Explore

HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
MethodologyNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফ্যাক্ট চেকNo Image is Available
বিশ্লেষণNo Image is Available
ফাস্ট চেকNo Image is Available
আইনNo Image is Available

Explore

HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
MethodologyNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফ্যাক্ট চেকNo Image is Available
বিশ্লেষণNo Image is Available
ফাস্ট চেকNo Image is Available
আইনNo Image is Available
ফ্যাক্ট চেক

গাঁধীর মহাত্মা উপাধি কি ব্রিটিশদেরও দেওয়া? একটি তথ্য-যাচাই

ইতিহাস সাক্ষ্য প্রমাণ দেয় গাঁধীর 'মহাত্মা' উপাধির মূলে ভারতীয়ত্ব—এটি ইংরেজদের দেওয়া উপাধি নয়।

By - Mohammed Kudrati | 16 Jan 2023 7:00 PM IST

মহাত্মা গাঁধীকে (Mahatma Gandhi) ‘মহাত্মা’ (Mahatma) উপাধি দিয়েছিল ব্রিটিশরা (Bristish) দাবিতে যে বার্তাটি ভাইরাল করা হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। এই বার্তাটির মূলে রয়েছে ১৯৩৮ সালে লেখা একটি চিঠি, যাতে এবার থেকে গাঁধী সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করলে তাঁকে ‘মহাত্মা গাঁধী’ বলে উল্লেখ করার নির্দেশ ছিল।

বুম দেখে ওই চিঠিটা তখনকার কেন্দ্রীয় সরকারের ভাইসরয়ের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের নয়, বরং সেটি ছিল সে সময়কার সেন্ট্রাল প্রভিন্স ও বেরার-এর প্রাদেশিক সরকারের, যার ক্ষমতাসীন ছিল কংগ্রেস দল।

তা ছাড়া, ২০১৬ সালে গুজরাট হাইকোর্ট এক রায়ে জানায়, গাঁধীকে মহাত্মা উপাধিটা দিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তথ্যটি রাজ্যের স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল করা বার্তাটিতে বলা হয়

এটা খুবই মজার বিষয় যে, শ্রীযুক্ত গাঁধীকে মহাত্মা উপাধিটা সরকারিভাবে ব্রিটিশদের দেওয়া। অথচ আমরা ভেবেছিলাম, মহাত্মা উপাধিটা জনসাধারণ তাঁকে দিয়েছে। মহাত্মা তাহলে একটা ব্রিটিশ উপাধি, ভারতীয় নয়!

বার্তার সঙ্গে একটি ছবিও ভাইরাল করা হয়, যা বুমের হোয়াটসঅ্যাপে টিপলাইন নম্বর ৭৭০০৯০৬৫৮৮-তে পৌঁছয়।

চিঠিটির শিরোনামে লেখা – সেন্ট্রাল প্রভিন্স ও বেরার সরকারের বিজ্ঞপ্তি, এবং তার তারিখ ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৮।

সোশাল মিডিয়াতেও এই বার্তা ভাইরাল করা হয়েছে।

তথ্য যাচাই

১৯৩৮ সালে জারি করা এই বিজ্ঞপ্তিটি সেন্ট্রাল প্রভিন্স ও বেরার সরকারের, যে-ব্রিটিশরা সমগ্র ভারত শাসন করছিল, তাদের নয়। স্বাধীনতার পরে এই প্রভিন্স বা প্রদেশের কিছু অংশ বর্তমান মধ্যপ্রদেশে মিশে যায়।

হোয়াটসঅ্যাপে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটিতে এই মর্মেও একটি নোট দেওয়া ছিল যে এই প্রাদেশিক সরকারে ক্ষমতাসীন ছিল কংগ্রেস দল। বিজ্ঞপ্তির নীচে স্পষ্ট অক্ষরে সে কথা লেখাও ছিল।

