২০১২ সালে তাতারস্তানে (Tatarstan) ধর্মীয় নেতার সঙ্গে দেখা করে রুশ (Russia) রাষ্ট্রপতি (Vladimir Putin) ভ্লাদিমির পুতিনের মেডেল দেওয়ার ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভুয়ো দাবি সহ ছড়ানো হচ্ছে। ছবিটি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে রাশিয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিতীয় ধর্মের স্বীকৃতি দিয়েছে ইসলাম ধর্মকে (Islam)।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে দেখা যায় রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিন বেশ কয়েকজন মুসলিম মুফতির সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সামনের সারিতে এক ব্যক্তিকে হুইল চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়।
ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "ভারতের মুসলমানরা প্রতিনিয়ত সরকারিভাবে চুড়ান্ত জুলুম নির্যাতনের শিকার, অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট পুতিন ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিতীয় ধর্মের স্বীকৃতি দিলেন। শরিয়ত মেনে চলার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন রাশিয়ার মুসলমানদের রাশিয়া ইয়ং জেনারেশন ইসলাম নিয়ে অনেক চর্চা করছে ইনশাআল্লাহ দশ বছরের মধ্যে রাশিয়া প্রধান ধর্ম ইসলাম হবে।"
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
আরও পড়ুন: সেনা প্রধান মনোজ পাণ্ডে, মোহন ভাগবত ও নিতিন গডকড়ীর ছবিটি ফোটোশপ করা
তথ্য যাচাই
রাশিয়ার কোনও রাষ্ট্রধর্ম নেই
বুম রাশিয়ার সংবিধান যাচাই করে দেখে দেশটির কোনও রাষ্ট্র ধর্ম নেই। ইসলাম দেশটির দ্বিতীয় রাষ্ট্র ধর্ম এই দাবি সঠিক নয়।
রুশ সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, রাশিয়া ফেডারেশন একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কোনও রাষ্ট্র ধর্ম নেই ও ধর্মের অধীন রাষ্ট্র নয়। সেই সঙ্গে ধর্মীয় সংগঠন রাষ্ট্রের থেকে আলাদা এবং আইনের চোখে সমান।
যুক্তরাজ্য ও উত্তর আয়ারল্যান্ডস্থিত রুশ দূতাবাসের ওয়েবাসাইটের তথ্য অনুযায়ী সংখ্যার নিরিখে বেশিরভাগ রুশ মানুষ খ্রীষ্টধর্মাবলম্বী। তার পরে রয়েছে ইসলাম, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও ইহুদিরা। ব্রিটানিকার ২০০৫ সালের তথ্য অনুযায়ী অবশ্য তৃতীয় ধর্মবিশ্বাসে রয়েছেন নাস্তিকরা।
২০১৯ সালের শেখ রাভিল গাইনুদ্দিন নামের এক রুশ মুফতি দাবি করেন ২০৩৪ সাল নাগাত রাশিয়ায় মুসলমান হবেন মোট জন সংখ্যার ৩০ শতাংশ। সুতরাং, আগামী ১০ বছরে প্রধান ধর্ম রাশিয়ায় ইসলাম হবে এই দাবির স্বপক্ষে তেমন কোনও যুক্তি নেই।
২০১২ সালের পুরনো ছবি
বুম গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে গেট্টি ইমেজেস-এ ২৮ অগস্ট ২০১২ তারিখে তোলা একটি ছবি খুঁজে পায়। ভাইরাল ছবিতে থাকা সামনের সারিতে হুইল চেয়ারে বসা ব্যক্তিকে রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনকে মেডেল দিতে দেখা যায়।
ছবির ক্যাপশন অনুযায়ী, রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন তাতারস্তানের মুখ্য মুফতি ইলদুস ফাইজভের (mufti Ildus Faizov) বলগারের বাসভবনে গিয়ে তাঁর হাতে মেডেল তুলে দেন ২০১২ সালের ২৮ অগস্ট। ফাইজভের পা জুলাই মাসে কাজানে জখম হয়। ছবিটি এএফপি ও রিয়া নোভস্তির তরফে তোলেন অ্যালেক্সি নিকোলস্কায়।
বিষয়টি নিয়ে তাতারস্তান রিপাবলিকের সরকারি ওয়েবসাইটেও বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছিল। ২৮ অগস্ট ২০১২ ক্রেমনিলের ওয়েবসাইটেও সংশ্লিষ্ট বিবৃতি প্রকাশিত হয় পুতিনের সফরের দিন।
ভাইরাল ছবির অন্দর মহল, গেট্টির ছবি ও ক্রেমলিনের বিবৃতিতে থাকা ৮ নম্বর ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিতে পুতিনকে বক্তব্য রাখতে দেখা যায়। ৭ নম্বর ছবিতে একই পোশাক পরে হুইল চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায় মুফতি ইলদিস ফাইজভকে।
২০১২ সালের ২০ জুলাই প্রকাশিত রয়টর্সের খবর অনুযায়ী তাতারস্তানের মুফতি ইলদিস ফাইজভের গাড়িতে তিনটি বোমা হানা হয় রাজাধানী কাজানে। ১৯ জুলাই তিনি বোমা হানার ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের বেডে শায়িত মুফতি ইলদিসের ছবি দেখা যাবে এখানে।