বাংলাদেশে (Bangladesh) একদল পুরুষের এক মহিলাকে জোর করে একটি গাড়িতে তোলার ভয়াবহ একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর সাম্প্রদায়িক দাবি সহ (communal claim) ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওটি একাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারীরা শেয়ার করে বিভ্রান্তিকর দাবি করেছেন নোয়াখালীর (Noyakhali) দুলাল চন্দ্র পাল নামের এক হিন্দু ব্যক্তির মেয়েকে অপহরণ (kidnap) করে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের একদল মুসলমান পুরুষ।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে শুরু হয়েছে ব্যাপক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা। বাংলাদেশের অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ, ভাঙচুর, লুটপাট ও আওয়ামী লীগের পূর্ববর্তী সরকারের সদস্যদের হত্যার খবর প্রতিদিন প্রকাশ্যে আসছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করা অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী মহম্মদ ইউনুসকে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশন হিসাবে লেখেন, "নোয়াখালীর দুলাল চন্দ্র পালের মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে! স্বাধীনতা ইনজয়...সেনবাগ উপজেলা।"
সতর্কবার্তা: ভিডিওটি হিংসাত্মক প্রকৃতির। দর্শকদের বিচক্ষণতার পরামর্শ দেওয়া হল।
ভিডিওটির আর্কাইভ দেখুন এখানে।
এই একই ভিডিও অন্য একটি বিভ্রান্তিকর দাবিসহ এক্সে ছড়িয়ে পড়েছে ইংরেজি এবং হিন্দি ক্যাপশনসহ। ব্যবহারকারীরা দাবি করেছেন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনকারীরা একটি হিন্দু পরিবারকে খুন করে সেই বাড়ির নাবালিকা মেয়েকে অপহরণ করে। আর্কাইভ দেখুন এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্ট চেক
বুম ফেসবুকে বাংলায় 'নোয়াখালী মহিলা অপহরণ' কিওয়ার্ড সার্চ করে বেশ কয়েকটি পোস্টে ভাইরাল ভিডিওটি দেখতে পায়। পোস্টগুলিতে বলা হয় ভিডিওটি দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার সেনবাগের।
আমরা মাহফুজ আলমের নামক একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর একটি লাইভ ভিডিও পাই যার ক্যাপশনে দাবি করা হয় ঘটনাটি নোয়াখালীর সেনবাগের মইশাই গ্রামের। ৮ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ লাইভটি রেকর্ড করা হয়।
লাইভ ভিডিওর ক্যাপশন অনুযায়ী, তিন অপহরণকারীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ধরে ফেলে কিন্তু বাকি ১৪ জন অন্য গাড়িতে করে পালিয়ে যায়।
বুম আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বুমকে জানান ঘটনাটি নোয়াখালীর সেনবাগের এবং একজন হিন্দু ব্যক্তি তার প্রাক্তন হিন্দু স্ত্রীর থেকে আলাদা হওয়ার পর অপহরণের পরিকল্পনা করেন। ঘটনাটি গত ৮ আগস্টের বলে জানা যায়।
আলম বুমকে বলেন, 'ঘটনাটি আমাদের গ্রামে ঘটেছে। প্রসেনজিৎ নামে এক হিন্দু ব্যক্তি তার প্রাক্তন স্ত্রী সুমনাকে তার একদল বন্ধুদের সাথে এসে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে এসেছিল। যেহেতু তিনি প্রসেনজিতের সঙ্গে থাকতে চায়নি, তাই তারা তাকে জোর করে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের ধরে ফেললে তাদের অধিকাংশই একটি গাড়ি করে পালিয়ে যান। আমরা তার স্বামী সহ তিনজনকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। এরপর আমরা তাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করি। ভিডিওতে থাকা তিনজনের মধ্যে দুজন মুসলিম এবং তার স্বামীর বন্ধু। সেনাবাহিনী পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়।" আলম বুমকে আরও বলেন ঘটনাটি একটি পারিবারিক বিষয় এবং এর কোনও সাম্প্রদায়িক দিক নেই।
ফেসবুক লাইভে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রসেনজিৎ ও তার বন্ধুদের ধরে ফেলার পর তাদের বেঁধে রাখার দৃশ্য দেখা যায়।
বুম নোয়াখালীর স্থানীয় সাংবাদিক এবং নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সম্পাদক আবু নাসের মঞ্জুর সঙ্গে যোগাযোগ করে। মঞ্জু বুমকে নিশ্চিত করে জানান বিষয়টি একটি পারিবারিক সমস্যা। তিনি বলেন, "লোকটি কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা এবং তার স্ত্রীর থেকে আইনত আলাদা হয়ে গেছেন। তিনি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনহীন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছিলেন এবং তার প্রাক্তন স্ত্রীকে অপহরণের চেষ্টা করেছিলেন।"
মঞ্জু বুমকে আরও জানায় স্বামী-স্ত্রী দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক এবং কয়েক বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। "মহিলা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে তার বাবা দুলালের বাড়িতে বসবাস করছে। অপহরণের সঙ্গে দুইজন মুসলিম যুক্ত থাকলেও, এর মাথা তার প্রাক্তন স্বামী যিনি পরিকল্পনাটি করেছিলেন। তারা আলাদা হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা নিশ্চিত করেছেন যে তিনি যেন মহিলার থেকে দুরত্ব বজায় রাখে।"