১৯৩৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে সেন্ট্রাল প্রভিন্স ও বেরার-এর ১১৩টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৭০টি আসন জিতে সরকার গড়ে। ১৯৩৯ সালে এই সরকার সহ অন্যান্য প্রাদেশিক সরকারও জার্মানির বিরুদ্ধে ব্রিটেনের যুদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পদত্যাগ করে, যেহেতু ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একতরফাভাবে সেই ঘোষণা করা হয়েছিল।

১৯৭১ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের ১০০ ও ৩৫৪ পৃষ্ঠায় এই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

১৯৩৫ সালে প্রবর্তিত প্রশাসনিক সংস্কারের পর ব্রিটিশ সরকার এই সব প্রাদেশিক সরকারকে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন মঞ্জুর করেছিল। এই সব সরকারে একজন করে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য দফতরের কাজ সামলাতে কয়েকজন মন্ত্রী নিয়োগ করার এক্তিয়ারও দেওয়া হয়। একই ধরনের নির্বাচিত স্বশাসিত সরকার আসাম, বোম্বাই, মাদ্রাজ বাংলা ও পাঞ্জাবের ক্ষেত্রেও মঞ্জুর করা হয়েছিল।

উপাধি রবীন্দ্রনাথের দেওয়া: গুজরাত হাইকোর্ট

মহাত্মা উপাধির সর্বপ্রথম উল্লেখ অবশ্য পাওয়া যায় ১৯০৮ সালে গাঁধী সম্পর্কে গোপালকৃষ্ণ গোখলেকে লেখা লন্ডনস্থিত চিকিৎক প্রাণজীবন মেহতার একটি চিঠিতে। পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উপাধিটাকে জনপ্রিয় করেন।

এ ব্যাপারে বুম মহাত্মা গাঁধীর প্রপৌত্র এবং গাঁধী রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি তুষার গাঁধীর সঙ্গেও কথা বলেছে। তিনি বলেন—“এটা কোনও অনুমোদিত উপাধি নয়। সর্বাগ্রে ডাক্তার প্রাণজীবন মেহতা গোপালকৃষ্ণ গোখলেকে একটি চিঠিতে গাঁধী সম্পর্কে এই বিশেষণটি ব্যবহার করেছিলেন। পরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গাঁধীজি দেশে ফেরার পরে তাঁর সম্পর্কে ওই বিশেষণটি ব্যবহার করেন এবং সেটা জনপ্রিয়ও হয়ে যায়।”

তুষার গাঁধী আরও জানান, সেন্ট্রাল প্রভিন্স ও বেরার-এর কংগ্রেস পরিচালিত প্রাদেশিক সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল, বাপু সম্পর্কে যাবতীয় উল্লেখের সময় তাঁর নামের আগে মহাত্মা উপাধিটা বসাতে হবে। এটা কোনও ব্রিটিশ রাজের দেওয়া উপাধিই ছিল না।

২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি অন্য একটি মামলার সূত্রে গুজরাট হাইকোর্টও এই প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেছিল—বাপুকে মহাত্মা উপাধিটা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই দেওয়া।

মামলাটি ছিল সন্ধ্যা মারু নামে এক ব্যক্তির রাজকোটের জেলা পঞ্চায়েত সার্ভিস নির্বাচক কমিটির বিজ্ঞাপিত ‘তালাতি-কাম-মন্ত্রী’ পদের নিয়োগ পরীক্ষা বিষয়ে। পরীক্ষায় এমসিকিউ ধাঁচের একটি প্রশ্ন ছিল—গাঁধীজিকে প্রথম কে মহাত্মা উপাধি দিয়েছিলেন? অনেকগুলি সম্ভাব্য উত্তরের জায়গায় লেখা ছিল—‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’, ‘বিনোবা ভাবে’, ‘সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল’, ‘অজ্ঞাত কোনও সাংবাদিক’ কিংবা ‘বলতে পারছি না’। মারু তাঁর উত্তরে রবীন্দ্রনাথের নামেই টিক দিয়েছিলেন, কিন্তু পরীক্ষকদের উত্তরের সূত্র ছিল—অজ্ঞাত কোনও সাংবাদিক! মারু স্বভাবতই এই বিষয়ে গুজরাট হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন।

