অবরুদ্ধ কাশ্মীরে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে পুরনো ভিডিয়ো আর ছবি
বুম দেখেছে যে সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের পর পুরনো ঘটনার বহু ছবি আর ভিডিয়ো নতুন করে শেয়ার করা হচ্ছে।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/08/Old-photos_Kashmir_featured-image-1.jpg)
কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করার এবং জম্মু ও কাশ্মীরের স্পেশাল স্টেটাস প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরই বেশ কিছু পুরনো ছবি আর ভিডিয়ো নতুন করে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ঘুরতে আরম্ভ করেছে। ছবিগুলির সঙ্গে বর্তমান ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।
কাশ্মীর এখন অবরুদ্ধ। সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট বন্ধ, এবং বিপুল সংখ্যক জওয়ান উপত্যকায় নিযুক্ত হয়েছেন। ফলে, কাশ্মীর থেকে কোনও তথ্যই বাইরে আসছে না। এই অবস্থায় সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু পুরনো ছবি আর ভিডিয়ো শেয়ার করা হচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে যাতে দাবি করা হচ্ছে যে উপত্যকায় সামরিক অত্যাচার চলছে।
উর্দিধারী দুই জওয়ান এক নাগরিককে মারছেন, সেই ভিডিয়ো
সামরিক উর্দিধারী দুই জওয়ান এক নাগরিককে মারছেন, এমন একটি উদ্বেগজনক ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সঙ্গে দাবি, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পর এক কাশ্মীরিকে এ ভাবে মারধর করা হয়েছে।
বুম ভিডিয়োটি বিশ্লেষণ করেছে, এবং ভিডিয়োটির একটি ফ্রেম বেছে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখেছে যে ভিডিয়োটি ২০১৭ সাল থেকেই ভাইরাল। ২০১৭ সালের ১৫ এপ্রিল ডিএনএ সংবাদপত্র ভিডিয়োটির একটি স্টিল টুইট করেছিল। ক্যাপশনে লিখেছিল, “আজাদি চাহিয়ে তুঝে’: ভারতীয় সেনারা কাশ্মীরি মানুষকে মারধর করছে, সেই অভিযোগের পক্ষে ভিডিয়ো পাওয়া গেল।”
২০১৭ সাল থেকে যে দুটি ভিডিয়ো ভাইরাল, এটি সেগুলোর মধ্যে একটি। অন্য ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে, একটি গাড়ির তিন সওয়ারিকে বারে বারেই হেনস্তা করা হচ্ছে এবং পাকিস্তান-বিরোধী স্লোগান দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
বুম এই ঘটনাটি সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পেয়েছে, কিন্তু ঠিক কোথায় এই ভিডিয়োটি রেকর্ড করা হয়েছিল, তা নিশ্চিত করে জানতে পারেনি। এখানে ও এখানে পড়ুন।
আরও পড়ুন: বিহারে মাদ্রাসা শিক্ষকদের উপর পুলিসের লাঠিচার্জের ২০১৫ সালের ভিডিও কাশ্মীরের ঘটনা বলে শেয়ার করা হল
ফুটপাথে পড়ে থাকা মৃতদেহের ছবি
ফুটপাথে পড়ে আছে এক তরুণের মৃতদেহ, এবং তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন তিন উর্দিধারী জওয়ান, এমন একটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে। সঙ্গে দাবি, জম্মু ও কাশ্মীরের স্পেশাল স্টেটাস প্রত্যাহার করে নেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উপত্যকায় যাঁরা প্রতিবাদ করছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী তাঁদের হত্যা করছে।
ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা বেশ কিছু ব্লগ ও সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে বিভিন্ন প্রতিবেদনের সন্ধান পাই। যে পোস্টগুলিতে এই ছবি ব্যবহৃত হয়েছে, তার বেশির ভাগই ২০১০-১১ সালের।
২০১৭ সালের পয়লা ডিসেম্বর ফ্রি প্রেস কাশ্মীরের একটি প্রতিবেদনের সঙ্গেও এই ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছিল। পত্রিকাটি কাশ্মীরের অন্যতম জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকা। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল: ‘কবীর চাচা: ছিলেন সম্পন্ন ব্যবসায়ী, হয়ে গেলেন কাশ্মীরে বেওয়ারিশ লাশের পাহারাদার’। প্রতিবেদনটিকে শেখ আবদুল কবীর ওরফে কবীর চাচার কথা বলা হয়েছে, যিনি উপত্যকায় বেওয়ারিশ লাশের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।
