তায় রটানো হচ্ছে যে, আরবিআই ৯ টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বন্ধ করে দিতে চলেছে