একটি ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে, যাতে দেখানো হচ্ছে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলছেন যে তাঁর দল আম আদমি পার্টি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে সমর্থন করতে প্রস্তুত। ভিডিওটি ভুয়ো।
গত সপ্তাহে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত একটি জমায়েতে কেজরিওয়ালের বক্তৃতার একটি
লাইন প্রসঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করে তুলে নিয়ে এই জালিয়াতিটি করা হয়েছে । লোককে
উস্কানি দিতে সিদ্ধহস্ত একটি ওয়েবসাইট শঙ্খনাদ রবিবার ফেসবুকে ভিডিওটি পোস্ট
করে । বুম অতীতে বহু বার এই ওয়েবসাইটটির ভুয়ো খবর ছড়ানোর ঘটনার পর্দাফাঁস
করেছে । সে সম্পর্কে বিশদে জানতে এখানে, এখানে এবং এখানে ক্লিক করুন।
এই মুহূর্তে আলোচ্য পোস্টটিতে কেজরিওয়ালকে বিদ্রূপ করে “আচার্য অরবিন্দ কেজরিওয়াল” আখ্যা দেওয়া হয়েছে । বলা হয়েছে, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই দিয়ে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল, অথচ আজ তিনি তাদেরই কোলে বসতে উদগ্রীব। বেচারা আন্না হাজারে বোকা বনে গেলেন!” পোস্টে দাবি করা হয়, কেজরিওয়াল নাকি বলেছেন—কংগ্রেসের যেখানে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে তাঁরা কংগ্রেসকে সমর্থন করবেন ।
তথ্য যাচাই
ভিডিও ক্লিপটি তোলা হয়েছে গত ২৩ জানুয়ারি দিল্লির মসজিদগুলির ইমামদের এক সভায় কেজরিওয়ালের বক্তৃতা থেকে । অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল দিল্লি ওয়াকফ বোর্ড । পোস্টের দাবি যাই হোক, কেজরিওয়াল ওই জমায়েতে স্পষ্ট বলেছিলেন, তিনি মনে করেন না কংগ্রেস আসন্ন নির্বাচনে রাজধানীর একটি আসনেও জিততে পারবে, আর তাই অনাবশ্যক ভোট ভাগ হওয়া থেকে সতর্ক থাকা দরকার । কেজরিওয়ালের বক্তৃতাটি যথাযথভাবে রিপোর্ট করেছিল প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (পিটিআই) তাদর বুধবারের প্রতিবেদনে, যার শিরোনাম ছিল—কংগ্রেস দিল্লিতে একটি আসনও পাবে না, বললেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল ।
নীচে পিটিআইয়ের রিপোর্টটির একটি অংশ উদ্ধৃত করা হল । পুরো রিপোর্টটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
“যদি আমি মনে করতাম কংগ্রেস জিততে পারবে, তাহলে দিল্লির ৭টি আসনই আম আদমি পার্টি (আপ) তাদের জন্য ছেড়ে দিত এবং তাদের অনুকূলেই নির্বাচন লড়ত। কিন্তু কংগ্রেস এখানে একটি আসনেও জিততে পারবে না”।
বুম ওই একই বক্তৃতার অন্য একটি ভিডিও ইউ-টিউব থেকে উদ্ধার করেছে যেটা একটু ভিন্ন কোণ থেকে তোলা । ভিডিওটি ওই একই দিনে আপলোড করা হয় । নীচে দেওয়া সেই ভিডিওটি ৩ মিনিট ১১ সেকেন্ড থেকে দেখতে শুরু করুন । দেখবেন—কেজরিওয়াল নির্বাচনী পাটীগণিত ব্যাখ্যা করে বলছেন, “২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি ৪৬ শতাংশ ভোট পায়, আম আদমি পার্টি পায় ৩৩ শতাংশ, আর কংগ্রেস পায় ১৫ শতাংশ । সব প্রাক-নির্বাচনী সমীক্ষাই বলছে, এবার বিজেপি ১০ শতাংশ ভোট খোয়াবে । সেই ১০ শতাংশ ভোট যদি পুরোটা কংগ্রেসের বাক্সে পড়ে, তবুও কংগ্রেস একটি আসনও জিততে পারবে না, কিন্তু যদি ওই ভোট আপ-এর বাক্সে পড়ে, তাহলে সবকটি আসনই আপ জিতবে”।
ভিডিওটির ৫ মিনিট ২০ সেকেন্ডের মাথায় আসছে কংগ্রেসকে ৭টি আসন ছেড়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ । কেজরিওয়াল বলছেন—“মোদী এবং অমিত শাহকে হারাতে আমি যত দূর যেতে হয়, যেতে প্রস্তুত । যদি আমি বুঝতাম কংগ্রেসের জেতার সম্ভাবনা আছে, তাহলে আমরা ৭টি আসনই তাদের ছেড়ে দিতাম, বলতাম—আপনারা লড়ুন, আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না। কিন্তু কংগ্রেস দিল্লিতে একটি আসলেও জিততে পারবে না”। শঙ্খনাদ-এর ভিডিওটিতে কংগ্রেসের ‘একটি আসনও জিততে না পারা’র বক্তব্যটি সুকৌশলে বাদ দেওয়া হয়েছে । কেজরিওয়ালের মন্তব্য সত্ত্বেও অবশ্য এই দুই তিক্ত রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর জোটের সম্ভাবনা নিয়ে দীর্ঘ কাল ধরেই জল্পনা চলেছে, যা সম্প্রতি আপ-এর এমএলএ আমানতুল্লা খানের একটি মন্তব্যে নতুন করে ইন্ধন পেয়েছে । তিনি নাকি বলেছেন, যদি কংগ্রেস দল থেকে ভবিষ্যতে কেউ প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে আপ তাঁকে সমর্থন করবে ।