একদল ক্রুদ্ধ জনতা ছেলেধরা সন্দেহে দুই মহিলাকে বেদম মারছে, এমন একটি দৃশ্যের ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এই নিগৃহীত মহিলারা কাশ্মীরি। ভিডিওটিকে সম্পাদনা করে সঙ্গে একটি বিভ্রান্তিকর ভাষ্যও জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে বলা হচ্ছে, ঘটনাটি কাশ্মীরের।
কেন্দ্রের ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার ৫ অগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পর থেকেই এই ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে। সেই থেকেই গোটা রাজ্যটির সংযোগব্যবস্থা ছিন্ন করে দেওয়া হয় এবং ইন্টারনেট পরিষেবাও সরকার স্থগিত করে দেয়।
বুম-এর হেল্পলাইন নম্বরেও (৭৭০০৯০৬১১১) এই ভিডিওটি পাঠিয়ে এর সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ এসেছে।
ভিডিওটির দৃশ্য অস্বস্তিকর হওয়ায় আমরা সেটিকে প্রতিবেদনের অন্তর্ভুক্ত করিনি।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দুই মহিলা সমবেত জনতার কাছে কাতর আবেদন জানালেও তা উপেক্ষা করে তাঁদের নৃশংসভাবে লাথি-ঘুষি মারা হচ্ছে।
সঙ্গে হিন্দিতে জুড়ে দেওয়া ধারাভাষ্যে বলা হচ্ছে, “সেলাম আলেকুম! বন্ধুরা সব কেমন আছেন? আমি এই ভিডিওটা কাশ্মীর থেকে পেয়েছি। আপনারা যদি না জানেন, তাহলে আপনাদের জানাই, এটা কাশ্মীরেরই ঘটনার দৃশ্য। নিজের চোখেই আপনারা দেখতে পাবেন, কাশ্মীরে এখন ঠিক কী ঘটে চলেছে। এবং এ রকম ভিডিও আমরা নিয়মিতই পাচ্ছি। আমরা সেগুলো দেখি আর মিনিট দুয়েকের জন্য আমাদের অস্বস্তি হয়। কিন্তু এ বার আমরা এই ভিডিওগুলো গণমাধ্যমে ছাড়ছি, যাতে সকলেই এ বিষয়ে জানতে পারে এবং বিষয়টা ইমরান খান পর্যন্ত পৌঁছয়। যদি প্রধানমন্ত্রী এই ভিডিও দেখেন, তবে হয়তো তাঁর মনেও দয়ার ভাব জাগবে, যদিও আমি এ ব্যাপারে শপথ করে কিছু বলতে পারছি না।”
তথ্য যাচাই
এই একই ভিডিও অগস্ট মাসেও ভাইরাল হয়েছিল, যখন বিহারের রোহতাস জেলায় ঘটনাটি ঘটে এবং পুলিশ নিগ্রহকারী সন্দেহে কয়েকশো লোককে গ্রেফতার করে।
প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ২৬ জুলাই, ২০১৯, সঙ্গীতা দেবী ও বেবি দেবী নামে এই দুই মহিলা, যাদের সঙ্গে তিনটি বাচ্চাও ছিল, রোহতাসের মালিয়াবাগ যাওয়ার পথনির্দেশ লোকজনের কাছে জানতে চাইছিলেন। লোকেরা যখন বাচ্চাগুলোর পরিচয় জানতে চায়, তখন ওই দুই মহিলার মধ্যে একজন ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারেনি। আর তাতেই তাদের সন্দেহ হয়, এরা বুঝি ছেলেধরা।
জাগরণ সংবাদপত্রের রিপোর্টে প্রকাশ, পুলিশ দুই মহিলাকে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করতে গেলে জনতা তাদেরও মারধর করে। পরে স্থানীয় পুলিশ প্রায় ৫০০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে।
বুম টিভি৯ ভারতবর্ষ-এর একটি ভিডিও প্রতিবেদনও খুঁজে পেয়েছে, যেখানে আক্রান্ত দুই মহিলার সঙ্গে সাংবাদিক কথা বলছেন। ভিডিওটির ১ মিনিট ২২ সেকেন্ডের মাথায় মহিলারা জানাচ্ছেন, কী ভাবে তারা পথনির্দেশ জানতে চাওয়ার পর নিগৃহীত হন।