একটি লিখিত বার্তায় দাবি করা হয়েছে যে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন (COVID-19 Vaccine) নভেল করোনাভাইরাসের (Novel Coronavirus) বিরুদ্ধে কাজ করে না। তাই ওই ভ্যাকসিন নেওয়ার কোনও যুক্তি নেই।
বার্তাটি বিশ্বজুড়ে শেয়ার করা হচ্ছে। তার ফলে, ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যাপারে যে দ্বিধা বর্তমানে রয়েছে, তা আরও বাড়বে এবং ভ্যাকসিন নেওয়া থেকে অনেককে বিরত করবে। বলা হচ্ছে যে, ভ্যাকসিনগুলি যদি ভাইরাসটির সংক্রমণ রুখতে না পারে, তা হলে সেগুলির কোনও কার্যকারিতা থাকে না। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিনগুলির গুরুত্ব সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
ওই বার্তাটিতে অনেকগুলি প্রশ্ন ও তার উত্তর দেওয়া হয়েছে। সেটি শুরু হচ্ছে এই ভাবে: 'যদি আমি ভ্যাকসিন নিই:'
এর পর ১ নম্বর প্রশ্ন হল: আমি কি মাস্ক পরা বন্ধ করতে পারি?
উত্তরে বলা হচ্ছে: না।
২। রেস্তরাঁ ইত্যাদি কি খোলা যাবে আর সবাই কি স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারবে?
-না।
৩। আমার মধ্যে কি কোভিডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে?
-হয়তো। কিন্তু আমরা নিশ্চিত জানি না। সম্ভবত, কোভিড হওয়া থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারবে না।
৪। অন্তত পক্ষে, আমি যাতে অন্যদের সংক্রমিত না করি, সেটা কি নিশ্চিত করা যাবে?
-সম্ভবত, আপনি তা সত্ত্বেও সংক্রমণ ছড়াবেন। কেউ জানে না।
৫। যদি সব বাচ্চাকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, তাহলে কি স্কুল স্বাভাবিকভাবে চলবে?
-না।
৬। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা কি চলে যাবে?
-না।
৭। ভ্যাকসিন নিলে কি আামি জীবাণু-মুক্ত করার জন্য হাত ধোয়া বন্ধ করতে পারি?
-না।
৮। আমি আর আমার দাদু যদি ভ্যাকসিন নিই, তাহলে কি আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরতে পারি?
-না।
৯। ভ্যাকসিন আসার ফলে কি সিনেমা, থিয়েটার, স্টেডিয়াম খুলে যাবে?
-না।
১০। যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাঁরা কি এক জায়গায় জড়ো হতে পারবেন?
-না।
১১। ভ্যাকসিন নেওয়ার স্বার্থকতা কি?
-ভাইরাসটি আপনাকে মারতে পারবে না।
১২। ভাইরাসটি যে আমাকে মারতে পারবে না, সে ব্যাপারে কি নিশ্চিত হওয়া যায়?
-না।
১৩। সংখ্যা তত্ত্বের বিচারে, ভাইরাসটি যদি আমাকে না মেরে থাকে, তাহলে ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন কি?
-অন্যদের রক্ষা করার জন্য।
১৪। আমি যদি ভ্যাকসিন নিই, তাহলে অন্যরা কি নিশ্চিন্ত হতে পারেন যে, আমার কাছ থেকে সংক্রমণ ছড়াবে না?
-না।
ফলে, দেখা যাচ্ছে, ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেবে না।
ভাইরাসটিকে নির্মূল করবে না।
মৃত্যু রুখবে না।
সংক্রমিত না-হওয়া নিশ্চিত করবে না।
আপনার যে হবে না, তার কোনও গ্যারান্টি নেই।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও যে আপনি সংক্রমণ ছড়াবেন না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে, এমন নয়।
ব্যবসা বন্ধ রাখার প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে, তাও নয়।
লকডাউন আর হবে না, তার কোনও গ্যারান্টি নেই।
মাস্ক পরা বন্ধ করা যাবে না।
তাহলে ভ্যাকসিন কি করবে?
বার্তাটির সত্যতা যাচাই করার জন্য সেটি বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে আসে।
ওই একই বার্তা ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বার্তাটির প্রথম ভাগে বলা হয়েছে যে, ভ্যাকসিন নেওয়া সত্ত্বেও সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। সেটি ঠিক কথা। কিন্তু পরে যা বলা হয়েছে, তা পুরোপুরি সঠিক নয়।
প্রথম দাবিটি হল ভ্যাকসিন কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে না। সেটি বেঠিক। কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন, এই দুটি ভ্যাকসিন ভারতে ছাড়পত্র পেয়েছে। এই দুটি ভ্যাকসিনের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে যে, সেগুলি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। ভ্যাকসিনগুলি দুটি ডোজ নেওয়ার পর শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
দ্বিতীয় দাবিটি হল, ভ্যাকসিন ভাইরাসটিকে নির্মূল করে না। এই দাবিটি অবৈজ্ঞানিক। কারণ, ভ্যাকসিন ভাইরাস নির্মূল করে না, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
ভ্যাকসিন কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের সম্ভাবনা কমায়, আর সেই সঙ্গে মৃত্যুর সম্ভাবনাও। ফলে, তৃতীয় দাবি, যাতে বলা হয়েছে যে, ভ্যাকসিন কোভিড-১৯-এর কারণে মৃত্যুর হার কমায় না, সেটি মিথ্যে।
বাকি দাবিগুলি ঠিক। যেমন, ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ হওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি নির্মূল করে না, সংক্রমণ বন্ধ করে না, ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা, ব্যাবসা-বন্ধ, লকডাউন, ও মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার অবসান ঘটায় না। কিন্তু প্রশ্নগুলি এমনভাবে করা হয়েছে যে, তা বিভ্রান্তি ছড়ায়।
ভ্যাকসিনের উদ্দেশ্য হল ভাইরাসের প্রকোপ কমানো ও মানুষের মধ্যে 'হার্ড ইমিউনিটি' বা সমষ্টিগত প্রতিরোধ গড়ে তোলা। যাতে সংক্রমণের চেনটা ভাঙ্গা যায়। ভাইরাসটি যাতে না ছড়ায়, তার জন্য ভ্যাকসিনের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক-পরা, এবং ভ্রমণ এড়িয়ে চলার মতো নিময়গুলিও মেনে চলতে হবে।
কয়েকটি সঠিক বিষয় উত্থাপন করে, ভাইরাল বার্তাটি ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যাপারে সকলকে নিরুৎসাহ করতে চেষ্টা করছে। বস্তুত, ভ্যাকসিনের প্রয়োগ হল হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করার সবচেয়ে দ্রুত উপায়। তার ফলে, সংক্রমণের হার কমে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা অনুযায়ী, ৫০-৭০% মানুষ ভ্যাকসিন নিলে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়।