ফেসবুকে অভি দন্ডিয়ার ২ মার্চের একটি পোস্ট সোশাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে । ২৫ লক্ষ লোক এই পোস্টটি দেখেছেন এবং দেড় লক্ষ লোক এটি শেয়ার করেছেন । পোস্টটিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আধা-সামরিক বাহিনীর একটি কনভয়ের উপর ভয়ংকর জঙ্গি হামলার পিছনে এক বিপজ্জনক তত্ত্ব খাড়া করা হয়েছে । হামলাটিতে ৪০ জন সিআরপি জওয়ান নিহত হন ।
ফেসবুক লাইভ-এর ওই ভিডিওটিতে অভি দন্ডিয়া দাবি করেছেন, পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলাটি কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির একটি চক্রান্ত । তাঁর দাবির প্রমাণ হিসাবে তিনি একটি অডিএ ক্লিপ জুড়ে দিয়েছেন, যাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এবং এক অজ্ঞাত মহিলার কথোপকথন ধরা রয়েছে ।
পোস্টটি তে উল্লেখ করা আছে - দেশভক্তির আড়ালে কারা জওয়ানদের রক্তের হোলি খেলছে ?দেশভক্তির আড়ালে কারা জওয়ানদের রক্তের হোলি খেলছে ? ভিডিওটি ভালো করে দেখুন ও শুনুন
এখানে আর্কাইভ সংযোগ দেখুন।
অভি দন্ডিয়া ফেসবুকে তাঁর লাইভ ভিডিওগুলির জন্য যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং মহাব্বত কি দাঙ্গে নামে একটি পেজও চালান । একই নামের একটি ওয়েবসাইট ফেসবুক পেজে এখন আর পাওয়া যায় না ।
দন্ডিয়ার পোস্টের আর্কাইভ বয়ানটি এখানে দেখতে পারেন ।
তথ্য যাচাই
বুম ওই ভিডিওর অডিও ক্লিপটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এটি একটি সংবাদ-চ্যানেলকে দেওয়া রাজনাথ সিং-এর এক সাক্ষাত্কারের টুকরো-টুকরো অংশ জুড়ে তৈরি করা । আরিফ খান নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী নেটিজেনদের সতর্ক করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে দন্ডিয়ার অডিওতে রাজনাথের যে সব লাইন পোস্ট করা হয়েছে, সংবাদ-চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাত্কারেও রাজনাথ সেই একই লাইন বলেছেন ।
বুম ভিডিওটি খুঁজতে থাকে এবং ইন্ডিয়া টুডে-র ইউ-টিউব চ্যানেলে সেটির খোঁজ পায় । পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার এক সপ্তাহ পরে ২২ ফেব্রুয়ারি সংবাদ-চ্যানেলের ওই সাক্ষাত্কারটি আপলোড করা হয় ।
মূল ভিডিওটিতে রাজনাথ হিন্দিতে বলছেন—“এ সব ভিত্তিহীন দাবি এবং আমি মনে করি, আমাদের সাহসী সৈনিকদের আত্মত্যাগ নিয়ে এ ভাবে রাজনীতি করা উচিত নয়” । আজ তক-এর সাক্ষাত্কারীর মন্তব্য ছিল—“কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, প্রধানমন্ত্রী তখন জিম করবেটে বসে চা-সিঙাড়া খাচ্ছিলেন” । তার উত্তরেই রাজনাথ এ কথা বলেন ।
অভি দন্ডিয়ার অডিওটি মূল ভিডিওকে এমন ভাবে কাটছাঁট করেছে যে আমরা শুনতে পাই রাজনাথ বলছেন—“আমার বিশ্বাস, দেশের সাহসী সৈনিকদের আত্মত্যাগ নিয়ে এ ধরনের রাজনীতি করা উচিত” । “উচিত নয়” বলে যে কথাটি মূল সাক্ষাত্কারের ভিডিওতে ছিল, দন্ডিয়ার অডিওতে সেটা ছেঁটে দেওয়া হয়েছে ।
অডিও ক্লিপে রাজনাথের একই বিবৃতি দু বার শোনানো হয়েছে ।
অন্য একটি জায়গায় অডিও ক্লিপটির শুরুতে অমিত শাহকে বলতে শোনা যাচ্ছে—“ভোটে জিতবার জন্য যুদ্ধ করা জরুরি” ।
কন্তু বুম ২০১৮ সালের একটি ভিডিও খুঁজে পেয়েছে, যাতে জি-নিউজ-এর সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে অমিত শাহ বলছেন—“আমাদের বিশ্বাস, ভোটে জেতার জন্য যুদ্ধ করার কোনও প্রয়োজন নেই” ।
এখানেও মূল ভিডিওর “কোনও প্রয়োজন নেই” শব্দগুলি দন্ডিয়ার ক্লিপে ছেঁটে দেওয়া হয়েছে ।
যেহেতু আমরা এই দুই নেতার এ সংক্রান্ত অন্য কোনও বিবৃতি কোথাও পাইনি, তাই এটা প্রমাণিত যে রাজনাথের সাক্ষাত্কার থেকে তুলে নেওয়া বক্তব্য জুড়ে অডিও ক্লিপটি বিকৃত করা হয়েছে ।
ভিডিওটি কেবল ভারতেই ভাইরাল হয়নি, পাকিস্তানেও হয়েছে, এবং পাকিস্তানের ওয়েবসাইট ডেইলিক্যাপিটাল ডট পিকে (dailycapital.pk ) সিয়াসত ডট পিকে
siasat.pk এবং দ্যপোস্ট ডট কম ডট পিকে (thepost.com.pk). ইত্যাদি ওয়েবসাইটগুলিতে প্রচার করা হচ্ছে ।
তথ্য যাচাইকারী ওয়েবসাইট অল্টনিউজ ইতিপূর্বেই দন্ডিয়ার ভিডিওটির পর্দাফাঁস করে সেটিকে ভুয়ো বলে নস্যাত্ করেছে ।