দীপাবলির রাতে একটি গরিব মেয়ে মঞ্চের প্রদীপ থেকে সর্ষের তেল সংগ্রহ করছিল। এই ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পরই ভাইরাল হয় আরও একটি ছবি। তাতে দাবি করা হয়, অযোধ্যার ছবিটি আসলে ভুয়ো, ছবির মেয়েটি রোহিঙ্গা মুসলমান। এই দাবিটিই আসলে মিথ্যে।
দুটি ছবি পাশাপাশি জুড়ে তৈরি করা গ্রাফিকটিতে ওপরে ডান দিকে রয়েছে একটি রোহিঙ্গা মুসলমান মেয়ের ছবি, আর নীচে ডান দিকে রয়েছে অযোধ্যার মঞ্চ থেকে তেল সংগ্রহ করা মেয়েটির ছবি। বাঁ দিকে রয়েছে একটি গুগল ইমেজ সার্চের স্ক্রিনশট, যাতে হিন্দিতে ‘রোহিঙ্গা’ কথাটি লিখে সার্চ করা হয়েছে।
এই গ্রাফিকটির সঙ্গে হিন্দিতে যে বয়ানটি রয়েছে, তা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “এই রোহিঙ্গা মুসলমান মেয়েটি এখান থেকে এখানে পৌঁছে গেল কী করে? সব কিছুই নকল, (ওরা) কাছ থেকে একটা ছবি তুলে সেটাকে ভাইরাল করে দিয়েছিল। কিন্তু গুগ্ল হাটে হাঁড়ি ভাঙল।”
হিন্দু ধর্ম যোদ্ধা নামক ফেসবুক পেজে পোস্ট করা ছবিটি ১৫,০০০ বারের বেশি শেয়ার করা হয়েছে।
ফেসবুক পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে ও টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বুম দেখেছে যে মেয়েটি তেল সংগ্রহ করছে, এই ভিডিওটির সঙ্গে এই একই মিথ্যে দাবি যোগ করে তা ফেসবুকেও শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম নিশ্চিত হয়েছে যে দুটি ছবির মেয়েদুটি এক নয়।
প্রথম ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা গিয়েছে যে ছবিটি ২০১৭ সালের, সংবাদসংস্থা এএফপি-র তোলা, এবং তা গেটটি ইমেজেস-এ পাওয়া যাচ্ছে। স্টক ফটো ওয়েবসাইট গেটি ইমেজেস-এর মাধ্যমে এএফপি-র জন্য ছবিটি তোলেন কে এম আসাদ।
ছবিটির সঙ্গে যে ক্যাপশন লেখা হয়েছে: “মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের নতুন দলটিকে দেখছে এই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু বালিকা। ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, উখিয়া। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন ১২৫,০০০-র বেশি উদ্বাস্তু। তাদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা— তারা ধর্মে মুসলমান, বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ মায়ানমারের সরকার যাদের সাধারণত নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।"
লাইভমিন্ট-এর একটি প্রতিবেদনেও ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে।
২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর নাগাদ দ্বিতীয় ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে আরম্ভ করে। ছবিটিতে যে বৈপরীত্য ফুটে উঠেছে, তার জন্য উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে দায়ী করে অনেকই ছবিটি টুইট করেন।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যাচ্ছে, ২৯ অক্টোবরের আগে এই ছবিটি ব্যবহৃত হওয়ার কোনও উদাহরণ নেই। ছবিটিতে যে মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে, তার পরিচয় জানা যায়নি। তবে, কোনও পোস্ট বা টুইটেই তাকে রোহিঙ্গা মুসলমান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি।
রোহিঙ্গা মুসলমান মেয়েটির ছবি ২০১৭ সালে তোলা, দ্বিতীয় ছবিটির দু’বছরেরও বেশি আগে। কাজেই, ছবিটি যদি একই মেয়ের হয়, তবে তারা সমবয়সী হতে পারে না।
দুটি ছবির মেয়েদুটির চেহেরায় অনেক বৈপরীত্য আছে, যা বুম-এর নজরে এসেছে। ভ্রূ, চোখ, নাক, ঠোঁট, সবই স্পষ্ট ভাবে আলাদা।