রুগ্ন জাতীয় বিমান পরিষেবা এয়ার ইন্ডিয়া কি ২০১১ সালে তদানীন্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির স্ত্রীর কাছ থেকে ২৮ কোটি টাকায় ৮টি ছবি কিনেছিল ? এশিয়ানেট নিউজ নেটওয়ার্ক-এর মালিকানাধীন মাইনেশন.কম-এর সম্পাদক অভিজিত মজুমদার ২০১১ সালের ১৪ অগস্ট টুইট করে জানিয়েছিলেন, এলিজাবেথ অ্যান্টনি ২৮ কোটি টাকায় এয়ার ইন্ডিয়াকে তাঁর আঁকা ৮টি ছবি বেচেছেন।
তাঁর ওই টুইট ৪০০টি 'লাইক' পায় এবং ৩৪০০ জন সেটা পুনরায় টুইট করেন। একই সঙ্গে টুইটটি 'মিথ্যা' জানিয়ে প্রায় শ' দেড়েক জবাবও আসে, যার ভিত্তি ছিল তথ্য জানার অধিকার আইনে রচিত সংস্থা আরটিআই-এর দেওয়া উত্তরের উপর ভর করে রচিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন। ৬ বছর আগের সেই বিতর্কটি এ বছর জুলাই মাসে আবার খুঁচিয়ে তুলে কয়েকজন টুইট করেছেন। অভিজিত মজুমদারের ভূতপূর্ব নিয়োগকর্তা ইন্ডিয়া টুডে গোষ্ঠী প্রথম রিপোর্ট করে যে, ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) এলিজাবেথ অ্যান্টনির কাছ থেকে ছবি কিনেছে এবং সেই প্রতিবেদন ২০১১ সালে ইন্ডিয়া টুডে এবং ২০১২ সালে মেইল টুডে ছাপিয়ে প্রচার করে। অভিজিত বাবু সম্প্রতি ছেড়ে যাওয়ার আগে এই সেদিন পর্যন্ত ছিলেন মেইল টুডে-র কার্যনির্বাহী সম্পাদক। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মী এলিজাবেথ অ্যান্টনি তাঁর এনজিও নবুথন চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন-এর তহবিল সংগ্রহের জন্য ল্যান্ডস্কেপ বা নিসর্গ চিত্র আঁকা শুরু করেন। এই এনজিওটি ক্যান্সার-আক্রান্ত পরিবারগুলির মহিলাদের সাহায্য করে থাকে। তাঁর স্বামী এ কে অ্যান্টনি ২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে জানায়, তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩ নং টার্মিনালের জন্য এয়ার ইন্ডিয়া এলিজাবেথ অ্যান্টনির কাছ থেকে দুটি নিসর্গ চিত্র কিনেছে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল—"দেউলিয়া এয়ার ইন্ডিয়া এ কে অ্যান্টনির স্ত্রীর আঁকা ছবি কিনছে" । ২০১১ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে সংবাদের কোনও সূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। (আর্কাইভ থেকে প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য ক্লিক করুন). ( (Click here to view an archived version)
২০১২ সালের জুনে মেইল
টুডে-র প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অজানা অঙ্কের টাকা দিয়ে এলিজাবেথ অ্যান্টনির কাছ থেকে ৮টি ছবি কিনেছে। একটি সূত্র উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে ২৮ কোটি টাকার অঙ্কও জুড়ে দেওয়া হয়। মেইল
টুডে-র ওই প্রতিবেদনটি এখন আর বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায় না। শেষ বারের মতো সেটি দেখা গিয়েছিল চলতি বছর ২০১৮ সালের ১৩ অগস্ট।
India Today Story On Air India Paintings বুম অবশ্য ওই প্রতিবেদনটির একটি সংস্করণ খুঁজে-পেতে সংগ্রহ করেছে। (আর্কাইভ থেকে প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য ক্লিক করুন)