এই ভাইরাল ছবিটি প্রতিবেদনটির সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে কেন, সেই কারণ ব্যাখ্যা করে প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়েছিল, “এই ছেলেটি নিহত হয়েছিল ২০০০-এর গোড়ার দিকে। ডাল গেটের সামনে তার মৃতদেহটি জনসমক্ষে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। কবীর চাচা সিদিকাবাদ কবরখানায় তাকে গোর দেওয়ার জন্য আনেন। এই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বারে বারেই শেয়ার করা হয়েছে।”
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/08/Dead-boy-of-Kashmiri-on-footpath-768x780-700x711.jpg)
কাশ্মীরের পুরনো ছবি, প্যালেস্তাইনের তরুণীর ছবি
কাশ্মীরে সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুটি ছবি— একটি ছবিতে এক জখম তরুণীকে দেখা যাচ্ছে, অন্য ছবিতে দুই অল্পবয়স্ক মেয়ে কাঁদছে— নতুন করে শেয়ার হতে আরম্ভ করেছে।
৪ অগস্ট এক পাকিস্তানি সাংবাদিক ছবিদুটি শেয়ার করেন। ক্যাপশনে লেখেন, “তা হলে আপনারা কাশ্মীরে আপনাদের বীরত্ব নিয়ে গর্বিত? লজ্জা, এবং কী মারাত্মক লজ্জা! আপনাদের নৃশংস সেনাবাহিনী কাশ্মীরের নিরপরাধ, নিরস্ত্র মানুষকে মারছে। এটাই যদি আপনাদের বীরত্ব আর সাহসিকতার মাপকাঠি হয়, তবে সেই সাহসকে আমরা শত ধিক্কার জানাই। উৎযাপন করবেন না, বরং লজ্জিত হোন। কাঁদুন!”
প্রথম ছবিটি ২০১৪ সালের, গাজায় এক আহত তরুণীর।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/08/gaza-teen-injured-1-487x365.jpg)
বুম জানতে পেরেছে যে ছবির তরুণী গাজার বাসিন্দা। তাঁর নাম রাওয়া আবু জোমা। ইজরায়েলি বিমানহানা চলার সময় তার বাড়িতেই আহত হন তিনি। ছবিটি বহু আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে ব্যবহৃত হয়েছে। চিত্রগ্রাহকের নাম হেইদি লেভিন। রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের প্রতিনিধি মালিহা লোধি যখন এই ছবিটিকে কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর ছররা গুলিতে আহত তরুণীর ছবি বলে চালাতে চেয়েছিলেন, বুম তখন সেই দাবির সত্যতা অনুসন্ধান করে। সেই তথ্য যাচাইটি এখানে পড়া যাবে: রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের প্রতিনিধি গাজার ছবিকে কাশ্মীরে ছররা গুলিতে আহতের ছবি বলে দেখালেন
দ্বিতীয় ছবিটি কাশ্মীরেরই, কিন্তু কাঁদতে থাকা দুই মেয়ের এই ছবিটি তোলা হয়েছিল ২০০৪ সালে। ছবিটি বর্তমানের নয়।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/08/2004-Kashmiri-girls-photo.jpg)
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখেছ, ছবিটি ২০০৪ সালের। দুই তরুণী কাঁদছিলেন, কারণ তাঁদের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রীনগরে যে বিস্ফোরণ ঘটে, তার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
আমরা দেখতে পেয়েছি, ছবিটি আপলোড করেছিল সংবাদসংস্থা রয়টার্স। ছবিটি তুলেছিলেন যে চিত্রগ্রাহক, তাঁর নাম দানিশ ইসমাইল। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছিল, ‘১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ শ্রীনগরে যে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় গ্রেফতার হওয়ায় কাশ্মীরের দুটি মুসলমান মেয়ে কাঁদছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, একটি বিস্ফোরক ঠাসা স্কুটারে বিস্ফোরণ ঘটে মঙ্গলবার বিকেলে। কিন্তু ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। রয়টার্স/ দানিশ ইসমাইল’
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/08/Photo-of-two-Kashmiri-girls-crying-768x591-700x539.jpg)