ভারতের প্রধান বিচারপতি (Chief Justice of India) ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের (D.Y Chandrachud) স্ত্রী কল্পনা দাস পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও অর্থোপেডিক সার্জেন ডাঃ এস পি দাসের ভাগ্নী বলে দাবি করা সাম্প্রতিক সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল পোস্টগুলি ভুয়ো।
কোনও প্রমাণ ছাড়াই ওই পোস্টগুলিতে অভিযোগ করা হয় চন্দ্রচূড় তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বিদেশে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন।
কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৩১ বছরের জুনিয়র ডাক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানি চলাকালীন সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয় এই দাবি।
২০২৪ সালের ৯ অগাস্ট কলকাতার ওই হাসপাতালে রাতের ডিউটিতে থাকা এক জুনিয়র ডাক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ চলছে পশ্চিমবঙ্গে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে পদ্ধতিগত দুর্নীতির অভিযোগ করে তৃণমূল শাসিত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ইতিমধ্যেই রাস্তায় নেমেছেন রাজ্যের নাগরিক এবং জুনিয়র ডাক্তাররা। বিক্ষোভকারী চিকিৎসকরা ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে পুনরায় কাজে যোগ দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সময়সীমাও উপেক্ষা করেন এবং তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান।
এরই মধ্যে ভাইরাল এক পোস্টে প্রধান বিচারপতির পরিবার ও তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ করা হয়।
ভাইরাল সেই পোস্টে বলা হয়: "সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের মহাশয় এর স্ত্রী শ্রীমতি কল্পনা দাস। এই কল্পনা দাস আবার বর্তমান স্বাস্থ্য দপ্তরের উত্তরবঙ্গ লবির অন্যতম কর্তা ডাক্তার এস পি দাসের ভাইজি। আলাদাই রিলেশনশিপ সব।"
পশ্চিমবঙ্গ সরকার সম্পর্কিত মামলাগুলির শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতির অনিয়মের ইঙ্গিত দিয়ে বেশ কয়েকজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী এই পোস্টটি শেয়ার করেছেন।
পোস্টটি দেখুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখুন এখানে।
এই একই দাবি ভাইরাল হয় হোয়াটসঅ্যাপেও।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমে কিওয়ার্ড সার্চ করে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের স্ত্রী কল্পনা দাসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ডাঃ এস পি দাসের সম্পর্কের কোনও বিশ্বাসযোগ্য খবর পায়নি, বা মালয়েশিয়া ও ব্যাংককে প্রধান বিচারপতির তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সময় কাটানোরও কোনও প্রমাণ পায়নি।
এছাড়াও আমরা ইউটিউবে ২০২৩ সালের ৭ মে প্রকাশিত ওড়িশার সংবাদমাধ্যম কনক নিউজের একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাই, যেখানে চন্দ্রচূড় নিজেকে ওড়িশার "গর্বিত জামাতা" হিসাবে উল্লেখ করেছেন এবং তাঁর স্ত্রীকে ওড়িয়া হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
দ্য স্টেটসম্যানের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চন্দ্রচূড়ের প্রথম স্ত্রী রশ্মি চন্দ্রচূড় ২০০৭ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর, চন্দ্রচূড় আইনজীবী কল্পনা দাসকে বিয়ে করেন, যিনি পূর্বে ব্রিটিশ কাউন্সিলে কাজ করেছেন।
"তথ্যগত দিক থেকে ভুল, বিচার বিভাগকে বদনাম করার চেষ্টা": সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রি
বুম সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ভাইরাল দাবিটিকে ভুয়ো বলে অভিহিত করে।
"কলকাতা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার সুপ্রিম কোর্টের শুনানির আগে ভারতের প্রধান বিচারপতির পরিবারের এক সদস্যকে বাংলার একটি মেডিক্যাল লবির সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করে একটি বিদ্বেষপূর্ণ টুইট এক্সে ছড়িয়ে পড়েছে। এই টুইট অসৎ উদ্দেশ্যে প্রচারিত, তথ্যগত দিক থেকে ভুল ও বিচার বিভাগকে বদনাম করার চেষ্টা"- এক বিবৃতিতে জানায় সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রি।
"অসত্য তথ্য ছড়ানো বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য": পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে এই দাবিকে নস্যাৎ করে জানায়, "ভারতের প্রধান বিচারপতি ও ভারতের মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লোক অত্যন্ত অবমাননাকর এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়িয়েছে।"
পুলিশের তরফ থেকে আরও জানানো হয়, অসত্য তথ্য ছড়ানো বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কৃষ্ণনগর পুলিশ এই n ভুয়ো দাবি ছড়ানোর দায়ে ইতিমধ্যেই এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।