একটি ভাইরাল টুইটে দাবি করা হচ্ছে যে, আইএনএস বিক্রান্তকে ভারতীয় নৌবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করার অনুষ্ঠানটিতে প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির স্ত্রী এলিজাবেথ অ্যান্টনি নাকি খ্রিস্টীয় প্রথা অনুযায়ী জাহাজটিকে পবিত্র জলসিঞ্চন করে (baptize) জলে ভাসিয়েছিলেন। টুইটটি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর।
২০১৩ সালের ১২ অগস্ট আইএনএস বিক্রান্তকে জলে ভাসানো হয়। ৩৭,৫০০ টন ওজনের এই জাহাজটি কেরালার কোচিন জাহাজ-কারখানায় নির্মিত হয়। এটিই ছিল ভারতের প্রথম বিমানবাহী রণপোত। এই রণপোতটি ভারতকে বিশ্বের সেই স্বল্পসংখ্যক দেশের সারিতে নিয়ে আসে, যারা এ ধরনের জাহাজ বানাতে সক্ষম। জাহাজটি জলে ভাসানো সম্পর্কে আরও জানতে এখানে, এখানে এবং এখানে পড়ুন।
এই পুরনো ছবিটি এখন আবার জিইয়ে তোলা হয়েছে সম্প্রতি ফ্রান্সে বর্তমান ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের রাফালে ফাইটার জেট বিমানের ডেলিভারি নেওয়ার সময় হিন্দু রীতি অনুযায়ী ‘শস্ত্রপূজা’ করার পরিপ্রেক্ষিতে।
আইএনএস বিক্রান্ত সংক্রান্ত টুইটটি ডন গ্রিশ্যাঙ্ক নামের একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে করা হয়েছে, যাতে ব্যঙ্গ করে লেখা হয়েছে, “প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির স্ত্রী এলিজাবেথ অ্যান্টনি জাহাজটিকে জলে ভাসাবার সময় খ্রিস্টীয় রীতি ও প্রথা অনুযায়ী তার গায়ে ক্রুশ চিহ্ন এঁকে দেন এবং পবিত্র জল ছিটিয়ে সেটিকে ব্যাপটাইজ করেন... তা নিয়ে সে সময় কারো কোনও সমস্যা হয়নি... যিশু পরম করুণাময়।”
এই লেখার সময় পর্যন্ত এই টুইটটি ৭.১০০ জন রিটুইট করে এবং এটি ১০ হাজার ‘লাইক’ পায়।
ব্যাপটিজম হলো কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
তথ্য যাচাই
২০১৩ সালে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্টে কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আইএনএস বিক্রান্তকে জলে ভাসানোর সময় হিন্দু ধর্মীয় আচারই পালন করা হয়েছিল।
বুম ভারতীয় প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরো (পিআইবি) প্রকাশিত ২০১৩ সালের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং ২০১৫ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীর সরকারি ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পেয়েছে, যাতে ওই অনুষ্ঠান সম্পর্কে নিম্নলিখিত বক্তব্য পেশ করা হয়েছে।
অথর্ব বেদের মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে ভারতের প্রথম বিমানবাহী রণপোত ‘বিক্রান্ত’-এর জন্ম হলো প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির স্ত্রী এলিজাবেথ অ্যান্টনির হাত দিয়ে, যার নামকরণ করা হয় ‘বিক্রান্ত’, সংস্কৃত ভাষায় যার অর্থ ‘সাহসী’ কিংবা ‘বিজয়ী’।
আমরা আইএনএস বিক্রান্তকে জলে ভাসানোর অনুষ্ঠানে তার গায়ে ক্রুশ চিহ্ন আঁকার বিষয়ে এলিজাবেথ অ্যান্টনির সঙ্গেও যোগাযোগ করি।
তিনি বুমকে জানান, “নৌবাহিনীর প্রথা অনুসারে বিক্রান্তকে জলে ভাসানোর সময় ভারতীয় নৌবাহিনী হিন্দু ধর্মীয় আচার পালনের সব রকম বন্দোবস্তই প্রস্তুত রেখেছিল।"
“হিন্দুদের পুজোয় যে সব উপকরণ থাকে, সেই ফুলের মালা, নারকেল এবং অন্যান্য যাবতীয় সামগ্রীই মজুত ছিল। পুরোহিত মশাই তা দিয়ে পুজো সম্পন্ন করেন এবং তারপর আমাকে বলেন সিঁদুর বা কুমকুম দিয়ে জাহাজের গায়ে এঁকে দিতে এবং আমি যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, তাঁর কাছে এই রণপোতের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করতে। যেহেতু আমি একজন ক্যাথলিক খ্রিস্টান এবং যিশুতে বিশ্বাস করি, তাই ওঁরা যখন আমাকে কুমকুম দিয়ে জাহাজের গায়ে আঁকতে বলেন, আমি একটি ক্রুশ চিহ্ন এঁকে দিই।
“অ্যান্টনি নিজে তো ধর্মনিরপেক্ষ, ও তাই প্রত্যেক ব্যক্তির ধর্মীয় পছন্দের স্বাধীনতাকে সম্মান করে, আর আমার কাছেও ধর্ম অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয়।”
রণপোতটির উদ্বোধনের জন্য তাঁকে কেন বাছা হয়েছিল জানতে চাইলে এলিজাবেথ বলেন— “সাধারণত বিমান উদ্বোধন করেন পুরুষরা আর জাহাজ উদ্বোধনে নারীদের ডাক পড়ে। আইএনএস বিক্রান্ত উদ্বোধন করতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবতী গণ্য করি”
বুম আইএনএস বিক্রান্তকে জলে ভাসানোর অনুষ্ঠানের ভিডিও পরখ করে দেখেছে। এনডিটিভি-র ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, পুরোহিত যাবতীয় হিন্দু রীতি মেনেই জাহাজটির পুজো করছেন এবং সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণও শোনা যাচ্ছে।