হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হওয়া অডিও বার্তায় ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে, উত্তর কলকাতার হেঁদুয়া পার্কের কাছে রামদুলাল সরকার স্ট্রীট এলাকায় একটি চক্র রাস্তার কুকুরদের মাছ ধরার জাল দিয়ে ধরে পুজোর মরশুমে শহরের হোটেলে চালান দিচ্ছে। ওই চক্রটির সঙ্গে যুক্ত যুবকদের বাড়ি দর্জিপাড়া এলাকায়। বুম খোঁজ নিয়ে জেনেছে এই বার্তাটি ডাহা মিথ্যে।
বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন (৭৭০০৯০৬১১১) নম্বরে একজন পাঠক ওই অডিও বার্তাটি পাঠিয়ে এটির সত্যতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। ফরোয়ার্ড লেখার আগে দুটি তীর চিহ্ন রয়েছে যেটার মধ্যমে বোঝা যায় এই অডিওটি বহুবার ফরোয়ার্ড হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে।
১ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড সময়ের ওই অডিও বার্তাটিতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়:
‘‘গুড মর্নিং। পুজোর আগে একটা ইনফর্মেশন দিয়ে রাখি। সেটা হল আমার শশুরবাড়ি হচ্ছে নর্থ ক্যালকাটায় হেঁদুয়া পার্কের ঠিক বিপরীতে বেথুন কলেজের ঠিক পিছনে রামদুলাল সরকার স্ট্রীটে। তা গত এক-দু সপ্তা ধরে দেখা যাচ্ছে রোজ রাত্রি বেলা কয়েকটা ইয়াং ছেলে রাস্তার ঘুমন্ত কুকুরদের কে আরকি এক ধরনের মাছধরার জাল নিয়ে এসে তারা ককুরগুলোকে ধরছে। এবং তারা নিজেদেরকে পরিচয় দিচ্ছে কোনও একটা সমাজকল্যন সংস্থার তারা একজন সেচ্ছাসেবক। যাইহোক লোকে এই ব্যাপারটা কে নিয়ে অতটা মাথা ঘমায়নি প্রথমের দিকে। তা গতকাল জানতে পারা যায় তারা কোনও সংস্থার লোক নয়। তারা আমাদের এই স্থানীয়ই কোনও একটা জায়গাকার সব ছেলেপুলে। যারা এই নর্থ ক্যলকাটার দিকেই থাকে। দর্জিপাড়া এরিয়ার তারা ছেলে। এই খবরটাও পাওয়া গেছে। তা যাইহোক তাদের কাছ থেকে জানা যায় যে তারা কিছু হোটেল সংস্থা, হোটেলের লোকেদের মারফত কথা আগে থেকে মানে যাকে বলে প্ল্যান পোগ্রাম করে সাপ্লাই দেবার জন্য ওই কুকুর গুলোকো ধরছে এবং পুজোতে এদেরকে কেটে মাংস সাপ্লাই দেবে আরকি। তাই সবাইকেই বলছি খুব সাবধান পুজোতে খাবারদাবারের ব্যাপারে। কারন এই রকম মানে যে ব্যাপারটা মানে শুনলাম। খুবই ঘিন্ন ব্যাপার আরকি। তা পুজোর সময় খাবারদাবার ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকবেন। বিশেষ করে মাটন খাওয়ার ব্যাপারে। আর কিছু বলার নেই। এই খবরটা সবাইকে জানানোর জন্যেই আমি গ্রুপে শেয়ার করলাম।’’
অডিও বার্তাটি নীচে দেওয়া হল।
https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/10/WhatsApp-Audio-2019-10-03-at-2.24.56-PM.mp3তথ্য যাচাই
বুম উত্তর কলকাতার হেঁদুয়া পার্কের বেথুন কলেজ সংলগ্ন এলাকার স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছে ওই এলাকায় এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। বুমের তরফে রামদুলাল স্ট্রীটে অবস্থিত হেয়ার স্ট্রীট থানায় যোগাযাগ করলে জানানো হয় দর্জিপাড়া এলাকায় এধরনের কোনও যুবকদের চক্র ধরা পরেনি। থানায় এব্যাপারে কোনও অভিযোগ করেনি কেউ।
বুমের তরফে কলকাতার যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মুরলী ধরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় তিনি বুমকে জানান, ‘‘আমরা এটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছি এবং জানা গেছে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যে। আমরা একটি কেস শুরু করছি ওই অডিওটির নেপথ্যে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে যেহেতু এটা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং ছড়ানো হচ্ছে।’’
কলকাতায় মাংস নিয়ে গুজব নতুন নয়। ২০১৮ সালের মে মাসে কলকাতার উপকন্ঠে হাওড়ার অশোকা হোটেলে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে কুকুরের মাংস উদ্ধার করেছে এরকম ভুয়ো বার্তা সোশাল মিডিয়ায় ছড়ায়। সে ভুয়ো ঘটনা ২০১৯ সালের জুলাই মাসে আবার ভাইরাল হয় একইভাবে। ২০১৮ সালে মে-জুন মাসে কলকাতায় ভাগাড়ের মাংস কান্ড নিয়ে জল গড়ায় অনেকদুর। কলকাতা ও সংলগ্ল জেলার বিভিন্ন স্থানে তল্লাশিতে মেলে পচা মাংস। অসম পুলিশ ৬০ টি পথ কুকুর উদ্ধার করে পাচার হওয়ার সময়।