India Today এয়ার ইন্ডিয়ার মুখপাত্র এবং ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা কোনও উত্তর দেননি। ইন্ডিয়া
টুডে বা মেইল
টুডে-র কাছে বার্তা পাঠিয়েও কোনও জবাব মেলেনি। বুম অবশ্য এলিজাবেথ অ্যান্টনির সঙ্গেও যোগাযোগ করে এবং তিনি ওই পুরনো ইস্যুটা আবার খুঁচিয়ে তোলার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "আমাদের এনজিও-র এক সদস্য গুজবটি প্রথম ছড়ানোর পরেই আরটিআইয়ের কাছে সত্য উন্মোচনের জন্য দ্বারস্থ হয়। ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আরটিআই-কে প্রশ্নের জবাবও দেয়, যাতে ছবির জন্য দেওয়া দামেরও উল্লেখ ছিল।" এয়ার ইন্ডিয়া তাঁর কাছ থেকে কোনও ছবি কিনেছে কিনা জানতে চাইলে এলিজাবেথ বলেন, "ছবি তো দূরের কথা, এয়ার ইন্ডিয়া আমার কাছ থেকে কোনও ছবির ব্রোশিওর-ও কখনও কেনেনি"। তিনি আরও জানান—৮টি ছবি কেনার যে গপ্পো ফাঁদা হয়েছে, তার লক্ষ্যই হল তাঁকে হেয় করা। "সেই জন্যই আমরা আরটিআইয়ের দ্বারস্থ হই, যাতে এ ব্যাপারে সব সংশয় দূর করা যায় এবং খুঁটিনাটি যাবতীয় তথ্য প্রকাশ্যে আসে। এ ব্যাপারে আমার আর কিছু যোগ করার নেই।" ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এম এস বিষ্ণু শংকরের তোলা একটি আরটিআই অনুসন্ধানের জবাবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া উত্তরটি এলিজাবেথ অ্যান্টনির কর্মীদের
ফেসবুক পেজ-এ পোস্ট করা হয়। https://www.facebook.com/navoothanfoundation/photos/a.773932606025415.1073741829.202137743204907/1128387340579938/?type=3&theater এ কে অ্যান্টনিও ২০১২ সালে এই ভুয়ো গুজবকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে দেন (Click
here )
Full View ২০১৬ সালের ৪ জুলাই আরটিআই-কে দেওয়া জবাবে তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দরের তরফে জনানো হয়, তারা এলিজাবেথ অ্যান্টনির এনজিও নবুথন চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে মাত্র দুটি নিসর্গ চিত্র কিনেছিল এক-একটি ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দরে, উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালে যাত্রীদের আগমন ও প্রস্থানের জন্য নির্দিষ্ট লাউঞ্জে সে দুটি টাঙিয়ে রাখা। ২০১৬ সালের ১৯ অগস্ট ডেকান ক্রনিকল সংবাদপত্রে আরটিআইয়ের ওই উত্তরটি ছাপাও হয় এই শিরোনামেঃ
এ কে অ্যান্টনির স্ত্রীকে ক্লিন চিট দিল আরটিআই ।
RTI reply on paintings সরকার যখন ঋণগ্রস্ত এয়ারলাইন বিক্রি করে দিতে উদ্যত, তখন তার সুসময়ের কাল থেকে সংগৃহীত এয়ার ইন্ডিয়ার শিল্পকলার সম্ভার রীতিমত উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু ওই সব বহুমূল্য শিল্পসামগ্রী অবহেলায় ফেলে রাখা, অফিসার-কার্যকর্তাদের বাড়ি সাজাতে অমূল্য সব চিত্রকলা 'ধার দেওয়া' এবং তারপর সেগুলির কথা বেমালুম 'ভুলে যাওয়া', সর্বোপরি বিভিন্ন সময়ে কেনা শিল্পসামগ্রীর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব না-রাখার ফলে এয়ার ইন্ডিয়ার সংগ্রহে সঞ্চিত আধুনিক শিল্পকলার দুর্দান্ত সম্ভারের সঠিক দাম নির্ণয় করাও এখন দুরূহ।