হাইকোর্ট মারুর দেওয়া উত্তরকেই সঠিক সাব্যস্ত করে।

হাইকোর্ট আরও জানায়—যদি বা উত্তর নিয়ে কোনও সংশয়ের অবকাশ থাকতোও, রাজ্যের পাঠ্য পুস্তকে এই উপাধিদাতা হিসাবে গুরুদেবের নামই নথিভুক্ত রয়েছে। তাই ত্রুটিটা এখানে পরীক্ষা নিয়ামকদেরই, মারুর নয়।

আদালত তাই পরীক্ষকদের ভুল শুধরে নেওয়ার এবং মারুকে সঠিক উত্তরের জন্য নম্বর দেওয়ার ও তদনুযায়ী মেধা-তালিকা সংশোধন করারও নির্দেশ দেয়। আদালতের রায় দেখে নিতে পারেন এখানে

১৯১৫ সালের মার্চ মাসে রবীন্দ্রনাথ প্রথম গাঁধীকে মহাত্মা অভিধায় ভূষিত করেন, এটা ঠিকই। তবে তারও আগে ওই বছরেই গাঁধীকে মহাত্মা বলে উল্লেখ করেন জেটপুরের নউতমলাল কামদার নামে এক ব্যক্তি। গাঁধী ও তাঁর স্ত্রী কস্তুরবা যখন জেটপুরে সফরে যান, তখনই গুজরাটি ভাষায় লেখা তাঁকে দেওয়া এক মানপত্রে এই বিশেষণটি ব্যবহৃত হয়।

তবে যিনিই প্রথম বাপুকে মহাত্মা উপাধি দিয়ে থাকুন, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে ব্রিটিশ রাজের কাছ থেকে তিনি এই উপাধি পাননি।

ব্রিটিশরা কি গাঁধীকে কোনও উপাধি দিয়েছিল?

অবশ্যই দিয়েছিল— "কাইজার-ই-হিন্দ"!

আফ্রিকায় বোয়র যুদ্ধে ও জুলু যুদ্ধের সময় তাঁর মানবিক সহায়তার জন্য বাপুকে কাইজার-ই-হিন্দ স্বর্ণপদক উপাধি প্রদান করা হয় ব্রিটেনের রাজার জন্মদিন উপলক্ষে, ১৯১৫ সালে।

কিন্তু ১৯২০ সালে খিলাফত আন্দোলন শুরুর আগে গাঁধী সেই উপাধি তথা পুরস্কার বর্জন করেন।

১৯২০ সালের ৪ অগস্ট ভাইসরয়কে লেখা এক চিঠিতে গাঁধী লেখেন—

অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে আমি দক্ষিণ আফ্রিকায় মানবতাবতাবাদী কাজের জন্য আপনার পূর্বসূরির আমাকে দেওয়া কাইজার-ই-হিন্দ স্বর্ণপদক ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি। জুলু যুদ্ধের সময় এবং বোয়র যুদ্ধের কালে ১৮৯৯-১৯০০ সালে ভারতীয় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে স্ট্রেচার-বাহক স্বেচ্ছাসেবীদের সহকারী সুপারিন্টেডেন্ট হিসাবে কাজের জন্য দেওয়া এই পদক ও সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছি। খিলাফত আন্দোলনের কারণে যে অসহযোগ আন্দোলন আমি শুরু করেছি, সেই প্রেক্ষিতেই এই প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্ত।

এর কিছু আগেই অবশ্য রবীন্দ্রনাথও জালিয়ানওয়ালাবাগের গণহত্যার প্রতিবাদে তাঁর নাইট উপাধি ত্যাগের ঘোষণা করেন।

সুতরাং ব্রিটিশরা কখনওই গাঁধীকে মহাত্মা উপাধি দেয়নি।

Tags:

Related Stories