ভারতীয় জনতা পার্টির আইটি সেলের প্রধান এবং দলের দিল্লির মুখপাত্র তেজেন্দ্র পাল সিংহ বগ্গা সহ অন্যান্য বিজেপি কর্মকর্তারা কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর একটি সম্পাদিত ভিডিও টুইট করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা এই মিথ্যে দাবি করেছেন যে, ক্যামেরা না থাকায় রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi) পাগড়ি (Turban) পরতে অস্বীকার করেন।
বিজেপির সদস্যরা আরও অভিযোগ করেন যে, রাহুল গাঁধী তাঁর ভারত জোড়ো যাত্রা (Bharat Jodo Yatra) সাজিয়ে দেখাচ্ছেন এবং তিনি শিখদের অসম্মান করেছেন।
৩০ সেকেন্ডের ওই ভাইরাল ভিডিওতে রাহুল গাঁধীকে একজনেরসঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। ওই ব্যক্তি পাঞ্জাবে পাগড়ি বাঁধার পরিষেবা দিয়ে থাকেন। এরপর, রাহুল গাঁধীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি রাহুল গাঁধীকে বলেন, পাগড়ি যিনি বাঁধবেন,পাঞ্জাবে ওই কাজে তিনি সেরা এবং সোশাল মিডিয়ায় তিনি খুবই পরিচিত।
তার পর রাহুল গাঁধী বিভিন্ন রঙের পাগড়ির তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চান এবং সেখানেই ভিডিওটি হঠাৎ শেষ হয়ে যায়।
মালব্য ভিডিওটি টুইট করেন ও ক্যাপশনে লেখেন,"ভারত জোড়ো যাত্রার সব কিছুই সাজানো। এমনকি কে পাগড়ি বাঁধবে এবং পাগড়ির রঙ কী হবে, তাও। যা আরও লজ্জাজনক তা হল ক্যামেরা না থাকায় রাহুল গাঁধী পাগড়ি পরতে অস্বীকার করেন। রাজনীতির স্বার্থে ধর্মকে কাজে লাগানো কংগ্রেসের ডিএনএ-তে রয়েছে।" মিথ্যে দাবি করে মালব্য আগেও রাহুল গাঁধীর ভারত জোড়ো যাত্রার বেশ কিছু সম্পাদিত ভিডিও টুইট করেছিলেন। বুম সেগুলির তথ্য যাচাই করে। পড়ুন এখানে, এখানে, ও এখানে।
মালব্যের টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ভিডিওটি বগ্গা টুইট করেন ও ফেসবুকেও শেয়ার করেন। ক্যাপশনে তিনি লেখেন, "রাহুল গাঁধী জন্য সবই হচ্ছে ভোট আর প্রচার সর্বস্ব। আমি এখন পাগড়ি পরব না। এই মুহূর্তে ক্যামেরা নেই।"
বগ্গার টুইট আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বিজেপি নেতা মজিন্দ্র সিংহ সিরসা সম্পাদিত ভিডিওটি টুইট করেন। এবং গেরুয়া রঙের পাগড়ির তাৎপর্য জানতে চাওয়ার জন্য অন্য একটি ভিডিওতে সিরসা রাহুল গাঁধীর সমালোচনা করেন। সিরসাও দাবি করেন, রাহুল গাঁধীর ভারত জোড়ো যাত্রা একটি সাজানো ঘটনা।
সিরসার টুইট আর্কাইভ করা আছে এখানে।
একই ক্যাপশন সহ ভিডিওটি সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল ভিডিওটির ওপরের ডান দিকের কোণে 'স্টেট নিউজ'-এর লোগো দেখতে পায় ।
আমরা ফেসবুকে স্টেট নিউজ পাঞ্জাব-এর সন্ধান করি। এবং ওই সংবাদ মাধ্যমের নিজস্ব পেজটি পেয়ে যাই। ভিডিওটির আরও একটি স্পষ্ট সংস্করণ ১০ জানুয়ারি ২০২৩ আপলোড করা হয়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়, "কার অনুরোধে রাহুল গাঁধী অমৃতসর যান এবং গেরুয়া পাগড়ি পরেন?"
(মূল পাঞ্জাবিতে ক্যাপশন: ਅੰਮ੍ਰਿਤਸਰ ਪਹੁੰਚੇ ਰਾਹੁਲ ਗਾਂਧੀ ਨੇ ਕਿਸ ਦੇ ਕਹਿਣ ਤੇ ਬੰਨੀ ਕੇਸਰੀ ਪੱਗ)
ভিডিওটির প্রথম কয়েকটি মুহূর্তে, রাহুল গাঁধীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি বলেন, "স্যার, পাঞ্জাবে উনিই হলেন সেরা।" সঙ্গে সঙ্গে রাহুল গাঁধী বলেন, "সেরা, মানে পাগড়িওয়ালা?" একটু পরেই নারী কন্ঠকে বলতে শোনা যায়, "একটা ছবি নিতে পারি?" ৬সেকেন্ড সময় চিহ্নের মাথায়, রাহুল গাঁধী ওই মহিলার অনুরোধ নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, "ম্যাডাম, এখন নয়, এখন নয়।" এর থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ক্যামেরা না থাকায় রাহুল গাঁধী পাগড়ি পরতে অস্বীকার করেন, এমনটা একেবারেই নয়। একজন মহিলা, যিনি তাঁর ছবি তুলতে চাইছিলেন, তাঁর অনুরোধ রাখতে অস্বীকার করেন রাহুল গাঁধী।
এর পর আমরা স্টেট নিউজ পাঞ্জাব-এর ফেসবুক পেজ দেখি। সেখানে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে পাগড়িওয়ালার একটি সাক্ষাৎকার দেখতে পাই আমরা।
পাঞ্জাব নিউজ-এর একটি বিভাগ 'রোজানা স্পোক্সম্যান'-এর তথ্য যাচাই অনুযায়ী, ওই ব্যক্তির নাম মনজিৎ সিংহ ফিরোজপুরিয়া। অমৃতসরবাসী ফিরোজপুরিয়া, পাগড়ি পরানোর কাজটিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।
এর পর বুম ইউটিউবে ফিরোজপুরিয়া'র খোঁজ করে। সেখানে দেখতে পাওয়া যায় সেই ভিডিও যেটিতে ফিরোজপুরিয়ার এবং আরও কয়েক জনের সঙ্গে রাহুল গাঁধীর কথাবার্তার দৃশ্য রয়েছে।
আমরা ফিরোজপুরিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ করি। তিনি বুমকে বলেন, "আমারও আরও কয়েক জনের সঙ্গে রাহুল গাঁধী কথা বলছিলেন। তখনএকজন মহিলা ছবি তোলার অনুরোধ জানিয়ে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বাক্যালাপে বিঘ্ন ঘটান। তিনি তাঁকে পাগড়ি পরা অবধি অপেক্ষা করতে বলেন। ক্যামেরা নেই বলে পাগড়ি পরতে চান না, এমনকথা রাহুল গাঁধী আদৌ বলেননি। আমি তার সাক্ষী।"
ঘটনাটি ঠিক কোথায় ঘটেছিল, ফিরোজপুরিয়া তা জানাননি। তবে তিনি বলেন, "ঘটনাটি একটা ঘরের মধ্যে ঘটে। সেখানে ওই মহিলাও ছিলেন। পরে, খুবই শ্রদ্ধার সঙ্গে রাহুল গাঁধী পাগড়ি পরেন। সিরসার ভিডিওর ওই দাবি ভিত্তিহীন।