ইন্দোনেশিয়ার বালি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এক মহিলা একজন অভিবাসন অফিসারকে চড় মারছেন এমন দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে। দাবি করা হয় মহিলা ভারতীয়। সত্যিই কি তাই?
দাবি: একটি ১.০৫ মিনিটের ভিডিও যাতে এক উত্তেজিত মহিলা একজন অভিবাসন অফিসারকে গালিগালাজ করতে ও অবশেষে রাগের বশে তাঁকে চড় মারতে দেখা যায়, ফেসবুক আর টুইটারে ভাইরাল হয়ে যায়। দাবি করা হয় ওই মহিলা একজন ভারতীয় এবং তাঁকে ৩ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। এক টুইটার হ্যান্ডল @trehan_brakha এই দাবি করে ভিডিওটি টুইট করেন, যেটি ২০,০০০ বারেরও বেশি দেখা হয়েছে।
ত্রেহান লিখেছেন যে ভারতের এক মহিলাকে একজন অভিবাসন অফিসারকে থাপ্পড় মারার জন্য ৩ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়ে হয়ে যায় এবং ত্রেহান সহ অনেকেই ওই মহিলার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
অনেক ফেসবুক ব্যবহারকরি বালি কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপের দিকে দৃষ্টিআকর্ষণ করে ঘটনাটির সঙ্গে তানভি সেঠ-এর অভিজ্ঞতার তুলনা করেন। উত্তরপ্রদেশের মহিলা তানভি সেঠ এক পাসপোর্ট অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে এক মুসলিমকে বিয়ে করা সত্বেও তিনি তাঁর বিয়ের আগের পদবী ব্যবহার করছেন বলে ওই ভদ্রলোক তাঁকে হেনস্তা করেন। বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের অধীননস্ত বিদেশ মস্ত্রক ওই অফিসাররে বিরুদ্ধে নিজের কাজের এক্তিয়ার লংঘন করার জন্য পদক্ষেপ নেয়। ফেসবুকে ত্রেহানের পোষ্ট ৩০,০০০ বারেরও বেশি দেখা হয়েছে আর শেয়ার হয়েছে ৬৪০ বারেরও বেশি।
Screenshot of a Facebook post[/caption] ত্রেহান আক্ষেপ করে লেখেন যে, বালির ঘটনা ভারতে ঘটলে অফিসারটিরেই শাস্তি হত কারণ ওই মহিলা তাঁর বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ আনতেন।
সত্য: অজ-এ তাকাদ্দাস বলে যে মহিলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে তিনি আসলে পাকিস্তানী বংশোদ্ভুত একজন ব্রিটিশ নাগরিক। বিবিসি ইন্দোনেশিয়া (Click
here) সহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলি তাদের রিপোর্টে বলে তাকাদ্দাস একজন “ব্রিটিশ নাগরিক যাঁর জন্ম হয়েছিল লাহোরে”।
যুক্তরাজ্যের মিরর ও রাশিয়ান ওয়েবসাইট স্পুটনিক-ও (Click
here) মহিলা কে “পাকিস্তানী বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক” বলে আক্ষ্যা দিয়েছে। তাকাদ্দাসের পাসপোর্ট ব্রিটিশ আর ওই ঘটনা সংক্রান্ত অনেক
ছবিতেই তা দেথা গেছে। পাসপোর্টে তাঁর জন্মস্থান লাহোর বলেই দেখান আছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, তাকাদ্দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়নি; অভিবাসন অফিসাররা তাঁকে আটক করেন মাত্র। ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় খবরের ওয়েবসাইটগুলির রিপোর্ট বলছে অভিবাসন অফিসারকে চড় মারার অভিযোগের বিচারের জন্য তাকাদ্দাস ডেনপাসার জেলা কোর্টে হাজিরা দেন কিন্তু অগস্ট ৮ অবধি শুনানি স্থগিত হয়ে যায়। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে দন্ডিত করা যাবে না। তাছাড়া, তাকাদ্দাস হলেন একজন পদার্থবীদ ও রেডিওগ্রাফার যাঁর অনেকগুলি প্রকাশিত গবেষণাপত্র ‘রিসার্চ গেট’এর মত বিজ্ঞানী ও গবেষকদের নেটওয়ার্কিং সাইটে পাওয়া যায়। বুম তাদের মধ্যে
একটি খুলে দেখে। তাঁর পরিচিতিতে তাঁকে “ব্রিটিশ-পাকিস্তানী” বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
কি ঘটেছিল? জুলাই মাসের ২৮ তারিকে, তাকাদ্দাস সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন, কিন্তু অভিবাসন অফিসাররা দেকখেন যে তাঁর ভিসার মেয়াদ ছাড়িয়ে তিনি ১৬০ দিন বেশি থেকে গেছেন। তাঁর ভিসা এ বছর ফেব্রুয়ারি ১৮ শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফলে, প্লেনে ওঠার বোর্ডিং পাস থাকা সত্ত্বেও কর্মরত অফিসাররা আটক করেন তাঁকে। অন্যান্য যাত্রীদের যাতে অসুবিধে না হয়, সে জন্য তাঁকে নাকি অন্য এক ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সোমবার, জুলাই ৩০, আরও জিজ্ঞাসাবদের জন্য জিমবারানের অভিবাসন অফিসে আসতে বলা হয়। বিবিসি ইন্দোনেশিয়ার রিপোর্ট অসুযায়ী এর পরেই তাকাদ্দাস রেগে যান কারণ তিনি তাঁর ফ্লাইট ধরতে না পারা ছাড়াও এক ভারী অঙ্কের ফাইনের সম্মুখীন হন। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকাদ্দাস এক অভিবাসন অফিসারকে গলিগালাজ করছেন।
স্থানীয় মিডিয়া ওই অফিসারকে ২৮ বছর বয়সী আরডয়ানস্যাহ বলে চিহ্নিত করেছে। প্লেন ধরতে না পারার জন্য তাকাদ্দাস ওই অফিসারকে দোষারোপ করতে শোনা যাচ্ছে ভিডিওটিতে। তাকাদ্দাস অফিসারের হাত থেকে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করলে অফিসারটি বাধা দেন, আর তখনই তাকাদ্দাস তাঁকে এক থাপ্পড় মারেন। তারপর ভিডিও তুলেছিলেন এমন এক অফিসারকে ধমক দিয়ে ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন বা দেখাতে বলেন তাঁর (অফিসারের) “কুৎসিত মুখ”!