চট্টগ্রামের আদালতে বাংলাদেশের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের (Chinmoy Krishna Das) জামিনের শুনানির কয়েক ঘণ্টা আগে, ইসকন (ISKCON) কলকাতার মুখপাত্র রাধারমণ দাস বিভ্রান্তিকর ক্যাপশন সহ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা একজন ব্যক্তির একটি ছবি সমাজমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেছিলেন।
দাস ওই ব্যক্তিকে একজন আইনজীবী রমেন রায় হিসেবে শনাক্ত করেন এবং দাবি করেন, হিন্দু নেতা চিন্ময় দাসের পক্ষের কৌঁসুলি হওয়ার কারণে তাকে নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়েছে এবং 'ইসলামবাদীরা' তার বাড়ি ভাংচুর করেছে।
পরে, ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ২৪ রাধারমণ দাসের এক্স পোস্টকে খণ্ডন করতে এক নিউজ বুলেটিন সম্প্রচার করে জানায়, চট্টগ্রাম আদালতে রমেন রায় নামের কেউ নেই। ওই বুলেটিনে আরও দাবি করা হয়, রাধারমণ দাসের শেয়ার করা ছবিটি ভারতের বিহারের পাটনার একজন আইনজীবীর। পরে, চ্যানেল ২৪ এর তরফ থেকে বুলেটিনটি সরিয়ে নেওয়া হয়।
বুম যাচাই করে দেখে, ২৫ নভেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা-ভিত্তিক আইনজীবী রমেন রায়ের উপর হামলা করা হয়েছিল এবং হাসপাতালের ছবিটিও তারই। তবে রমেন রায়ের বাড়ি ভাংচুর এবং তার চিন্ময় দাসের কৌঁসুলি হওয়ার দাবিটি ভুয়ো।
ভারতীয় ও বাংলাদেশ মিডিয়ার ভুল রিপোর্ট
দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস, ডিডি নিউজ, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, নিউজ১৮, দ্য প্রিন্ট, আজতক বাংলা, জি২৪ ঘণ্টা, ইন্ডিয়া টুডে, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, এবিপি আনন্দ, টিভি৯ বাংলা, ওয়ান ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, দ্য হিন্দু সহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম রাধারমণ দাসের দাবিকে প্রসারিত ভুল রিপোর্ট করে বলে, আদালতে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আক্রমণ করা হয়েছিল রমেন রায়কে।
ঢাকা-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ২৪ ওই দাবির পাল্টা জবাবে জানায়, রমেন রায় নামের কেউ চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত ছিল না। এরই সাথে তারা হাসপাতালের ভর্তি থাকা ওই ব্যক্তির ছবিটিকে পাটনা-ভিত্তিক আইনজীবী হিসাবে ভুল শনাক্ত করে। "চিন্ময় দাসের আইনজীবী সম্পর্কে ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যাচার" শিরোনাম-সহ এক সংবাদ বুলেটিনে চ্যানেল ২৪ দাবি করে, রাধারমণ দাসের এক্স পোস্টে দেখতে পাওয়া ছবিটি পাটনার একজন আইনজীবীর।
দাস পরে একটি এক্স পোস্টে স্পষ্ট করে জানান, রমেন রায়কে ২৫ নভেম্বর আক্রমণ করা হয়েছিল এবং চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে নয়।
তথ্য যাচাই
বুম রমেন রায়ের শ্যালক তপন দাসের সাথে যোগাযোগ করে, যিনি নিশ্চিত করে জানান, রায় একজন ঢাকা-ভিত্তিক আইনজীবী এবং চট্টগ্রাম আদালতের আওতাধীন নন। তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, ২৫ নভেম্বর তার উপর হামলা হয় এবং হামলার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রায়কে পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় এবং এখন সেখানে আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলছে।
দাস বুমকে বলেন, "আমার স্ত্রীর ভাই রমেন্দ্রনাথ রায়। তিনি ঢাকার একজন আইনজীবী এবং ২৫ নভেম্বর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় প্রভুকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়েছিল। এরপর তিনি শাহবাগে ছুটে যান এবং ওই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে যোগ দেন। প্রতিবাদের সময় তার উপর হামলা হয়। এখন তিনি লাইফ সাপোর্টে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।"
দাস স্পষ্টতঃ জানান, তাদের বাড়ি ভাংচুর করা হয়নি। "আমার ভাইয়ের বাড়ি ভাঙচুর করার দাবিটি সত্যি নয়," বুমকে তিনি বলেন।
তপন দাস ছবিটির বিষয়ে বলেন, হাসপাতালের আইসিইউতে রায়কে স্থানান্তরিত করার পরে সেটি নেওয়া হয়েছিল। এর থেকে বিশদে তিনি সেবিষয়ে আর মন্তব্য করতে চাননি।
আমরা এরপর বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ হালদারের সাথে যোগাযোগ করি, যা সেদেশের হিন্দু সংগঠনগুলির একটি জোট এবং চিন্ময়কৃষ্ণ দাসও তার একজন প্রতিনিধি।
হালদার বুমকে বলেন, রায় চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন না। "রমেন রায় চিন্ময় প্রভুর সমর্থক হিসেবে বিক্ষোভে যোগ দিতে শাহবাগে এসেছিলেন। প্রসঙ্গতঃ, তিনি পেশায় একজন আইনজীবী। একারণে তার উপর হামলা হয়নি।"
২৫ নভেম্বরের বিক্ষোভে হালদারও উপস্থিত ছিলেন। "গ্রেফতারির খবর শুনে আমরা সবাই মিন্টো রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের চলে যেতে বললে আমরা শাহবাগ এলাকায় চলে আসি। চার রাস্তার মোড়ে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে।"
হালদার বুমকে আরও জানান, "এর পরপরই একদল লোক ধারালো বস্তু নিয়ে এসে আমাদের উপর হামলা চালায়। আমিও তাতে আহত হই এবং রমেন রায়ের মাথায় গুরুতর আঘাত করা হয়। তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।"
হালদার রায়ের আঘাতের ছবিও শেয়ার করেন যাতে তার গুরুতর আহত হওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।
বুম এর আগে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সইফুল ইসলাম সম্পর্কে ভুয়ো দাবি খণ্ডন করে যাকে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের পক্ষের আইনজীবী হিসাবে ভুলভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস নামে পরিচিত বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইংয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের তরফ তখন এক স্পষ্টীকরণে বলা হয়, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের ওকালতনামা দেখায় সুভাশিষ শর্মা হলেন তার আইনজীবী। "
বুম শর্মার সাথে তার মন্তব্য জানার জন্য যোগাযোগ করেছে। আমরা শর্মার থেকে প্রতিক্রিয়া পেলে প্রতিবেদনটিতে তা সংযোজন করা হবে।